নবপর্যায়ে চতুর্থ বর্ষের দ্বিতীয় সংখ্যাটি প্রকাশিত হয়েছে চন্দ্রদীপা সেনশর্মার সম্পাদনায়। এই সংখ্যায় স্মরণ করা হয়েছে কবি ও সঙ্গীতশিল্পী ও ‘উত্তরসুরি’ পত্রিকার সম্পাদক অরুণ ভট্টাচার্যকে। উল্লেখ্য, এ বছর অরুণ ভট্টাচার্যের জন্মশতবর্ষ চলছে। পত্রিকার শুরুতে ‘একটি কবিতার নির্মাণ প্রসঙ্গে’ লিখেছেন কবি অরুণ ভট্টাচার্য। জানা যায়, আলোক সরকার এবং দীপঙ্কর দাশগুপ্ত সম্পাদিত ‘শতভিষা’ পত্রিকার হাল পরবর্তী সময়ে ধরেছিলেন কালীকৃষ্ণ গুহ ও মৃণাল দত্ত। আলোচ্য লেখাটি কালীকৃষ্ণ গুহর কথায় তাঁকে লিখতে হয়েছিল। কবিতার নির্মাণ প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, ‘কবিতা বা বিশেষ অর্থে শিল্প-কে চেষ্টাকৃতভাবে নির্মাণ করা যায়? এই প্রশ্নের উত্তরে আমার কথা: আমি কখনও চেষ্টাকৃতভাবে তা পারিনি। আসলে, কবিতা বা শিল্প কখনোই নির্মাণ করা যায় না— কবিতা বা শিল্প নির্মিত হয়। কিভাবে তা নির্মিত হয়, একমাত্র তারই বিবরণ দেওয়া যায় একবার সেই কবিতা নির্মিত হয়ে গেলে।’
অরুণ ভট্টাচার্য সম্পর্কে লিখেছেন অশোক মিত্র ‘যা রে পাখি যা’। তিনি লিখেছেন, ‘এমন কয়েকজন থাকেন, অঙ্গুলিমেয় মাত্র কয়েকজন, প্রতি দেশে, প্রতি কালে, নেপথ্য তাঁদের স্বভাবগরিমা, তাঁরা সর্বদা মঞ্চের আড়ালে, অথচ তাঁদের প্রসঙ্গ পাশে সরিয়ে রেখে সে-দেশের সে-কালের সাহিত্য সৃষ্টির বর্ণনা বা বিশ্লেষণ অতি অসম্পূর্ণ থেকে যেতে বাধ্য। যে-শতাব্দী শেষ হয়ে আসছে তার মধ্যবর্তী বেশ কয়েক দশক জুড়ে বাংলা-সাহিত্যের অঙ্গনে অরুণ ভট্টাচার্য এই ভূমিকা পালন করেছেন।’ অশোক মিত্রের এই কথাগুলি বর্তমান সময়ের পাঠকদের অরুণ ভট্টাচার্যকে জানতে সহায়ক হবে।
এর পাশাপাশি অরুণ ভট্টাচার্যের একগুচ্ছ কবিতা পুনর্মুদ্রিত হয়েছে, যা এই সময়ের পাঠকদের কাছে এক বিশেষ প্রাপ্তি। এছাড়াও অরুণ ভট্টাচার্যকে নিয়ে স্মৃতিআলেখ্য লিখেছেন অজয় দাশগুপ্ত— ‘পথে লাল ট্রাফিক সিগন্যাল অগ্রাহ্য করেই যেতে হবে যে যার পথে।’ এই গদ্যে অরুণ ভট্টাচার্যের জীবনের নানান তথ্য জানা যায়।
এছাড়াও কালীকৃষ্ণ গুহর প্রবন্ধ ‘পিছন ফিরে পুনর্বার’ অরুণ ভট্টাচার্যকে জানতে বিশেষভাবে সাহায্য করবে। এই প্রবন্ধের মধ্যে কালীকৃষ্ণর লেখা ‘অরুণ ভট্টাচার্যের স্মৃতির উদ্দেশে’ কবিতাটি বিশেষভাবে ভালো লাগে। সেইসঙ্গে অরুণ ভট্টাচার্যের কবিতা সম্পর্কে তাঁর আলোচনা উল্লেখ করার মতো।
অরুণ ভট্টাচার্যকে নিয়ে আরও একটি প্রবন্ধ লিখেছেন অতনু ভট্টাচার্য— ‘অলক্ষ্যেই, তবু আলো: অরুণ ভট্টাচার্য’। গভীর মননশীলতা ও অন্তর্মুখী আবেদনে জারিত কবিতা ঠিক কেমন হয়, তা এখানে বিশ্লেষণ করেছেন অতনু। এছাড়া অরুণ ভট্টাচার্য সম্পর্কে একটি স্মৃতিআলেখ্য লিখেছেন চন্দ্রদীপা সেনশর্মা।
প্রয়াত হয়েছেন কবি রঞ্জিত সিংহ। তাঁর কবিতা নিয়ে একটি উল্লেখযোগ্য প্রবন্ধ লিখেছেন প্রদীপ চক্রবর্তী— ‘নব্যধ্রুপদীকবিতায় কবি রঞ্জিত সিংহ ও তাঁর ভাবনাজগৎ’। রঞ্জিত সিংহ বাংলা সাহিত্যের একজন উল্লেখযোগ্য কবি হওয়া সত্বেও আজও তাঁর কবিতা তত আলোচিত হয়নি। এ বড় আক্ষেপের বিষয়। তবে এই প্রবন্ধটি কিছুটা হলেও সেই আক্ষেপ দূর করতে সমর্থ হয়েছে। এজন্য সম্পাদককেও ধন্যবাদ দিতে হয়। প্রচ্ছদ এঁকেছেন সুবোধ দাশগুপ্ত।
সেই ময়ূখ
সম্পাদক: চন্দ্রদীপা সেনশর্মা
মূল্য: ১০০ টাকা