বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে বেছে বেছে বাঙালি নিগ্রহের খবর উঠে আসছে নিয়মিত। বাংলা ভাষার এহেন অপমানে ক্ষুব্ধ বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এর প্রতিবাদে তিনি রাস্তায় নেমেছেন, ডাক দিয়েছেন নতুন ভাষা আন্দোলনের। এবার সেই আন্দোলনের পথে একপ্রকার প্রশাসনিক পদক্ষেপ নিল কলকাতা পুরসভা। বাংলা ভাষার মর্যাদা রাখতে শহরের সব বাণিজ্যিক সাইনবোর্ডে বাংলা লেখা আগেই বাধ্যতামূলক করেছিল পুরসভা। তবে এবার আরও কড়া মনোভাব নিচ্ছে পুরসভা।
শুক্রবার ‘টক টু মেয়র’ অনুষ্ঠানের পরে এই বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে মেয়র ফিরহাদ হাকিম জানান, শহরের অনেক দোকানে এখনও কেবলমাত্র ইংরেজি, হিন্দি এমনকি অসমিয়াতেও হোর্ডিং দেখা যাচ্ছে, অথচ বাংলা লেখা নেই। যা মেনে নেওয়া যায় না। পুরসভার পূর্ববর্তী নির্দেশ অনুযায়ী, অন্য ভাষা থাকতে পারে, কিন্তু বাংলা অবশ্যই থাকতে হবে। এবার সেই নিয়ম কার্যকর করতে মেয়র পুর আধিকারিকদের কড়া নির্দেশ দিয়েছেন, প্রয়োজন হলে ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলেন তিনি।
প্রসঙ্গত, কলকাতা পুরসভা গত বছর একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানায়, শহরের প্রতিটি দোকান, রেস্তোরাঁ বা বাণিজ্যিক অফিসের সাইনবোর্ডে বাংলা ভাষা আবশ্যিক। শেষ সময়সীমা ছিল ২১শে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। কিন্তু সেই নির্দেশ এখনও অনেকেই মানছেন না বলেই অভিযোগ উঠছে।
এই ভাষা সচেতনতার জোয়ারই যেন দেখা গেল শুক্রবার পুরসভা অধিবেশনে। এদিন সমস্ত আলোচনা পরিচালিত হয় বাংলাতেই। যদি ৪৯ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোনালিসা বন্দ্যোপাধ্যায় একটি প্রশ্ন তোলেন ইংরেজিতে। বিষয় ছিল জলের পাইপলাইন লিক, সরবরাহ সমস্যা এবং কর্মী সংকট। তখন সভার চেয়ারপার্সন মালা রায় অনুরোধ করেন, উত্তর যেন বাংলায় দেওয়া হয়। মেয়র নিজেও পরে বলেন, ‘কাউন্সিলর ইংরেজিতে প্রশ্ন করলেও আমি আমার মাতৃভাষা বাংলাতেই উত্তর দিয়েছি।’
পুরসভার শীর্ষ সূত্র জানাচ্ছে, এবার থেকে সব দপ্তরেই মাতৃভাষায় কাজের ওপর জোর দেওয়া হবে। শহরে যেকোনও হোর্ডিং বা সাইনবোর্ডে বাংলা লেখা ঠিকভাবে আছে কি না, তা দেখতে পুরসভা শুরু করবে নিয়মিত নজরদারি। একদিকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে রাজ্যজুড়ে ভাষার মর্যাদার লড়াই, অন্যদিকে প্রশাসনিক স্তরে একের পর এক বাস্তবধর্মী পদক্ষেপে বাংলা ভাষা যে মাথা উঁচু করে বাঁচবে, তারই যেন স্পষ্ট বার্তা মিলছে।