ভরদুপুরে দক্ষিণেশ্বর মেট্রো স্টেশনের ভিড়ভাট্টা ম্লান করে দিল এক মর্মান্তিক খুন। বাগবাজার বয়েজ স্কুলের ১৭ বছরের একাদশ শ্রেণির ছাত্রকে সহপাঠীর হাতে ছুরি বিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারাতে হল শুক্রবার। প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান অনুযায়ী, প্রথমে দুই ছাত্রদলের ঝগড়া হাতাহাতিতে গড়ায়। সেই সময়ই এক ছাত্র ব্যাগ থেকে ছুরি বার করে সঙ্গীর পেটে আঘাত করে। গুরুতর জখম অবস্থায় সাগরদত্ত মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যাওয়া হলেও শেষরক্ষা হয়নি। সেখানেই মৃত্যু হয় তার।
পুলিশ সূত্রে খবর, হামলাকারী এবং নিহত— দু’জনই একই স্কুলের পড়ুয়া। নিহত ছাত্র কলা বিভাগের, আর অভিযুক্ত পড়ে বাণিজ্য বিভাগে। তদন্তকারীদের প্রাথমিক অনুমান, এই নৃশংস ঘটনার পিছনে প্রেমঘটিত কারণ। পুলিশের ভাষায়, ‘প্রেমঘটিত বিবাদের জেরেই এই সংঘর্ষ মারাত্মক আকার ধারন করে।’ ইতিমধ্যেই তিনজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে পুলিশ।
পুরো ঘটনার অংশবিশেষ দক্ষিণেশ্বর মেট্রোর সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়েছে। স্টেশন চত্বরে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকা ছাত্রকে সহপাঠীরা দোতলার পিছনের সিঁড়ি বেয়ে নীচে নামিয়ে নিয়ে যায়। কিন্তু অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের জেরে প্রাণ বাঁচানো সম্ভব হয়নি।
এই ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে সাধারণ যাত্রীদের মধ্যে। প্রশ্ন উঠছে, কীভাবে একটি ধারালো অস্ত্র নিয়ে কোনও ছাত্র মেট্রো স্টেশনের ভিতরে প্রবেশ করতে পারল? বিশেষজ্ঞদের মতে, স্টেশনের মূল ফটক থেকে টিকিট কাউন্টার পর্যন্ত কোনও নিরাপত্তা বেষ্টনী না থাকাটা একটি বড় ত্রুটি। ব্যাগ স্ক্যানিং শুরু হয় শুধুমাত্র টিকিট কাটার পর। ফলে বাইরে থেকে ছুরি নিয়ে প্রবেশ আটকানো সম্ভব হয়নি।
একজন প্রত্যক্ষদর্শীর কথায়, ‘সবকিছু কয়েক মিনিটের মধ্যে ঘটে। হঠাৎই ঝগড়া শুরু হয় দুই ছাত্রের। তার পরে ছুরি বের করে আঘাত করা হয়। আমরা দৌড়ে গিয়ে সাহায্য করার চেষ্টা করি। কিন্তু তখন অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে।’
এই ঘটনায় নিহতের পরিবার স্তম্ভিত। তাঁদের কথায়, ‘ও পড়াশোনাতেই মন দিত, কোনও ঝামেলার সঙ্গে জড়িয়ে ছিল না। কোনওদিন ভাবিনি, এমনটা ঘটতে পারে।’
স্থানীয় কাউন্সিলর অঞ্জন পালও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তাঁর দাবি, ‘মেট্রো স্টেশনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা এতটাই ফাঁকফোকরপূর্ণ যে আজকের মতো দুর্ঘটনা ঘটতে সময় লাগল না। এ ঘটনায় পূর্ণাঙ্গ তদন্ত চাই।’
এই কাণ্ডে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আরপিএফ ও মেট্রো কর্তৃপক্ষের ভূমিকাও প্রশ্নের মুখে। যাত্রীরা সরাসরি বলছেন, ‘দিন দিন রাজ্যের পরিস্থিতি এতটাই খারাপ হচ্ছে যে, ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে নিয়ে ভয়ের মধ্যে থাকতে হচ্ছে।’
তদন্তকারীরা আপাতত আটক তিনজনের বয়ান খতিয়ে দেখছেন। মূল অভিযুক্তকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, প্রেমঘটিত দ্বন্দ্বই এই খুনের মূল কারণ।