কলকাতার দুই গুরুত্বপূর্ণ উড়ালপুলে শুরু হচ্ছে বড়সড় সংস্কার

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

দীর্ঘদিনের ‘ব্যথাহরা’ পদ্ধতি আর কার্যকর নয়। শহরের দু’টি ব্যস্ততম উড়ালপুল— এজেসি বসু রোড উড়ালপুল এবং গড়িয়াহাট উড়ালপুল এ বার সম্পূর্ণ সংস্কারের পথে হাঁটছে হুগলি রিভার ব্রিজ কমিশনার্স (এইচআরবিসি)। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, উপরে পিচ চাপিয়ে সাময়িক সমাধান নয়, কাঠামোর মূল অংশেই হাত দেওয়া প্রয়োজন। এজন্য প্রয়োজন হবে কয়েক দিনের সম্পূর্ণ যানবাহন নিষেধাজ্ঞা এবং প্রায় ১০০ কোটি টাকার বিপুল ব্যয়।

প্রসঙ্গত, বর্ষা বিদায় নেওয়ার পরই শহরের রাস্তাঘাটের ক্ষতচিহ্ন স্পষ্ট হয়েছে। উড়ালপুলও তার ব্যতিক্রম নয়। এজেসি বসু রোড উড়ালপুলের বিস্তীর্ণ জায়গায় পিচ উঠে বেরিয়ে এসেছে নুড়ি। দু’ধার দিয়ে চলতে গিয়ে গাড়ি লাফিয়ে উঠছে। ফলে প্রতিদিনই যানজটে বাড়ছে ভোগান্তি। বিশেষত, এসএসকেএম হাসপাতালের সামনে নেমে আসা অংশে ঝাঁকুনির জন্য রোগীদের অ্যাম্বুল্যান্সও সমস্যায় পড়ছে।

অন্যদিকে, মাত্র ৫৭১ মিটার দীর্ঘ গড়িয়াহাট উড়ালপুলেও একই দুরবস্থা। সর্বত্র পিচ উঠে গর্ত, মাঝ বরাবর বৃহৎ ফাটল, চলার পথে বারবার ধাক্কা— দক্ষিণ কলকাতার অন্যতম ব্যস্ত অংশে এই সমস্যা নিয়মিতই ভোগাচ্ছে হাজার হাজার যাত্রীকে।


এইচআরবিসি-র সেক্রেটারি জ্যোতিষ্মান চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ‘গড়িয়াহাট এবং এজেসি বসু রোড উড়ালপুল, দু’টিকেই পুরোপুরি সারাই করতে চাই। শুধু উপরের প্যাচওয়ার্ক নয়, কাঠামো পর্যন্ত রিস্টোরেশন হবে। এজেসি বসু রোড উড়ালপুলে ব্যয় ধরা হয়েছে ৬০ কোটি,
গড়িয়াহাটে ৩৪ কোটি।’

প্রশাসনের অনুমতি মিললেই কাজ শুরু হবে। বড়সড় কাজ হওয়ায় দিন-রাত মিলিয়ে দীর্ঘ সময় উড়ালপুল বন্ধ রাখতে হতে পারে। এমন আশঙ্কাও প্রকাশ করেছেন তিনি। সাধারণত রাতে সেতু বন্ধ রেখে সংস্কার হয়। কিন্তু এবার সময় লাগবে অনেক বেশি।

এজেসি বসু রোড উড়ালপুলে বৃষ্টির জল জমে থাকে, যা পিচের ক্ষয় বাড়ায়। তাই নতুন সংস্কারে নিকাশি ব্যবস্থার আধুনিকীকরণকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। পাশাপাশি স্ল্যাবের নীচের বিয়ারিংও পাল্টানো হবে।

এদিকে যাদবপুর–বাইপাস সংযোগকারী জীবনানন্দ সেতুতেও ভয়াবহ পরিস্থিতি ধরা পড়েছে। ফুটপাতের ধারে গর্ত হয়ে নিচের দৃশ্য দেখা যাচ্ছে। যে কোনও সময়ে বড় দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। যদিও পুরসভা জানিয়েছে, উড়ালপুল সংস্কারের দায়িত্ব তাদের নয়, প্রয়োজনীয় তথ্য এইচআরবিসি-কে পাঠানো হয়েছে।

দীর্ঘদিন ধরে অবহেলা, বর্ষায় ক্ষয় ও যান্ত্রিক চাপ— সব মিলিয়ে কলকাতার একাধিক উড়ালপুলের অবস্থাই বেহাল। বিশেষজ্ঞদের মতে, এবার যথাযথ সংস্কার না হলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়বে। তাই বড়সড় অস্ত্রোপচারই হবে সময়োচিত সিদ্ধান্ত।