রাজ্য জুড়ে চলছে ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন প্রক্রিয়া বা এসআইআর। রাজনৈতিক ভাবে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ভবানীপুর বিধানসভা কেন্দ্রেও এই কাজ এগোচ্ছে দ্রুত গতিতে। কিন্তু সেখানে শাসকদল সক্রিয় থাকলেও পদ্ম শিবিরের ভূমিকা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। বিজেপির নিচুতলার বহু কর্মী-সমর্থকের ক্ষোভ, মুখ্যমন্ত্রীর নিজের আসনে বিরোধী দলনেতা যখন জয়ের দাবি তুলছেন, তখন এসআইআর প্রক্রিয়ায় ভবানীপুরের বিজেপি নেতৃত্বের নিষ্ক্রিয়তা মেনে যায় না।
জানা গিয়েছে, কলকাতা পুরসভার আটটি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত ভবানীপুর বিধানসভা এলাকা। এই কেন্দ্রে তিনটি মণ্ডলে ভাগ করা বিজেপি’র সংগঠনের মধ্যে সর্বাধিক বেহাল অবস্থা মণ্ডল-২-এ, যেখানে রয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির আশপাশের এলাকা। অভিযোগ, এই মণ্ডলে তিনটি ওয়ার্ড মিলিয়ে এসআইআর চলাকালীন একটিতেও বিজেপি’র বিএলএ মাঠে নামেনি।
প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের বিধানসভার ফল ঘোষণার পর রাতে যে ভাবে ভবানীপুরে বিজেপি কর্মীরা ‘আক্রমণের’ মুখে পড়েছিলেন, মণ্ডল-২–এর দপ্তরে আগুন লাগানো হয়েছিল, সেই স্মৃতিই নাকি এখনও আতঙ্কিত করে রেখেছে স্থানীয় নেতা-কর্মীদের। ফলে অনেকে সরাসরিভাবে অংশ নিতে চাইছেন না বলে দাবি এলাকাবাসীর একাংশের।
মণ্ডল সভাপতির ভূমিকা নিয়েও উঠছে প্রশ্ন। সূত্রের দাবি, রাজ্যে এসআইআর শুরুর দিনেও তিনি ছিলেন বাইরে। যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তাঁর ফোন সুইচড অফ। জেলা বিজেপির সাধারণ সম্পাদক অবশ্য ভিন্ন দাবি করেছেন। তাঁর কথায়, ভোটারদের সাহায্য করতে ইতিমধ্যে চালু হয়েছে হেল্পলাইন নম্বর। সরাসরি দেখা করলে তাদের উপর ‘চাপ’ বাড়তে পারে, তাই কিছুটা পিছন থেকে কাজ এগোচ্ছে— এমনটাই তাঁদের কৌশল।
অন্যদিকে, তৃণমূলের পাল্টা বক্তব্য, সন্ত্রাসের অভিযোগ ভিত্তিহীন। সিপিএম-ও বহু জায়গায় ক্যাম্প করেছে, তাদের বাধা দেওয়া হয়নি। শাসকদলের নেতাদের বক্তব্য, বিজেপির কোনও সংগঠন থাকলে তবেই তো তারা এসআইআর প্রক্রিয়ায় যোগ দিতে আসবে। ওদের সাংগঠনিক দুর্বলতার মুখোশ খুলে যাচ্ছে। এখন শেষ মুহূর্তে ‘ভাড়াটে’ লোক এনে সক্রিয়তার ছবি দেখানোর চেষ্টা করছে।
এসআইআর-এর সময়সীমা যখন শেষ পর্যায়ে, তখন এই বিতর্কে আরও সরগরম ভবানীপুরের রাজনৈতিক মহল। ভোটার তালিকা সংশোধনের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়ায় বিরোধী শিবিরের এই অনাগ্রহ কি ভবিষ্যৎ লড়াইতে প্রভাব ফেলবে? সেই প্রশ্নের উত্তর পেতে অপেক্ষা করতে হবে আরও কয়েকমাস।