হার মানা হার

কাল্পনিক চিত্র

কেয়া রায়

পার্ট করতে করতে অর্ক আড়চোখে তাকালো সুদেষ্ণার দিকে। অসম্ভব ভালো করছে আজ, রিহার্সালেও এত ভালো করেনি। তেইশ বছরের তন্বী সুদেষ্ণা মধ্যবয়সী কুঁদুলে ঝিয়ের রোল করছে। মেক আপ আর্টিস্টকেও মনে মনে কৃতজ্ঞতা জানাল অর্ক। গাছকোমর করে পরা কলকা-পাড় শাড়িতে, কপালে বলিরেখার কুঞ্চনে আর গালে জর্দা পান গুঁজে সুদেষ্ণা রাতারাতি পদ্ম ঝি হয়ে উঠেছে। অর্ক সেজেছে হাজারি ঠাকুর। আধময়লা ফতুয়া আর ধুতি পরনে, কোমরে কষে গামছা বাঁধা। আজ অফিস থিয়েটারে এই নাটকের প্রথম রজনী। অভিনীত হচ্ছে ‘আদর্শ হিন্দু হোটেল’। দাপুটে অভিনয় করছে সুদেষ্ণা। এই নাটকের নির্দেশক অর্কপ্রভ দাশগুপ্ত। ওদের ব্যাঙ্কারদের গ্রুপ, নাম আনন্দসদন। সাহিত্যনির্ভর পালা করে ইদানিং দলটা বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছে। রবি ঠাকুরের ‘মণিহারা’, শরৎচন্দ্রের ‘অরক্ষনীয়া’র পর এবার বিভূতিভূষণের ‘আদর্শ হিন্দু হোটেল’।

সুদেষ্ণা বছর খানেক হল বরানগর স্টেট ব্যাঙ্কে জয়েন করেছে। ওর বাবা ছিলেন এই ব্যাঙ্কের করণিক। তিন বছর আগে হঠাৎ ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাকে মারা যাওয়ায় একমাত্র মেয়ে কমপেনসেশন গ্রাউন্ডে চাকরিতে ঢুকেছে। ও আসার পর অর্কর নাটকের দলের মরা গাঙে আবার জোয়ার এসেছে। অর্ক নাটক পাগল ছেলে। ব্যাঙ্ক ক্লোজ হবার পর রোজ দেড় ঘণ্টার রিহার্সাল চলে। আর শনি রবিবার কল শো। কখনও রানাঘাট, কখনও সোদপুর, আবার কখনও চন্দননগরে ডাক পড়ে। এই ডাকের অপেক্ষায় মুখিয়ে থাকে অর্ক। নাটক করে সামান্য যা সাম্মানিক পায়, যাতায়াতের গাড়িভাড়া দিয়ে কুশীলবদের হাতে আর কিছুই প্রায় দিতে পারে না। তাতে অবশ্য ওর দলের কুছ পরোয়া নেহি। দল বেঁধে হৈ-হৈ করে নাটক করতে নতুন জায়গায় যেতে ওদের ভালোই লাগে।
অর্ক আজ পরিকল্পনা করেই এসেছে, নাটক শেষে সুদেষ্ণাকে প্রোপোজ করবে। নাহ, প্রেম প্রস্তাব নয়। আটত্রিশ বছর বয়সে আর মাঠে ঘাটে বাদাম খেয়ে প্রেম করে বেড়ানোর বিলাসিতা অর্ককে মানায় না। সরাসরি বিয়ের প্রস্তাব দেবে। সুদেষ্ণা কী জবাব দেবে, তার উপর এই নাটকের দলটার ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে। ও নেতিবাচক উত্তর দিয়ে নাটকের দল ছেড়ে দিতে পারে। অথবা সম্মতি দিয়ে নাটকের উন্নতি কল্পে ঝাঁপিয়ে পড়তে পারে। অবশ্য পনেরো বছরের বড় অর্কের ডাকে ও কতটা সাড়া দেবে, সেটা সময়ই বলবে।


