বৃষ্টি পড়লেই গল্প হয়
হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়
ঠিক যতখানি চেনা বললে
অন্ধকারের বুক চিরে বেরিয়ে আসে একটি পথ
তার ঠিক পাশেই দাঁড়িয়ে থাকাে তুমি
অথবা শীতের সকালে তৈরি করছো চা
সেসব চুলোয় যাক—
আমি কাউকেই চিনি না
অথবা সব্বাইকে চিনি
এরপরই মুষলধারে বৃষ্টি নামে
দোকানের ছাউনির নিচে এসে দাঁড়াই
এইভাবেই প্রতিটি চেনা অঞ্চলে যতটুকু বৃষ্টি পড়ে
অথবা অচেনা অঞ্চল যেভাবে শুকিয়ে কাঠ হয়ে যায়—
প্রতিটি অঞ্চলের চোখেই একটি করে নদী থাকে
আর কোথাও কোনো বাড়াবাড়ি হলেই
নদী এসে সবকিছু ভিজিয়ে দেয়
এরপর উভয় অঞ্চলে প্রায় সব্বাই বুঝতে পারে—
বৃষ্টি পড়লেই গল্প হয় আর যেটুকু গল্প শুকিয়ে যায়
তা আমাদেরই আলোর অভাবে
দু’টি কবিতা
সরিৎ দত্ত
আত্মজীবনীর ভূমিকাপৃষ্ঠা
একটা প্রশ্নমুখর চশমা
সারাদিন চোখের ওপরে বসে থাকে আঁট হয়ে
কতবার ভাবি
চশমা খুলে রাখি টেবিলের ওপর
চশমার মুখোমুখি বসি
চশমার প্রশ্নের মুখোমুখি
আমরা সকলেই তো জানি
মুখোমুখি দুটো আয়না রাখলে
আয়নার ভিতরে জন্ম নেয় অনন্ত আয়না—
আহা,
জীবনের ভিতরে অনন্ত জীবন
মৃত্যুর ভিতরে অনন্ত মৃত্যু
প্রতিটি জীবন এবং প্রতিটি মৃত্যু
প্রতিটি জীবন এবং প্রতিটি মৃত্যুর প্রতিবিম্ব—
প্রাক্তন
এসো। বসি… কাছাকাছি। কিছুক্ষণ।
দু’-একটি বিষাদকথা বলি। মুখোমুখি।
তুমি যে মৃত্যু শেখালে, তার কাছে
সামান্য গান্ধারে ঝুঁকে থাকি।
এসো। প্রেম, আহা, নিমগ্নতা।
জল উচ্চারণ করি। বৃষ্টি, বিষাদমেঘ…
এই বৃদ্ধতার প্রান্তে, মগ্ন আঁচলবোধ ছাড়া,
আর কী থাকে বলো?
বিষাদবয়সী ঠোঁটে জলবিন্দু। তাহাতে তাকাই।
ওষ্ঠ দর্পণ হয়ে ওঠে…
প্রশ্ন
অভিজিৎ রায়
একটা দুটো সুখের পিঠোপিঠি
ডজন খানেক শোকের জন্মদিনে
আমরা দুজন বিরহযাপন শিখি
গভীর প্রেমের রঙিন কিছু ঋণে।
আলোর মুখে অন্ধকারের রং
মাখছি যখন তখন স্নেহ দিও;
ভিড়ের পথে খুঁজছ কি নির্জন?
স্তব্ধতা কি মগ্নতারও প্রিয়?
অনেক দূরে থেকেও কাছাকাছি
থাকার নেশায় হৃদয় টলোমলো;
সুখ আর শোকে খেলছে কানামাছি,
শোকের দিনে সুখের কথাও বলো।
নীরব আলো অন্ধকারের ভ্রূণে
নিজের মতো জায়গা করে নেবে;
সুখ কি কোনও শোকের ফাঁকা তূণে
একটা দুটো ব্রহ্মাস্ত্রও দেবে?
দু’টি কবিতা
শংকর নাইয়া
আগুনের হাট
দুটি হাটে
প্রতিযোগিতায় বাড়ছে—
আগুনের চাহিদা
এখানে যারা ঘি বেচে তারা সবাই লাভবান
শুধু যারা পিপাসার জল বেচতে আসে
তারা আজ দুই হাটেই কোণঠাসা
তাদের ঘরে আজ শূন্য হাঁড়ি
তাই—
সংসার বাঁচাতে তাদের কেউ কেউ ঝাঁপ দিচ্ছে আগুনে
অস্থির জলে
সন্ধ্যার গর্ভে তলিয়ে যাচ্ছে সূর্য
চাঁদের জ্বর
অস্থির জলে অস্তিত্বহীন ভেসে যাচ্ছে পৃথিবী
একটি কবিতা
কুমকুম বৈদ্য
কাঠফাটা রোদে চাতকের জল চাওয়া
জীবন শেখালো পিঠ পিছে ছুরি খাওয়া
একলা একার মুখোমুখি বসি আমি
আসলে জীবন প্রেমের থেকেও দামি
বাসে ট্রামে কত চেনা মুখ ভেসে আসে
পুরোনো প্রেমের কন্টাক্ট ব্যাকস্ক্রিনে
বুঝেছি আমিও নিকেশ হয়েছি কবে
ধর্মযুদ্ধে আতঙ্কবাদ মরে?
উড়ে আসে কুটো হওয়াদের পিঠে চড়ে
বিকেলের দিকে কালবৈশাখী ঝড়ে
ভেবেছি তোমাকে সত্যি তেমনই যেমনটি কল্পনা,
ভেঙ্গে গেছে মোহ চিনেছি নিজেকে, আর ভুল বুঝবো না
একলা শহরে গাছের কোটরে রেখেছি আমার চিঠি
ঠিকানাবিহীন পোস্ট-অফিসেই আমাদের হবে স্থিতি |
আমরা
সিকতা আনান হক
আমরা আবার কিনতে পারি মেঘ অনেক
আমরা আবার ভিজতে পারি বৃষ্টিতে
আমরা আবার ভুলতে পারি ভুলগুলো
কিছু প্রশ্নের উত্তর দিই পাল্টাতে।
আমার আবার শ্রমিক চোখে ঘর বানাই
ইট খসে যায় মধ্যরাতের সিমেন্টে,
কত জাহাজ তো তাবড় নাবিকেও দিক হারায়
আর জাহাজডুবি মধ্যরাতের যাত্রীতে।
ঘেমে উঠি সজ্জার নিচে
তূণীর আচার্য
কথা ছিল চিনার অরণ্যে হবে সূর্যস্নান
সমস্ত দিক থেকে ডাকবে ঝকঝকে শ্বেতাদ্রির আলো
এমতাবস্থায় মানুষ দৈবী হয়ে ওঠে
তিতলি হয়ে ওড়াউড়ি করে নিসর্গের ভেতর
ঢাল বেয়ে উঠে যায় ছুঁতে যায় শুভ্রকরোজ্জ্বল
স্তনাগ্রভূমি, উবে যায় মেঘলা বিষাদ
কখন যে গেয়ে উঠি নিমগ্ন জলঝরনার রাগে, তবু
কে জানে কখন মৃত্যুর গন্ধে ঘেমে উঠি সজ্জার নিচে
অন্ধকারের ভেতর তিলে তিলে এগিয়ে আসে
শেষ নিঃশ্বাস।