প্রশ্ন: আয়োজক দেশ হিসেবে ভারত অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পেয়েছিল। এবার আপনার কাছে নিজেদের যোগ্যতায় বিশ্বকাপের মূলপর্বে খেলার সুযোগ এসেছে। কতটা প্রস্তুত দল?
বিবিয়ানো: আমাদের কাছে দারুন সুযোগ এসেছে। ২০২৩ সালে এমন সুযোগ ছিল। কিন্তু সে সুযোগ কাজে আসেনি। আবার সুযোগ এসেছে। অতীতের অভিজ্ঞতা নিয়ে এবার কাজে লাগাতে হবে। শৃঙ্খলা মেনে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। ইরানের মত শক্তিশালী টিমকে হারিয়ে আমরা এশিয়ান কাপের মূলপর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছি। গ্রুপ থেকে একটাই দল মূলপর্বে যাওয়ার ছিল। এমন কঠিন লড়াইয়ে ইরানের মত দলকে ছিটকে দিয়ে নিজেদের জায়গা করে নেওয়া—ছেলেরা তাদের যোগ্যতা প্রমান করেছে। এখন মূলপর্বের দুটো ম্যাচ জিতলেই আমারা নিজেদের যোগ্যতায় বিশ্বকাপের মূলপর্বে খেলতে পারবো।
প্রশ্ন: এতবড় দেশ, বিভিন্ন রাজ্যের ফুটবলের নানা ধারা। ভারতীয় দলগঠনের প্রক্রিয়া কেমন ছিল?
বিবিয়ানো: এশিয়ান কাপের যোগ্যতা পর্বের আগে আমরা শ্রীলঙ্কায় সাফ গেমসে খেলেছি। সেই টুর্নামেন্টের দলগঠনের সময় এশিয়ান কাপের টুর্নামেন্টের কথা খেয়ালে ছিল।দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নির্বাচিত ৯০জন ফুটবলারের মধ্যে ২৩জন ফুটবলার বাছাই করা কঠিন বিষয়। একজন খেলোয়াড়ের সঙ্গে অপর খেলোয়াড়ের দক্ষতার বিশেষ পার্থক্য এখানে নেই। প্রতি ৩০ জনের মধ্যে ১০ জন করে বেছে নেওয়া হয়েছিল। এরমধ্যেই সেরা টিম বেছে নেওয়া হয়। আমরা সাফ গেমসে চ্যাম্পিয়ান হই। সাফ গেমসের চ্যাম্পিয়ান দলের মধ্যেও পরবর্তী সময়ে পরিবর্তন হয়।আরও নতুন ৫জন ফুটবলার নেওয়া হয়। দেশের বিভিন্নপ্রান্তে আমাদের স্কাউটরা আছেন। রাজ্য লিগের খেলা দেখে তারা নাম পাঠান। এছাড়া রাজ্য চ্যাম্পিয়ানশিপের খেলা দেখে খেলোয়াড় যাচাই করে নেওয়া হয়। প্রাথমিক নির্বাচন স্কাউটরাই করেন। ফাইনাল ট্রায়ালে ছেলেরা তাদের খেলার বুদ্ধিমত্তা ও কতটা পরিশ্রম করতে পারছে— দলগঠনে তাতে গুরুত্ব দেওয়া হয়। নিশ্চয়ই, টিমের রক্ষন সামলানো ও আক্রমনে যাওয়ার সময় খেলোয়াড়দের দায়িত্ব পালনের ভূমিকা লক্ষ্য করা হয়। এখানে খেলোয়াড়দের যোগ্যতাকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়। এশিয়ান কাপের মূলপর্বের আগে ২০/২৫ জন নতুন ফুটবলার দেখা হবে। টিমে উইংহাফ, ফুলব্যাক ও স্ট্রাইকারের সমস্যা আছে।এইসব পজিশনে নতুন খেলোয়াড় নেওয়া হতে পারে।
প্রশ্ন: বর্তমানে দেশের ফুটবলে অচলাবস্থা চলছে। দেশের ইয়ুথ ফুটবলের কাঠামো নিয়ে কতটা আশাবাদী হওয়া যাচ্ছে?
বিবিয়ানো: রাজ্য লিগ,রাজ্য চ্যাম্পিয়ানশিপ,অল ইন্ডিয়া ইয়ুথ লিগ— এসব প্রতিবছর হচ্ছে। ক্লাবগুলো শক্তিশালী টিম করে এইসব প্রতিযোগিতায় লড়াই করছে। ইয়ুথ লিগের টাফ লড়াইয়ের মধ্যেই ছেলেরা তৈরি হচ্ছে। আমাদের এই টিম সম্পর্কে অনূর্ধ্ব-২৩ দলের কোচ নৌশাদ মুসা ও সিনিয়র দলের কোচ খালিদ জামিলের সঙ্গে কথা হয়। একটা প্রসেস চলছে।ইয়ুথ ছেলেরা ভালো ভালো রেজাল্ট করলে প্রতিটি স্টেজেই উন্নতি হবে। খারাপ সময় আসতে পারে। কিন্তু নিজেদের তৈরি করে যেতে হবে।
প্রশ্ন: সুপার কাপের সময় আপনার খোঁজ পড়েছে। সাফ গেমস বা এশিয়ান কাপে আপনার সাফল্যের রসায়ন কি?