প্রবল করতালির মধ্যে শেষ হল স্টেজ শো‌। সফল হয়েছে অর্কের অক্লান্ত পরিশ্রম। এরকম ডি-গ্ল্যামারাইজড দুটো মুখ্য চরিত্রকে শরীরী ভাষায় ফুটিয়ে তোলা তো সহজসাধ্য কাজ নয়। যথেষ্ট পরিশ্রম সাপেক্ষ কাজ। উইংসের আড়ালে অর্ক সুদেষ্ণাকে বলল, ‘অভিনন্দন! দারুণ অভিনয় করেছ আজ। জাস্ট ফাটিয়ে দিয়েছ। ও হ্যাঁ, তোমাকে একটা কথা বলার ছিল।’
‘গাড়িতে শুনব। এখন আগে মেকআপ তুলে ড্রেস চেঞ্জ করে নিই। নটা বাজে। মা না খেয়ে বসে থাকবে।’

‘গাড়িতে বলা যাবে না। কথাটা ব্যক্তিগত।’ মরিয়া হয়ে বলে ফেলল অর্ক। পাঁচ জনের মাঝে হৃদয়ের উৎসমুখ খুলবে কীভাবে? আয়ত চোখ মেলে অর্কর মুখে কী যেন খুঁজল সুদর্শনা সুদেষ্ণা। তারপর বলল, ‘ব্যক্তিগতর সঙ্গে সঙ্গে কথাটা কি খুব জরুরিও? এখনই শুনতে হবে?’

সটান বলল অর্ক, ‘কথাটা ছোট্ট। আমি তোমাকে ভালবাসি। বিয়ে করতে চাই।’
একটু থমকে গেল সুদেষ্ণা। তারপর দ্রুত পায়ে গ্রিন রুমে ঢুকে গেল। যাক, বলা হয়ে গেছে। এবার বল সুদেষ্ণার কোর্টে। নিশ্চিন্ত মনে একটা সিগারেট ধরাল অর্ক।
দু’দিন ভাবনা চিন্তার পর দুটো শর্ত দিয়েছিল সুদেষ্ণা। এক, ওর মাকে ও সারাজীবন দেখভাল করবে। দরকার হলে নিজের কাছে এনে রাখবে। বাধা দেওয়া যাবে না।

দুই, অভিনয় ওর প্রথম এবং প্রধান পছন্দের বিষয়। শাড়ি, গয়না, ব্যাঙ্ক ব্যালেন্স নয়; ওকে অভিনয় করতে দিতে হবে সারা জীবন।
দুটো শর্তই গ্রহণযোগ্য মনে হয়েছিল অর্কর। কাজেই প্রথা অনুযায়ী ধুমধাম করে বিয়ে হয়ে গেল দু’জনের। বিয়ের পর সব ভালোই চলছিল। বয়সের ব্যবধান সুখী দাম্পত্যের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি।‌ মায়ের দেখাশোনার পাশাপাশি অভিনয়ের কাজটাও সমান উদ্যমে চালাচ্ছিল সুদেষ্ণা। অর্ক পরিচালিত নাটকে অভিনয় করে অর্ডিয়েন্সকে তাক লাগিয়ে দিচ্ছিল সুদেষ্ণা। ওর অভিনয় ক্ষমতাকে নিংড়ে নিচ্ছিল অর্ক। তাই কখনও দেবদাসের চন্দ্রমুখীর মতো বারবণিতার চরিত্র, আবার কখনও চোখের বালির বিধবা বিনোদিনীর চরিত্র; সব রকম ক্লাসিক চরিত্রে সুদেষ্ণার অ্যাসিড টেস্ট হচ্ছিল। অনায়াসে উতরেও যাচ্ছিল ও। আসলে অভিনয়ই সুদেষ্ণার ধ্যান জ্ঞান পূজা।‌ ওকে একবেলা খেতে না দিলেও চলবে, কিন্তু অভিনয় ছাড়া ও বাঁচতে পারবে না।

