ট্যাংরাকাণ্ডের ৯৯ দিনের মাথায় চার্জশিট পেশ পুলিশের

ট্যাংরায় একই পরিবারের তিন সদস্যের খুনের ঘটনার ৯৯ দিনের মাথায় শিয়ালদহ আদালতে চার্জশিট জমা দিয়েছে পুলিশ। এই চার্জশিটে দে পরিবারের দুই ভাই প্রণয় দে এবং প্রসূন দে-র নাম রয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার একাধিক ধারায় মামলা রুজু করেছে পুলিশ। চার্জশিটে সেই ধারাগুলির উল্লেখ করা হয়েছে।

গত ১৯ ফেব্রুয়ারি ট্যাংরার অতল শূর রোডের বাড়ি থেকে একই পরিবারের দুই বধূ এবং এক কিশোরীর দেহ উদ্ধার করা হয়েছিল। পরিবারের বাকি তিন সদস্য বাইপাসের ধারে গাড়ি দুর্ঘটনায় গুরুতর জখম হয়েছিলেন। গাড়িতে ছিলেন প্রসূন দে, প্রণয় দে এবং পরিবারের এক কিশোর সদস্য প্রতীপ। আহত অবস্থায় তাঁরাই জানায়, ট্যাংরার বাড়িতে তিনটি দেহ পড়ে আছে। সেই বয়ানের ভিত্তিতেই বাড়ি থেকে তিনজনের দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তিনটি মৃতদেহ ময়নাতদন্তের পর জানা যায়, তিন জনকেই খুন করা হয়েছে। খাদ্যে বিষক্রিয়ার কারণে মৃত্যু হয়েছে পরিবারের কিশোরী সদস্য প্রিয়ম্বদার। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে দুই গৃহবধূ রোমি দে এবং সুদেষ্ণা দে-র মৃত্যু হয়েছে। তাঁদের হাতের শিরা কাটা অবস্থায় ছিল। এই ঘটনায় রোমির বাবা থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। তার ভিত্তিতেই দে পরিবারের দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে পুলিশ।

এই ঘটনার ৯৯ দিনের মাথায় বৃহস্পতিবার শিয়ালদহ আদালতে চার্জশিট জমা দিয়েছে পুলিশ। এই চার্জশিটে ১০৩ (১) ধারার উল্লেখ রয়েছে। এই ধারায় খুনের অপরাধে শাস্তির নিদান দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি চার্জশিটে ১০৯ (১) ধারার উল্লেখ রয়েছে। এই ধারা অনুযায়ী, কাউকে খুনের চেষ্টা করলে এবং সেই চেষ্টায় তাঁর মৃত্যু ঘটলে অপরাধীর ১০ বছরের কারাদণ্ড এবং যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হতে পারে। এছাড়াও পুলিশের দেওয়া চার্জশিটে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার তিন ও পাঁচ নম্বর ধারার উল্লেখ রয়েছে।


নিজের স্ত্রী, বৌদি ও মেয়েকে খুনের কথা স্বীকার করে নিয়েছেন ছোটো ভাই প্রসূন দে। খুনের ঘটনায় ছোটো ভাইকে সাহায্য করার অভিযোগে প্রণয়কে কয়েকদিন আগেই গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। বর্তমানে দুই ভাই পুলিশের হেফাজতে রয়েছেন। পরিবারের জীবিত কিশোর প্রতীক আপাতত সরকারি হোমে রয়েছেন।

খুনের মোটিভ সম্পর্কে চার্জশিটে পুলিশ দাবি করে, ব্যবসায় ক্ষতির পর দে পরিবারের আর্থিক অনটন চলছিল। আগের মতো আভিজাত্য ধরে রাখতে না পারায় এই চরম পদক্ষেপ নিয়েছিলেন দুই ভাই। দুই জনে মিলে পরিবারের সকলকে খুনের পরিকল্পনা করেন তাঁরা। প্রতীককেও খুনের পরিকল্পনা করেছিলেন দুই ভাই। তদন্তে উঠে আসে, গাড়ি বাঁদিকে গিয়ে মেট্রোর পিলারে ধাক্কা মেরেছিল। আর প্রতীকও বসেছিল বাঁদিকেই।

যদিও, দুই ভাইয়ের বক্তব্য ছিল, আর্থিক অনটনের কারণে পরিবারের সকলে মিলে আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেয়। পরিবারের তিন সদস্য সেই পরিকল্পনায় সফল হলেও বাকিরা হয়নি। সেই কারণে গাড়ি নিয়ে দুর্ঘটনা ঘটানোর উদ্দেশ্যেই প্রতীককে নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন প্রসূন ও প্রণয়। আত্মহত্যাই লক্ষ্য ছিল তাঁদের। এই ঘটনায় মোট চারজনের গোপন জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে। তাঁরা হলেন, প্রণয় দে, বাড়ির কিশোর সদস্য প্রতীক, দে পরিবারের এক আত্মীয় ও অন্য আর একজন। সাক্ষী হিসেবে পুলিশ প্রতীকের নাম উল্লেখ করেছে।