ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যে চতুর্থ টি-টোয়েন্টি ম্যাচটি কুয়াশার জন্য বুধবার একটা বলও গড়াল না উইকেটে। যার ফলে খেলাটি হলই না। তাই ভারত এখনও ২-১ ম্যাচে এগিয়ে থাকল দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে। সেই কারণেই আহমেদাবাদে পঞ্চম ও শেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচটির গুরুত্ব অনেকটাই বেড়ে গেল। যেমন দক্ষিণ আফ্রিকা চেষ্টা করবে ভারতের কাছ থেকে ম্যাচটা ছিনিয়ে নিয়ে সিরিজ অমীমাংসিত রাখা। আর ভারতীয় দল লড়াই করে ম্যাচটা নিজেদের দখলে নিয়ে সিরিজটা রেখে দিতে চাইবে।
কিন্তু চতুর্থ টি-টোয়েন্টি ম্যাচটা বাতিল করতে হল কুয়াশা এবং ধোঁয়াশার জন্য। অতীতে এমন ঘটনা না ঘটলেও বিভিন্ন কারণে খেলা বন্ধ হওয়ার শিক্ষা থেকে বোর্ড কর্মকর্তারা কেন মাথায় রাখেননি, এই সময় লখনউতে সন্ধ্যার পরে কুয়াশায় ভরে যায়। এটা নতুন কোনও ঘটনা নয়। পুরনো অভিজ্ঞতা কেন কর্মকর্তাদের মাথায় এল না, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে বোর্ড কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে প্রাক্তন খেলোয়াড় থেকে শুরু করে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা মুখ খুলতে শুরু করেছেন। কেউ কেউ বলছেন, স্কুলের ছাত্রছাত্রীরাও জানে এই সময় লখনউতে সন্ধের পরে কুয়াশায় ভরে যায়। আর এই ব্যাপারটি উপলব্ধি করতে পারলেন না বোর্ড কর্মকর্তারা। কেন দেওয়া হল এই মাঠে একটি গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ? ম্যাচ বাতিল হওয়ায় প্রচুর আর্থিক ক্ষতি হল। ২০২৩ সালে বিশ্বকাপ ক্রিকেটের সময় ধরমশালায় দক্ষিণ আফ্রিকার ম্যাচ দু-দু’বার বন্ধ করে দিতে হয়েছিল কুয়াশার কারণেই। আর ভারতের একটি ম্যাচও একই কারণে বন্ধ করে দেওয়া হয়। এমনকি গত ম্যাচে ধরমশালায় শীতের আবহাওয়া এমন ছিল, তাতে দুই দলের খেলোয়াড়রাই বেশ চিন্তা পড়ে গিয়েছিলেন। দক্ষিণ আফ্রিকার খেলোয়াড়রা এর বিরুদ্ধে মুখর হয়েছিলেন। তবুও বোর্ড কর্মকর্তারা লখনউ থেকে ম্যাচটা কেন সরালেন না, এ বিষয়ে প্রাক্তন ক্রিকেটাররাও মুখ খুলেছেন। আবার অনেকে বলেছেন, আম্পায়ারদের সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল না। তাঁরা টস করতে গিয়ে বারবার সময় পরিবর্তন করেছেন।
এককথায় বলা যায়, শুধু খেলোয়াড়দের নয়, মাঠে আসা দর্শকদেরও হয়রানি করা হয়েছে। যত রাত হবে ততই কুয়াশা গাঢ় হবে, এটা তো স্বাভাবিক। আম্পায়াররা এ ব্যাপারটা বুঝতে পারলেন না? মাঠে না নামলেও খেলোয়াড়রা গরম পোশাক পরে ড্রেসিংরুমে সময় কাটিয়েছেন। অনেককে দেখা গিয়েছে, মাস্ক পরে এদিক ওদিক ঘুরছেন। একটা সময় আম্পায়াররা মাঠ প্রদক্ষিণে গিয়েছিলেন। তখন রাত সাড়ে ন’টা। তার পরেই খেলা হবে না বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
ভারতের প্রাক্তন ক্রিকেটার রবীন উথাপ্পা বলেছেন, আম্পায়ারদের এই সিদ্ধান্তে আমি অবাক হয়ে গিয়েছি। আম্পায়াররা কী ভেবেছেন তা জানি না। মাঠের দর্শকরা বিরক্তি প্রকাশ করেছেন। ক্রিকেটাররা যখন খেলতেই পারবেন না, তখন কেন অকারণে দর্শকদের অপেক্ষা করতে বলা হয়েছিল? আসলে ওদের সহসভাপতি রাজীব শুক্লের ঘরের মাঠ লখনউ। তিনি মাঠে উপস্থিত ছিলেন। এমনকি মাঠ পরিদর্শনও করেন। ম্যাচ বাতিল হওয়ার পর যুক্তি, ১৫ ডিসেম্বর থেকে একমাস এখানে সমস্যা তৈরি হয় কুয়াশা নিয়ে। আশা করি ভবিষ্যতে এমন ঘটনা আর ঘটবে না।
পাশাপাশি ধোঁয়াশা বিতর্কে রাজনীতি শুরু হয়ে গিয়েছে। কংগ্রেস সাংসদ শশী তারুর অনুরোধ করেছেন, শীতকালে কেরলে ম্যাচ আয়োজন করা হোক। রাজীব শুক্ল বলেন, সূচি নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে। তাহলে আমরা সব ম্যাচ কেরলেই পাঠিয়ে দেব। এই কথা শুনে শশী তারুর মুচকি হেসে বলেন, তবে তো ভালোই হয়। এখানে দূষণ নিয়ে কোনও চিন্তা নেই। কুয়াশা সেইভাবে হয় না। দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটার ডেল স্টেন বলেন, খেলোয়াড়রা যদি খেলতে চান, তাহলে আম্পায়ারদের অসুবিধেটা কোথায়? এইরকম কুয়াশায় অনেক প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলেছি। এই নিয়মটা আমি ভালো করেই জানি। উত্তরপ্রদেশ ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ডের কর্মকর্তারা চিন্তা করছেন খেলা না হওয়াতে দর্শকদের কীভাবে টিকিটের মূল্য ফেরত দেওয়া যায়। ভারতের ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ড জানিয়েছে, তাদের পক্ষে কোনওভাবেই সম্ভব হবে না দর্শকদের টিকিটের টাকা ফেরত দেওয়া। টিকিটের টাকা ফেরত দিতে পারে উত্তরপ্রদেশ ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ড।
কিন্তু তার আগে দেখতে হবে টিকিটের দাম কত ছিল এবং টিকিট কত ছাপা হয়েছে। এ ব্যাপারে বোর্ড কখনওই হস্তক্ষেপ করে না। তবে দর্শকরা ইতিমধ্যেই দাবি করেছেন তাঁদের টিকিটের মূল্য ফেরত দিতে হবে।