সেই অভিনয়ই ওর জীবনে কাল হল। নাটকে একটু নামডাক হতেই মধুলোভী মৌমাছির মতো লোকজন ওর চারপাশে ভিনভিন করতে লাগল। স্তাবক পরিবৃত হয়ে থাকতে সুদেষ্ণা পছন্দ করত। যে একটু সাজিয়ে গুছিয়ে ওর অভিনয়ের প্রশংসা করতে পারত, সেই ওর ঘনিষ্ঠ বন্ধুবৃত্তে ঢুকে পড়ত। অর্ক প্রতিবাদ করলেই তাকে পজেসিভ হাজব্যান্ড বলে দাগিয়ে দিত সুদেষ্ণা।‌ ধীরে ধীরে সিরিয়ালের ডেলি সোপে অভিনয়ের অফার আসে সুদেষ্ণার কাছে। আরো বেশি জনগণের কাছে রাতারাতি পৌঁছে যাওয়ার আশায় সুদেষ্ণা বোকাবাক্সে মুখ দেখাতে রাজি হয়ে গেল। অর্কর মতামত নেবার প্রয়োজনটুকু বোধ করল না। অর্কর পরিচালক সত্তা আহত হলেও ও আগবাড়িয়ে বাধা দিল না। সুদেষ্ণা যেখানেই স্ক্রিন টেস্টে অংশগ্রহণ করত, সেখানেই সিলেক্ট হয়ে যেত। চাকরি বাঁচিয়ে অভিনয় চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছিল না। সুদেষ্ণা বাড়িতে ঘোষণা করল, সে চাকরি ছেড়ে দেবে।
আর সহ্য করতে পারল না অর্ক। দুজনের তর্ক লেগে গেল।
‘ওই জঘন্য সিরিয়ালগুলোয় কাজ না করলেই কি নয়? কি আছে ওগুলোতে! না আছে শিল্প, না আছে গল্প।’

হুল ফোটার সুদেষ্ণা, ‘হতে পারো তুমি বি-রা-আ-আ-ট মাপের বড় পরিচালক। কিন্তু আমার মতো অভিনেত্রীর কাছে যে কোনো মাধ্যমই আদরের। সিরিয়াল শুনে নাক কুঁচকাব, আর থিয়েটার শুনেই উদ্বাহু হয়ে নাচব; এটা আমার সঠিক মনে হয় না।’
‘তুমি পাগল হয়ে গেছে! কী পাও ঐসব রদ্দিমার্কা ডেলি সোপে মুখ দেখিয়ে? একগাদা মেকআপ, দামী শাড়ি গয়না পরে কুটকচালী আর পারিবারিক কোন্দল। জঘন্য! তোমাকে আমি আর্ট বোঝাতে চেয়েছিলাম। তোমার মধ্যে স্পার্ক ছিল।’
‘কী পাই না? নাম খ্যাতি টাকা; সব পাচ্ছি সিরিয়ালে অভিনয় করে। আসলে তোমার নাম তো কেউ জানে না, তাই তোমার হিংসে হচ্ছে। আমাকে এখন বাংলার ঘরে ঘরে সবাই চেনে, এটা তোমার সহ্য হচ্ছে না।’

‘আমার নেগেটিভ পাবলিসিটি বা পয়সা কোনটাই চাই না। তুমি সঠিক পথে ফিরে এসো সুদেষ্ণা। আমি তোমাকে বিভিন্ন আকর্ষণীয় রোল দেব। তোমার মধ্যে পোটেনশিয়ালিটি আছে। তাকে এভাবে নষ্ট কোরো না। আর চাকরি ছাড়ার ভুল তো কোরোই না। সিরিয়াল আজ আছে, কাল নেই। ভুখা পেটে শিল্প হয় না।’

