বিচিত্র কুমার
একটি ছোট্ট গ্রাম ছিল। সেখানে একটি ছেলে থাকত, নাম তার অয়ন। অয়ন ছিল খুবই কৌতূহলী এবং বিজ্ঞানপ্রেমী। সে সব সময় আকাশে তাকিয়ে থাকত, মনে মনে ভাবত, অন্য গ্রহে কি কেউ বাস করে? তার মনেই ছিল বহু প্রশ্ন, কিন্তু তার চারপাশের মানুষরা এসব নিয়ে তেমন মাথা ঘামাত না। তবে অয়ন ঠিক করেছিল, একদিন সে নিশ্চয়ই এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করবে।
একদিন, যখন অয়ন তার বাড়ির ছাদে বসে আকাশের দিকে তাকিয়ে ছিল, সে হঠাৎ একটি অদ্ভুত আলোর ঝলক দেখতে পায়। সেটা এতটাই উজ্জ্বল ছিল যে, অয়ন চোখের পাতা বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছিল। কিছুক্ষণ পর, যখন তার চোখ খুলল, সে দেখল একটি অসাধারণ আকৃতির উড়ন্ত যান তার দিকে আসছে।
যানটি হালকা নীল বর্ণের এবং তার পাখনা ছিল সোনালি রঙের। খুব কম সময়ের মধ্যে সেটি অয়নের পাশের মাঠে নেমে এলো। অয়ন ভয় না পেয়ে, বিস্মিত হয়ে সেই যানটির দিকে এগিয়ে গেল। তার চোখে ছিল কৌতূহল আর উত্তেজনা।
যতই সে কাছে গেল, ততই এক অদ্ভুত ঘটনা ঘটল। যানটি খুলে গেল এবং তার মধ্যে থেকে একদল এলিয়েন বের হল। তারা দেখতে মানুষের মতো হলেও তাদের ত্বক ছিল সোনালি রঙের, এবং তাদের চোখ ছিল বড় এবং সবুজ। এলিয়েনদের মধ্যে একজন এগিয়ে এসে অয়নের সঙ্গে কথা বলল। অয়নের মুখে একটিও কথা না বেরোলে, এলিয়েনটি হাসতে হাসতে বলল, ‘তোমরা মানুষরা এত ভাবনা চিন্তা করো, আর আমরা এলিয়েনরা, আমাদের মনে কোনো প্রশ্নই নেই।’
অয়ন একদম অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকল। ‘তুমি কী বলতে চাও?’ অয়ন প্রশ্ন করল।
এলিয়েনটি উত্তর দিল, ‘আমরা খুব উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করি। তোমরা যেগুলোকে সায়েন্স ফিকশন মনে করো, সেগুলোই আমাদের বাস্তবতা।’
অয়ন উত্তেজনায় ভাবতে লাগল। এলিয়েনদের মতো উন্নত প্রযুক্তি আর সভ্যতা কেমন হতে পারে? সে জানতে চাইলে, এলিয়েনটি তাকে তাদের গ্রহে যাওয়ার প্রস্তাব দিল। অয়ন সানন্দে রাজি হয়ে গেল। এলিয়েনরা তাকে তাদের স্পেসক্র্যাফ্টে বসিয়ে নিয়ে গেল তাদের গ্রহে।
এলিয়েনদের গ্রহের পরিবেশ একেবারে আলাদা ছিল। জায়গাটা ছিল সবুজে ভরা, সেখানে আকাশ ছিল লাল এবং বৃষ্টির জল ছিল মেটালিক রঙের। কিন্তু সবচেয়ে আশ্চর্যজনক বিষয় ছিল তাদের শহরের ভেতরকার জীবন। রাস্তা ছিল গ্লাসের মতো স্বচ্ছ, যেখানে অয়ন মানুষের মতো প্রাণী দেখতে পেল না, কিন্তু এলিয়েনরা তার চারপাশে চলাফেরা করছিল।
অয়ন জানতে পারল, এলিয়েনদের গ্রহে তাদের সমস্ত কাজ এবং জীবনযাপন প্রযুক্তির মাধ্যমে পরিচালিত হয়। তারা সমস্ত পরিবেশের প্রতি অত্যন্ত শ্রদ্ধাশীল এবং সব ধরনের উৎসর্জন থেকে বিরত থাকে। গ্রহের সকল সম্পদ সঠিকভাবে ব্যবহার করা হয়, কোনও অযথা অপচয় নেই। অয়ন দেখল, তাদের শিক্ষা ব্যবস্থা একেবারে আধুনিক, যেখানে কোনো বই বা খাতা নেই। সবকিছু ডিজিটাল মাধ্যমে হয়, এবং শিক্ষা নেওয়ার জন্য একদম সহজ এবং দ্রুত পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়।
অয়ন এমন একটি জীবন দেখে মুগ্ধ হয়ে গেল। সে ভাবল, যদি তার গ্রহেও এমন কিছু হতে পারে, তবে পৃথিবী আরো অনেক উন্নত হতে পারত। এলিয়েনরা তাকে আরও একধাপ এগিয়ে নিয়ে গিয়ে, তাদের প্রযুক্তি সম্পর্কে আরও গভীরভাবে জানালো। তারা জানালো, তাদের কাছে এমন এক ধরনের প্রযুক্তি আছে যার মাধ্যমে পৃথিবীর জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশগত বিপর্যয় দূর করা সম্ভব। তবে তাদের মতে, পৃথিবীকে এই প্রযুক্তি দেওয়ার আগে মানুষকে নিজের মধ্যে পরিবর্তন আনতে হবে। পরিবেশের প্রতি তাদের দায়বদ্ধতা বুঝতে হবে এবং সবাই মিলে একত্রিত হয়ে কাজ করতে হবে।
এটি শোনার পর অয়ন চিন্তা করতে লাগল। মানুষের মধ্যে কীভাবে ঐক্য আসবে? সবাই কি কখনো নিজেদের স্বার্থ ত্যাগ করবে? কিন্তু একদিন, সে সত্যিই আশা হারালো না। সে ফিরে গিয়ে তার গ্রামে সবার কাছে এসব শিখিয়েছিল, তাদের বোঝানোর চেষ্টা করেছিল। ধীরে ধীরে, কিছু মানুষ সেই বার্তা গ্রহণ করতে শুরু করল এবং পরিবেশ রক্ষার জন্য কাজ করতে লাগল।
অয়ন জানত, তাকে শুধু পরিবর্তনের শুরুটা করতে হবে, বাকিটা পৃথিবী নিজেই করবে। একদিন, হয়তো তার গ্রহের মতো পৃথিবীও একদিন উন্নত ও সচেতন হয়ে উঠবে।
এমন ভাবনা নিয়ে অয়ন তার গ্রহ থেকে ফিরে এলো এবং ভবিষ্যতের দিকে এক নতুন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে তাকালো।