গেরুয়া ইস্তাহার

‘মোদি কি গ্যারান্টি’৷ ছিয়াত্তর পৃষ্ঠার নির্বাচনী ইস্তাহার প্রকাশ করল বিজেপি৷ এর মধ্যে নরেন্দ্র মোদির ছবি রয়েছে ৫৩টি৷ কর্মসংস্থানের প্রসঙ্গ এসেছে মাত্র দু’বার৷ বেকারত্ব, মূল্যবৃদ্ধি শব্দ দুটিও গরহাজির৷ ধনী-গরিবের আর্থিক অসাম্যের প্রসঙ্গ একবারও আসেনি৷ বিজেপির নির্বাচনী ইস্তাহার, বেশ কিছুদিন ধরে তার গালভরা নাম ‘সংকল্পপত্র’৷ এই সংকল্পপত্র এবার দল থেকে ব্যক্তিতে উত্তীর্ণ হয়েছে৷ বিজেপির গ্যারান্টি নয়, মোদির গ্যারান্টিই বিজেপির সংকল্প৷ ২০১৪ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বিজেপির নির্বাচনী ইস্তাহারের বিবর্তন দেখলে স্পষ্ট হয়, একনায়কতন্ত্র কীভাবে স্থায়ী প্রতিষ্ঠা পেয়েছে গেরুয়া দলে৷ একটি উদাহরণেই তা স্পষ্ট হয়ে যাবে৷ ২০১৪ সালের ইস্তাহারে ‘মোদি’ শব্দটি ৩ বার ছিল, এবার তা ৬৫ বার আছে৷ কংগ্রেসমুক্ত ভারতের ডাক দিয়ে মোদি দলকে বিজেপিমুক্ত করে দিয়েছেন৷

ইস্তাহার প্রকাশের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন নরেন্দ্র মোদি, রাজনাথ সিং, অমিত শাহ, জে পি নাড্ডা এবং নির্মলা সীতারমণ৷ মোদি দাবি করেন, সরকার থেকে যা যা প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল ১০ বছরে তা সম্পূর্ণ করা হয়েছে৷ তিনি দাবি করেন, কৃষক-মহিলা-যুবক-গরিবদের জন্য সরকার যথেষ্ট কাজ করেছে৷ ভারতকে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি করার সদম্ভ ঘোষণাও করেছেন মোদি৷

ছিয়াত্তর পাতার ইস্তাহারের সূচিপত্রে ২৪টি বিষয়ে আলাদা করে ‘মোদির গ্যারান্টি’ দেওয়া হয়েছে৷ শ্রমিক, কৃষক, মহিলা, যুব, বয়স্ক, বিদেশ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ক্রীড়া, পরিবেশ ইত্যাদি শিরোনামে বহু বিষয়ই রাখা হয়েছে৷ কিন্ত্ত কোনওটির ক্ষেত্রেই নির্দিষ্ট করে কোনও কথা নেই৷ ‘বিকশিত ভারত’-এর নামে যেভাবে ভাষণে এক উজ্জ্বল ভারতের ছবি তুলে ধরার চেষ্টা করেন মোদি, ইস্তাহারটি তার থেকে পৃথক কিছু নয়৷ ফলে ইস্তাহার প্রকাশের পর বিরোধীরা সরব হয়ে ওঠেন৷


কংগ্রেস বলেছে, এটাকে ইস্তাহার না বলে ‘মাফিনামা’ বলা উচিত ছিল বিজেপির৷ কারণ মোদি যা যা এতদিন বলে এসেছেন তার কোনওটাই কার্যকর করেননি৷ কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে আবার একে ‘জুমলার গ্যারান্টি’ বলে কটাক্ষ করেছেন৷ কংগ্রেসের দাবি, মোদি দেশের তরুণ, কৃষক, দলিত, আদিবাসীদের কাছে মাফ চান৷ কংগ্রেস এর নাম দিয়েছে ‘জুমলাপত্র’৷ কংগ্রেসের প্রধান মুখপাত্র জয়রাম রমেশের কটাক্ষ, ‘বিজেপির ৭৬ পৃষ্ঠা লম্বা ইস্তাহারে মোদিজির ৫৩টি ছবি৷ গত দশ বছর ধরে যে ব্যক্তি ক্রমাগত তথ্য বিকৃত করেছেন, প্রকৃত বিষয় এড়িয়ে গিয়ে তা থেকে নজর ঘোরানোর চেষ্টা করেছেন, এটা আসলে তাঁর বিদায় উপহার৷

সাংবাদিক বৈঠক করে কংগ্রেস বলেছে, কংগ্রেসের ইস্তাহারে ৩০ লক্ষ সরকারি চাকরির ‘গ্যারান্টি’র কথা ছিল৷ বিজেপির ইস্তাহারে তার কোনও প্রসঙ্গ নেই৷ কংগ্রেস মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে৷ বিজেপির ইস্তাহারে এ নিয়ে টু শব্দটি নেই৷ কৃষকদের দাবিমাফিক ফসলের নূ্যনতম দাম বা এমএসপি-র আইনি নিশ্চয়তার কথা বলেছে কংগ্রেস৷ বিজেপি এ সম্পর্কে একেবারে নীরব৷ কংগ্রেস সরকারি চাকরিতে মহিলাদের বছরে ১ লক্ষ টাকা আর্থিক সাহায্যের কথা বলেছে৷ বিজেপির ইস্তাহারে এর কোনও প্রসঙ্গ নেই৷ কংগ্রেস মণিপুরে শান্তি প্রতিষ্ঠার কথা বলেছে৷ বিজেপি সম্পূর্ণ নীরব৷ স্থানীয় মানুষদের দাবি মেনে লাদাখকে ষষ্ঠ তফসিলের অন্তর্ভূক্ত করার কথা বলেছে কংগ্রেস৷ বিজেপি এ নিয়ে কোনও কথা বলেনি৷ নরেন্দ্র মোদি বছরে ২ কোটি চাকরি, কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করা ও বিদেশে গচ্ছিত কালো টাকা উদ্ধার করে দেশে ফেরানোর কথা বলেছিলেন৷ বাস্তবে এর কিছুই হয়নি৷

কংগ্রেসের আরও অভিযোগ হল, ২০১৪-য় যেসব প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল তার কতটা পূরণ হয়েছে বিজেপি সে বিষয়ে ২০১৯-এ কোনও হিসাব দেয়নি৷ এখন ২০২৪-এ এসে বিজেপি ২০৪৭-তে ‘বিকশিত ভারত’-এর স্বপ্ন দেখাচ্ছে৷ এই বিকশিত ভারত আসলে ২০০৪-এর ‘শাইনিং ইন্ডিয়া’র পুনরাবৃত্তি৷ মানুষ সেবারের মতো এবারও ভোটে খারিজ করবে বিজেপিকে৷