সুদেষ্ণা বাঁকা হেসে বলেছিল, ‘কেন, আমার হাতে কাজ না থাকলে তুমি আমাকে খাওয়াবে। বিয়ের সময় ভাত কাপড়ের দায়িত্ব নিয়েছিলে, মনে নেই? আরে না, ইয়ার্কি মারছিলাম। আমার ব্যবস্থা আমিই করব। তোমার মুখাপেক্ষী আমি কোনোদিন হব না।’
সেদিন সুদেষ্ণাকে আটকাতে পারেনি অর্ক। চোখের সামনে দেখেছিল, কিভাবে ধীরে ধীরে চোরাবালিতে তলিয়ে যাচ্ছে সুদেষ্ণা। একের পর এক ট্র্যাশ সিরিয়ালের মূল ভূমিকায় অভিনয় করছে। সরছে থিয়েটারের গ্রিন রুম থেকে। ‘মাস’ জনগণের ড্রয়িং রুমে ঢুকে অতিনাটকীয় অভিনয় করছে, আর ‘ক্লাস’ মানুষের পছন্দের ওপর আস্থা হারাচ্ছে। স্টেজ শো আর করে না। ওতে যে গ্ল্যামার নেই। চাকরিতেও একদিন ইস্তফা দিল দুম করে। কিন্তু শেষ রক্ষা করতে পারল না সুদেষ্ণা। হয়তো ঈশ্বরের ইচ্ছা ছিল না, ও মিডিয়ার আবর্তে হারিয়ে যাক। বিয়ের পাঁচ বছরের মাথায় সুদেষ্ণা গর্ভবতী হল। তখন ও রাইজিং স্টার। একের পর এক হিট সিরিয়ালের নায়িকা। সিনেমায় সহনায়িকা বা পার্শ্বচরিত্র করে পায়ের তলার জমি শক্ত করছে। এই সময় সন্তান চাইছিল না সুদেষ্ণা। এতে কেরিয়ারের ক্ষতি। টলিউড যাও বা বিবাহিত নায়িকাকে মেনে নেয়, মা হয়ে গেলে কদাপি না। সুদেষ্ণা জানে টালিগঞ্জ টেলি চরিত্র। তাই ও বেঁকে বসল, বাচ্চা চায় না এখনই। ওর বয়সও বেশি নয়। গর্ভপাত করানোর জন্য মরিয়া হয়ে উঠল সুদেষ্ণা।

অপরদিকে অর্ক ভীষণ খুশি হয়েছিল। ওর উদ্বেগ, ভিতরে ভিতরে ক্ষয়ে যাওয়া স্বামীসত্তায় খানিক উপশমের মলম পড়েছিল। সন্তান এলে অর্কর অন্তত একটা অবলম্বন হবে। বেঁচে থাকার একটা কারণ চাই তো। ওর থিয়েটারের দলটা উঠেই গেছিল শেষ পর্যন্ত। কিন্তু সুদেষ্ণা এখনই সন্তান ধারণ করতে মানসিকভাবে প্রস্তুত নয়। সন্তান এলে ফিগার খারাপ হয়ে যাবে। কাজ পাবে না। ও জিদ ধরলো, অ্যাবরশন করাবে। অনন্যোপায় হয়ে অর্ক শাশুড়ির দ্বারস্থ হল। সুদেষ্ণার মা সব শুনে ঢাল হয়ে অর্কের পাশে দাঁড়ালেন। মেয়েকে শাসানি দিলেন, গর্ভের প্রথম সন্তান অমূল্য। ভ্রুণহত্যা করলে উনি গৃহত্যাগী হবেন। মা অন্ত প্রাণ সুদেষ্ণার। স্বামী ও মা, উভয়ের চাপে উত্তীয়কে পৃথিবীর আলো দেখাতে বাধ্য হল সুদেষ্ণা। যন্ত্রের মতো মায়ের ভূমিকা পালন করে গেছে, কিন্তু আবেগ রহিত, নিরুত্তাপ ভঙ্গিতে। সুদেষ্ণা যা ভয় করেছিল, তাই হল। সিজারে মা হবার পর ওর শরীরে ভাঙন‌ ধরল। সন্তান ধারণের হ্যাপায় বছর খানেক কাজ বন্ধ রাখতে হল। তাতেই ওর শূন্যস্থান পূরণ হয়ে গেল। ওজন ঝরিয়ে নব উদ্যমে কাজে ফিরতে চেয়েছিল সুদেষ্ণা। কিন্তু ততদিনে সাফল্যের দরজা ওর জন্য বন্ধ হয়ে গেছে। ছোটখাট বৌদি, কাকিমার রোল পেলেও নায়িকার চরিত্র অধরা রয়ে গেল। সুতীব্র অভিমানে নিজের সন্তান, স্বামী, মা— তিনজনের দিক থেকেই মুখ ফিরিয়ে নিল সুদেষ্ণা। চাকরি, অভিনয়, সংসার— কোনোটাই ওর ঠিকমতো করা হল না। পদ্মপাতায় জলের মতো সংসারে ভেসে রয়েছে, যেন কোনো উদ্বাস্তু। সিরিয়াল ওকে ছেড়ে গেল, আর ও সংসারবিমুখ হয়ে পড়ল। পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে মানাতে না পেরে নিজস্ব খোলসে ঢুকে দিনাতিপাত করতে লাগল।

