পৌষবেলা
অর্ঘ্য দে
তেঁতুল পাতায় লাগল হাওয়া
উঠছে কেঁপে তিরিতিরি,
শীতের হিমেল ছন্দে-সুরে
ঝরছে পাতা ঝিরিঝিরি।
উঠোন জুড়ে মিষ্টি রোদের
ঝরনা ঝরে সকাল থেকে,
র্যাপার গায়ে ঢুলছে দাদু
উঠছে হঠাৎ নাকটা ডেকে।
ফারুক চাচা আনছে বয়ে
তাল পাটালি গুড়ের হাঁড়ি,
গাঁয়ের পথে পথে ঘুরে
করছে ফেরি বাড়ি-বাড়ি।
দাওয়ায় বসে আপন মনে
বুনছে পিসি নকশিকাঁথা,
লাল সবুজ আর নীল সুতোতে
ফুল-পাখি-ডাল পড়ছে গাঁথা।
মা পেতেছে চাটাই, মাদুর
রোদ খাওয়াতে তোশক চাদর,
লাফাই ঝাঁপাই, ডিগবাজি খাই
মাখছি নরম রোদের আদর।
শীত-সকালে
সজল চক্রবর্তী
একাকী ছোট্ট বক,
শীতে কাঁপে ঠক-ঠক—
কোথায় যে গেছে ওর মা-টা!
ডেকে-ডেকে হদ্দ বাবাকে,
ওর কথা শোনেই বা কে—
কে-ই বা দেয় শীতে জামাটা!
অবশেষে উড়ে-উড়ে
চলে যায় কিছু দূরে,
ধানের এক গোলার ভিতর।
সেথায় ধানের ওমে
ঠান্ডাটা যায় কমে,
লাগে নাকো আর শীত ওর!
ভূত ছানাটা
আলমগীর কবির
ভূত ছানাটা বোকা ছিল
কিছুটা একরোখা ছিল।
মিছেমিছি ভয় দেখাতে
তার লাগে না ভালো,
লেখাপড়া করে ঘরে
আনবে নাকি আলো!
আমরা যখন খেলতে থাকি
রোজ ইশকুল মাঠে,
রোজ আমাদের খেলা দেখে
বিকেলটা তার কাটে!
আমরা যখন যাই ইশকুলে
চেয়ে চেয়ে দেখে,
গাছের পাতায় আপন মনে
কী জানি কী লেখে?
পায়রা ও কাক
দীপঙ্কর নন্দী
জানলা খুলে খাবার দিলে
দল বেঁধে সব আসে
সকাল থেকেই বকম বকম
পায়রাগুলো হাসে,
এদিকে ছড়ায় ওদিক ছড়ায়
কত না লড়াই করে
ঠেলাঠেলি গুঁতোগুঁতি
জানলা দেওয়া ঘরে,
মাঝে মাঝে কালো কাকের
হঠাৎ আনাগোনা
পায়রাগুলো হকচকিয়ে
হারায় বিবেচনা,
ঝাঁপিয়ে পড়ে আবার জোরে
একসাথে একদলে
কাক বেচারা পগারপার
পালায় আকাশতলে।
খুশির দিনের আঁচে
সুব্রত চৌধুরী
শিশির মাখা সকাল দুপুর
শিউলি ঝরে টাপুর টুপুর
ভেজা সবুজ ঘাসে,
খুকু মেখে রোদের জরি
আহা কী সুখ মরি মরি
ফোকলা দাঁতে হাসে।
রূপোর মলে আলতা পায়ে
ভাসে খুকু খুশির নায়ে
সাঁজি ভরে ফুলে,
ভরায় খুকু পুজোর ডালা
ঝুমকো লতা দুলে।
নদীর পাড়ে কাশের বনে
মনটা খুকুর উচাটনে
ধিতাং ধিতাং নাচে,
তাক ডুমা ডুম ঢাকের তালে
লাগে হাওয়া মনের পালে
খুশির দিনের আঁচে।
ছোট্টবেলার কথা
বিভাস গুহ
এক যে ছিল রাজা এবং
তার ছিল এক রানি
এমন গল্প বলে বলে
ঘুম পাড়াত নানী।
কিংবা ধরো টোনাটুনি
নয়তো কুঁজো বুড়ির
রাজকুমারের ছুটে যাওয়া
স্বপ্নে অচিনপুরীর।
চাঁদের বুড়ির চরকা কাটা
মনটা নিত কেড়ে
ছোট্টবেলায় এসব শুনে
উঠেছিলাম বেড়ে।
এখন আমি অনেক বড়
জানি অনেক কিছু
সে দিনগুলো তবু আমায়
আজো টানে পিছু।