ভারতীয় হকির ১০০ বছর পূর্ণ

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

প্রবীর মজুমদার

এক শতাব্দী আগে, ১৯২৫ সালের ৭ নভেম্বর, ভারতীয় হকি আন্তর্জাতিক হকি সংস্থার স্বীকৃতি লাভ করল এবং এর ফলে কেবল একটি খেলার উত্থানই ঘটেনি, বরং জাতীয় গর্বের জন্ম হয়। এর তিন বছরের মধ্যে ১৯২৮ সালের আমস্টারডাম অলিম্পিকে ভারতীয় হকি পেয়েছিল তার ঐতিহাসিক প্রথম স্বর্ণপদক, যা বিশ্ব মঞ্চে ভারতকে হকি ‘সুপার পাওয়ার’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিল। পরবর্তী দশকগুলিতে, ত্রিবর্ণরঞ্জিত পতাকা হকি দুনিয়ায় আধিপত্য বিস্তার করে, আটটি অলিম্পিক স্বর্ণপদক, একটি রৌপ্য এবং চারটি ব্রোঞ্জ পদক অর্জন করেছিল-যা হকির ইতিহাসে যেকোনো দেশের সর্বাধিক সাফল্য।

১৯২৮ থেকে ১৯৫৯ সাল ছিল ভারতীয় হকির স্বর্ণযুগ। এই পর্যায়ে হকিই বিশ্বের ক্রীড়া মানচিত্রে ভারতকে প্রথম সারিতে এনেছিল। ১৯৭৫ সালের বিশ্বকাপ জয় এবং পুরুষ ও মহিলা উভয়ের জন্য এশিয়ান গেমসের পদক অর্জনের পাশাপাশি, হকি জাতির ক্রীড়া আত্মার সাথে গভীরভাবে জড়িত। ১৯৭৬ সালে মন্ট্রিল অলিম্পিকে হকি খেলা শুরু হয় কৃত্রিম টার্ফে যা ভারতীয় হকিকে পিছনে ফেলে দেয়। ১৯৮০ এবং ৯০ এর দশক ভারতীয় হকির ঐতিহ্যকে চ্যালেঞ্জ করেছিল। এই পর্যায়ে ভারতীয় হকির ত্রাণকর্তা হয়ে অবতীর্ণ হন ওডিশার তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী হকিপ্রেমিক নবীন পট্টনায়েক। বদলাতে শুরু করল ভারতীয় হকি। পুনরুত্থান ঘটল ২০২০ সালে। চল্লিশ বছরের অলিম্পিক হকির খরা কাটিয়ে টোকিও অলিম্পিকে ভারত পায় ব্রোঞ্জ। ২০২৪ এ পরবর্তী প্যারিস অলিম্পিকেও ভারত পেল ব্রোঞ্জ পদক। বর্তমান বিশ্ব ক্রমপর্যায়ে পুরুষ দল ৭ম এবং মহিলা দল ১০ম স্থানে আছে।


৭ নভেম্বর ২০২৫ তারিখে, জাতীয় হকি সংস্থা ‘হকি ইন্ডিয়া’ এই অসাধারণ শতাব্দী উদযাপনের আয়োজন করেছে। উদযাপনের মূল আকর্ষণ হবে নয়াদিল্লির মেজর ধ্যানচাঁদ জাতীয় স্টেডিয়ামে। সকালে মাননীয় ক্রীড়ামন্ত্রী একাদশ বনাম হকি ইন্ডিয়ার মিশ্র একাদশের মধ্য দিয়ে একটি আকর্ষণীয় প্রদর্শনী ম্যাচের সূচনা হবে, যেখানে পুরুষ ও মহিলাদের এক মাঠে একত্রিত করা হবে। যা খেলার অন্তর্ভুক্ত ভবিষ্যতের প্রতীক হিসাবে নবীন প্রতিভাদের উৎসাহিত করবে। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে হকি কিংবদন্তিদের সম্মান জানানো হবে। ‘১০০ ইয়ার্স অফ ইন্ডিয়ান হকি’ স্মারক বইটি উন্মোচন করা হবে। একটি আলোড়ন সৃষ্টিকারী আলোকচিত্র প্রদর্শনী দর্শকদের নিয়ে যাবে আইকনিক মাইলফলকগুলির মধ্য দিয়ে -আমস্টারডাম থেকে প্যারিস, ধ্যানচাঁদের শৈল্পিকতা থেকে আধুনিক চ্যাম্পিয়নদের দৃঢ়তা পর্যন্ত।

এই উদযাপন কেবল একটি স্টেডিয়ামের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। এটি ৫০০ টিরও বেশি জেলা জুড়ে প্রতিধ্বনিত হবে, যেখানে ১,০০০ টিরও বেশি ম্যাচ এবং ৩৬,০০০ খেলোয়াড় -স্কুলছাত্র, তৃণমূল পর্যায়ের ক্রীড়া সংগঠক, নবীন এবং প্রবীনের দল একসাথে মাঠে নামবে।