বিবিয়ানো: এখনও বড় সাফল্য আসেনি। বিশ্বকাপের মূলপর্বে উঠতে পারলে বলা যাবে,সাফল্যের পথে যাওয়া যাচ্ছে। সাফ গেমসে অনূর্ধ্ব-১৫ দল দু’বার চ্যাম্পিয়ান হয়েছে। অনূর্ধ্ব-১৭ ও অনূর্ধ্ব-১৯ দল একবার করে চ্যাম্পিয়ান হয়েছে। এশিয়ান কাপের মূলপর্বে তিনবার টিম উঠেছে। আমার কোচিংয়ে এসব সাফল্য তৃপ্তি দিয়েছে। কিন্তু বিশ্বকাপের মূলপর্বে খেলাটাই আমার টার্গেট। ২০১৭ সালের বিশ্বকাপের মূলপর্বের খেলা শেষেই ভারতীয় দলের জন্য আমাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সেই জায়গা থেকে নিজেদের যোগ্যতায় বিশ্বকাপের মূলপর্বে খেলতে পারলেই সাফল্যের আলোচনা করা যাবে।
প্রশ্ন: ভারতীয় দলে বাঙালি গোলকিপার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিচ্ছে। বহুদিন পড়ে এমনটা ঘটল। রাজরূপ সরকারকে কেমন দেখলেন?
বিবিয়ানো: সাফ গেমস চ্যাম্পিয়ান দলের প্রথম একাদশে মানসজ্যোতি বড়ুয়া খেলেছে। সাফ গেমসের পর চিনে আমরা দুটো ফ্রেন্ডলি ম্যাচ খেলেছি। দ্বিতীয় ম্যাচটায় রাজরূপ প্রথম একাদশে সুযোগ পায় এবং দারুন খেলেছিল।এশিয়ান কাপের প্রথম ম্যাচে রাজরূপ শুরু করে। তারপর ওর পারফরম্যান্স ক্রমশঃ বেটার হয়েছে। আমাদের প্রত্যাশার বাইরে রাজরূপ পারফারম্যান্স দিয়েছে। ওর ভালো উচ্চতা ও সাহস আছে। সম্ভাবনাময় ফুটবলার। বুদ্ধিমান ছেলে। বাংলার ফুটবলাররা এমনই হয়। অভিষেক মন্ডলকে তেমন সুযোগ দেওয়া যায়নি।শেষ ম্যাচের গুরুত্বপূর্ন সময়ে অভিষেক ভালো লড়াই করেছে।তবে,টিমে বেশ কিছু ভালো ফুটবলার আছে। নর্থ ইস্টের পুনিয়া ও গাংতে,এফসি বেঙ্গালুরুর ডেনি সিং,এআইএফএফ ট্যালেন্ট অ্যাকাডেমির ডায়মন্ড সিং — একঝাঁক ভালো ভালো ফুটবলার দলে আছে।
প্রশ্ন: আয়োজক দেশ হিসেবে ভারতের যে দল বিশ্বকাপের মূলপর্বে খেলেছিল,সেই দলের অধিকাংশ ফুটবলার এখন আইএসএলে খেলছে। এই টিমের ক্ষেত্রে কতটা আশাবাদী হওয়া যায়?
বিবিয়ানো: ইরানের বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ খেলতে যাওয়ার আগে হোটেলে ছেলেদের একটা ভিডিও দেখানো হয়। ভারতীয় সিনিয়র দলের ফুটবলাররা ও এই টিমের ছেলেদের অভিভাবকদের আবেদন ভিডিওতে রাখা হয়েছিল। এই ছেলেদের গাইড করা খুব জরুরী। ২০১৭ সালের বিশ্বকাপের ছেলেরা, পরবর্তী সময়ে আইলিগে ইন্ডিয়ান অ্যারোজের হয় একসঙ্গে খেলার সুযোগ পেয়েছিল।ফলে,ঐ বয়সে ভালো প্রতিযোগিতায় অনেক ভালো ট্রেনিং ও ম্যাচের মধ্যে তারা থাকতে পেরেছিল। তাই ওদের পারফরম্যান্স ভালো হয়েছে। এই টিমের ছেলেদের সামনে এমন সুযোগ নেই। কিন্তু ওদের নতুন ক্লাব বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ন সিদ্ধান্ত নিতে হবে। টাকার দিকে নজর দিলে হবে না। কোথায় ম্যাচ টাইম বেশি পাওয়া যায়, সেদিকে নজর দিতে হবে। এক্ষেত্রে ক্লাব বা এজেন্টদের কথা শুনলে হবে না। এদের যারা গাইড করে বা এদের অভিভাবকদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে সঠিক চিন্তাভাবনা করতে হবে। এই টিমে অনেক প্রতিভাবান ফুটবলার আছে। অনেকেই ভারতীয় ফুটবলকে দীর্ঘসময় সেবা দিতে পারবে।