কলকাতার শহরজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বহু পুরনো বাড়ি যেন একেকটি গল্পের পাতা। কারও মধ্যে আছে ব্রিটিশ আমলের ছোঁয়া, আবার কেউ কেউ সাক্ষী থেকেছে স্বাধীনতা আন্দোলনের। এইসব ঐতিহ্যবাহী বাড়িগুলিকে ঠিকঠাকভাবে রক্ষা করতে এবার কলকাতা পুরসভা নতুন নিয়ম চালু করেছে। এই নিয়ম অনুযায়ী, শহরের গ্রেড ২এ, গ্রেড ২বি এবং গ্রেড ৩এ শ্রেণির হেরিটেজ ভবনে কোনও রকমের মেরামতি, পরিবর্তন বা পুনর্গঠন করতে হলে নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া মেনে চলতে হবে।
পুরসভা জানিয়েছে, গ্রেড ১ শ্রেণিভুক্ত যেসব ভবনের ঐতিহাসিক গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি, সেগুলির জন্য আরও কঠোর এবং আলাদা নিয়ম থাকছে। আর এই পুরো ব্যবস্থাটিকে আরও স্বচ্ছ ও সহজ করতে পুরসভা তাদের ‘ই-কেএমসি ডিজিটাল সিস্টেম’-এ কিছু নতুন পরিবর্তন এনেছে।
নতুন নিয়মে বলা হয়েছে, কোনও হেরিটেজ বাড়িতে কাজ করার আগে প্রস্তাবটি জমা দিতে হবে পরিবেশ ও ঐতিহ্য বিভাগে। এই প্রস্তাবে থাকতেই হবে বাড়িটির ইতিহাস, তার গুরুত্ব, আগে ও এখন কীভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে, কে মালিক, কী ধরনের রক্ষণাবেক্ষণ হয়েছে, এবং ঠিক কী কাজ করতে চাওয়া হচ্ছে, সেইসব বিশদ বিবরণ। সঙ্গে জমা দিতে হবে ছবি, আইনি তথ্য, একটি তদন্ত রিপোর্ট ও প্রস্তাবিত কাজের প্ল্যান।
এইসব নথি হাতে পেয়ে প্রথমে বিল্ডিং বিভাগ একটি প্রাথমিক পরীক্ষা করবে। এরপর সেই রিপোর্ট যাবে হেরিটেজ সংরক্ষণ কমিটির কাছে। কমিটি সব খুঁটিনাটি দেখে সুপারিশ পাঠাবে, আর শেষে সেই সুপারিশ যাবে মেয়র পরিষদের কাছে। তাঁরাই চূড়ান্ত অনুমোদন দেবেন। অনুমোদন পেলে আবেদনকারীকে জানানো হবে এবং কাজ শুরু করার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র বিল্ডিং বিভাগে পাঠানো হবে।
গ্রেড ১ ভবনের ক্ষেত্রে প্রক্রিয়াটা একটু অন্যরকম। এই ধরনের ঐতিহ্যবাহী ভবনের প্রস্তাব সরাসরি জমা পড়বে পরিবেশ ও ঐতিহ্য বিভাগে। সেখানে হেরিটেজ সংরক্ষণ কমিটির পরামর্শ মেনে মেয়র পরিষদের অনুমোদন বাধ্যতামূলক। কারণ, এই ভবনগুলোর ঐতিহাসিক গুরুত্ব অনেক বেশি, তাই নিয়ন্ত্রণও থাকবে আরও কড়া।
পুরসভা চায়, শহরের পুরনো স্মৃতি আর স্থাপত্যের গর্ব যেন সময়ের সঙ্গে হারিয়ে না যায়। বরং তা যেন ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছেও গর্বের বিষয় হয়ে থাকে।