ক্ষমতার বুলডোজার চালিয়ে ইন্দিরা মসনদ রক্ষা করতে পারেননি, মোদি কি পারবেন?

প্রবীর ঘোষাল
ফ্যাসিজমের পদধ্বনি! হিটলারের জার্মানি কিংবা মুসোলিনির ইতালির ইতিহাস সকলের জানা৷ ভারতবর্ষের মানুষের সত্তর দশকের অভিজ্ঞতাও বিস্মৃত হয়নি৷ প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধি ক্ষমতার জোরে দেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছিলেন৷ বিরোধী রাজনৈতিক দলের অসংখ্য নেতা-নেত্রীকে কেন্দ্রীয় সরকার জেলবন্দি রেখেছিলেন৷ ইন্দিরাজি ভেবেছিলেন, এভাবেই ক্ষমতার বুলডোজার চালিয়ে তিনি মসনদ রক্ষা করবেন৷ কিন্ত্ত ১৯৭৭ সালের লোকসভা নির্বাচনে ইন্দিরাজি এবং তাঁর দল কংগ্রেস তানাশাহির মোক্ষম জবাব পেয়েছিল৷ দিল্লির ক্ষমতা থেকে কর্পূরের মতো উবে গিয়েছিলেন তাঁরা৷

ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনের পর দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল৷ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের ছক অনুযায়ী তাঁরা কারাগারে নিক্ষিপ্ত হয়েছেন৷ দুই মুখ্যমন্ত্রী বিজেপির কাছে নতজানু হননি৷ তাঁরা সামিল হয়েছিলেন বিরোধী ‘ইন্ডিয়া’ জোটে৷ এটাই তাঁদের আসল অপরাধ৷ দুর্নীতির অভিযোগে নাকি দুই মুখ্যমন্ত্রীর এই দণ্ডাদেশ৷ আর গেরুয়া শিবিরে দুর্নীতির পাঁকে ডুবে থাকা সকলেই সাধুসন্ন্যাসী৷ বিচারের কী বাহার!

তৃণমূল কংগ্রেসকে ‘ভাতে মারার’ অপচেষ্টা সফল হয়নি৷ ১০০ দিনের কাজ এবং গ্রামীণ আবাস যোজনার মতো জনমুখী প্রকল্পের টাকা দিল্লি প্রায় তিন বছর আটকে রেখেছে৷ তাতেও দমানো যায়নি মা-মাটি-মানুষের সরকারের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে৷ উল্টে তিনি এই দুই প্রকল্পে রাজ্যের তরফে ভুক্তভোগী মানুষদের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন৷ তৃণমূল কংগ্রেসের তরুণ তুর্কি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় উন্নয়নের প্রশ্নে প্রকাশ্য বিতর্কের চ্যালেঞ্জ ছুঁড়েছেন রাজ্য বিজেপির নেতৃত্বের দিকে৷ কিন্ত্ত গেরুয়া শিবিরের হিম্মৎ হয়নি সেই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করার৷


দিল্লি ঝাড়খণ্ডের মতো পশ্চিমবঙ্গেও শুরু হয়েছে ইডি-সিবিআইয়ের জোরদার তল্লাশি অভিযান৷ সারা বছর মোদি-শাহের এইসব এজেন্সিগুলি ঝিমিয়ে থাকে৷ খোদ আদালত পর্যন্ত বহুবার ভৎর্‌সনা করেছে তাদের৷ কেন ভোটের সময় তারা সক্রিয় হয়? সদুত্তর দিতে পারেন না কেন্দ্রীয় এজেন্সির আইনজীবীরা৷ দেশের মানুষের কাছে বিরোধীদের অভিযোগ তাই মান্যতা পায়৷ মানুষ বুঝে গিয়েছে ইডি, সিবিআইয়ের মতো সংস্থাগুলি এখন বিজেপির সঙ্গে সংগঠনে পরিণত হয়েছে৷ গণতন্ত্রের পক্ষে এই প্রবণতা বিপজ্জনক৷

তাহলে ‘এবার ৪০০ পার’— বিজেপির স্লোগানে কি অশনি সংকেতের ইঙ্গিত মিলছে? মোদি-শাহ কি জনতা জনার্দনের ওপর আস্থা হারিয়েছেন? তা না হলে, উত্তরাখণ্ড, ঝাড়খণ্ডের মতো রাজ্যে বিরোধী দলের সরকার ভাঙতে বিজেপির এত তৎপর হয়ে উঠেছিল কেন? বিরোধী নেতা-নেত্রীদের বাড়িতে রোজ এজেন্সির হানাই বা কিসের ইঙ্গিত বহন করে? তাহলে কি ভোটারদের ওপর ভরসা রাখতে পারছেন না গেরুয়া শিবির?
তাই সাধারণ মানুষের মনে শঙ্কা জাগছে, মোদি সরকার তৃতীয়বার ক্ষমতায় এলে, দেশে পাকাপাকিভাবে ফ্যাসিস্তরাজ কায়েম হবে৷ এমনিতেই বর্তমানে দেশে ‘অঘোষিত জরুরি অবস্থা’ চলছে৷ তার ওপর প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারে মোদিজি ফের বসলে, ফ্যাসিজমের বাকি কাজ সারা হবে৷ ২৫ মে দিল্লিতে লোকসভার ভোট৷ আগেই উপমুখ্যমন্ত্রী মনীশ সিসোদিয়াকে জেলবন্দি করা হয়েছে৷ এবার কারাগারের কোপ পড়ল দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়ালের ওপর৷ নির্ভীক এই মানুষটি বিজেপি বিরোধী ‘ইন্ডিয়া’ জোটের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মুখ৷ ভোটযুদ্ধে তাঁকে মোকাবিলা করা গেরুয়া শিবিরের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না৷ তাই জেলে পাঠিয়ে দাও৷ দেশের রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠেছে, এবার কাদের পালা? তবে, পশ্চিমবঙ্গে এজেন্সির সক্রিয়তা দেখে মনে হচ্ছে, বিজেপি নয়, ভোটের লড়াই তৃণমূল কংগ্রেস বনাম কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলির৷ গণতন্ত্রে কিন্ত্ত শেষ কথা জনগণই বলবে৷