উত্তীয় এবার পাঁচ বছরে পড়ল। সে এখন স্কুলে যায়। বাপির সঙ্গেই ওর যত ভাব। সুদেষ্ণা নিজের ঘরে একা সময় কাটায়। কোনো বিষয়ে কোনো মতামত জানায় না। অর্ক এখন নিজের হাত কামড়ায়। ও তো জানত, অভিনয়ই সুদেষ্ণার ধ্যান জ্ঞান ভালবাসা। তাহলে কেন ওকে সরিয়ে আনতে চেয়েছিল? সে কি কেবলই সিরিয়াল সস্তা বিনোদন বলে? নাকি সত্যিই নিজের মধ্যে কোনো অসূয়া কাজ করেছিল? ছি ছি, নিজের কৃতকর্মের জন্য আজ অনুতপ্ত অর্ক। সুদেষ্ণার প্রতিভা ছিল। স্বামী হিসেবে ওর কাজ ছিল, ওকে সাফল্যের পথে এগিয়ে দেওয়া। পিছু টেনে ধরা নয়। সুদেষ্ণা আজ মন খারাপের রুগি। নিজের ঘরে সর্বক্ষণ একা থাকে। ও কি নিজের অসফল জীবনের ব্যর্থতার জন্য অর্ককেই দায়ী করে? কতদিন সুদেষ্ণা মন খুলে কথা বলে না, হাসে না! কতদিন ওরা একসঙ্গে ডিনারে যায়নি!

আজ শনিবার। অর্কর ছুটি। ছেলে পড়তে যাবার পর অর্ক টোকা দিল সুদেষ্ণার ঘরে, ‘আসতে পারি?’
সুদেষ্ণা ক্লান্ত জিজ্ঞাসু চোখে তুলে তাকাল, ‘কিছু বলবে?’
‘সুদেষ্ণা, আজ বাইরে যাবে খেতে? উত্তীয় খুব খুশি হবে।’
‘তোমরা যাও। আমার ভালো লাগছে না।’
কথা এগোয় না আর। খানিক পরে অর্ক বলে, ‘সুদেষ্ণা, আগামী শীতের মরশুমে আমি সমরেশ মজুমদারের সাতকাহন মঞ্চস্থ করতে চলেছি।’
সুদেষ্ণা চোখ তুলে তাকাল। মুখে কিছু বলল না। অর্ক বলে চলে, ‘আর দীপাবলীর চরিত্রে কাকে ভেবেছি জানো? তোমাকে, তুমি করবে দীপাবলী।’
‘আমি! তুমি আমাকে নেবে? কিন্তু আমি যে অভিনয় করতে ভুলে গেছি।’
‘অভিনয় তোমার রক্তে। অভিনয় তোমাকে ছেড়ে যায়নি। আর তোমার ভেতর থেকে অ্যাক্টিং বের করে আনার দায়িত্ব আমার, পরিচালক অর্কপ্রভ দাশগুপ্তের।’
‘আমি কি পারব? দীপাবলীর মতো লড়াকু, হার না মানা মেয়ে হিসেবে কি আমাকে মানাবে?’ কতদিন পর সুদেষ্ণার চোখে ঔজ্জ্বল্য, যেন হীরের কুচির ঝলক!

‘মানাবে, মানাবে। তুমি আরেকবার উপন্যাসটা পড়ে ফেল। আগামী মাস থেকেই রিহার্সাল। জিমে যেতেও শুরু করো। বাড়তি মেদ ঝরিয়ে ঝরঝরে হও আগের মতো। তারপর আবার দুনিয়া দেখবে সুদেষ্ণার কামাল। তবে হ্যাঁ, স্ক্রিন টেস্ট দিয়ে নিজেকে যোগ্য প্রমাণ করতে হবে তোমাকে।’

চলে যাচ্ছিল অর্ক। পিছন থেকে ডাকল সুদেষ্ণা, ‘শোনো, আমাকে সাতকাহন উপন্যাসটা এনে দেবে? আর আজ ডিনারে যাবে বলছিলে না? তিনটে টেবিল বুক করে দিও। আমি কিন্তু চাইনিজ খাব।’