পর্ণশ্রীতে বাবা-মেয়ের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার

বাবা-মেয়ের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়াল বেহালার পর্ণশ্রীতে। শুক্রবার রাত ৮টা নাগাদ একটি অফিস ঘর থেকে তাঁদের দেহ উদ্ধার হয়। পুলিশ সূত্রে খবর, মৃতেরা হলেন স্বজন দাস (৫৩) এবং তাঁর কন্যা সৃজা দাস (২২)। প্রাথমিক তদন্তে অনুমান, মানসিক অবসাদ থেকে আত্মঘাতী হয়েছেন তাঁরা। জন্ম থেকেই অটিজমে আক্রান্ত সৃজা দাস। চিকিৎসার খরচ জোগাতেও হিমশিম খাচ্ছিলেন স্বজনবাবু। সেই কারণে মানসিক অবসাদে ভুগতেন তিনি। সেক্ষেত্রে মেয়েকে খুন করে নিজে আত্মঘাতী হতে পারেন স্বজনবাবু। মৃত্যুর সঠিক কারণ জানতে পুলিশ দেহদুটি ময়নাতদন্তে পাঠিয়েছে। অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।

স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে দক্ষিণ ২৪ পরগনার মহেশতলা থানার নুঙ্গি এলাকায় থাকতেন স্বজনবাবু। বেহালার শকুন্তলা পার্ক লাগোয়া হো-চি-মিন সরণিতে একটি অফিস রয়েছে তাঁর। স্বজন রান্নাঘরের চিমনি, জলের ফিল্টার ইত্যাদি মেরামত এবং বিক্রি করতেন। মাসিক আয় খুব একটা বেশি ছিল না। স্বজনবাবুর মেয়ে সৃজা অটিজমে আক্রান্ত ছিলেন। রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায়, এমনকী রাজ্যের বাইরেও সৃজাকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যেতেন তিনি। কিন্তু তাতেও খুব একটা লাভ হয়নি। সেই কারণে মানসিক অবসাদে ভুগতেন স্বজনবাবু। পুলিশ সূত্রে খবর, একই দড়ির দুই প্রান্তে ফাঁস দেওয়া অবস্থায় উদ্ধার হয় স্বজনবাবু ও সৃজার দেহ। পর্ণশ্রী থানার পুলিশ ও লালবাজারের স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন টিম ঘটনার তদন্ত করছে।

স্বজনবাবুর স্ত্রী জানিয়েছেন, শুক্রবার দুপুরে সৃজাকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়ার নামে তাঁকে নিয়ে বাড়ি থেকে বেরোন স্বজনবাবু। দীর্ঘক্ষণ কেটে গেলে বাবা ও মেয়ের কোনও খোঁজখবর পাওয়া যায়নি। সন্ধে সাতটা নাগাদ স্বজনের বন্ধুবান্ধবদের ফোন করতে শুরু করেন তাঁর স্ত্রী। তাঁরাও ফোনে যোগাযোগ করতে পারেননি। তাঁদের মধ্যেই একজন বেহালার অফিসে খোঁজ নিতে গিয়ে সৃজা ও স্বজনবাবুর ঝুলন্ত দেহ দেখতে পান। ওই ঘরের দরজা ভিতর থেকে বন্ধ করা ছিল না। খবর দেওয়া হয় পুলিশে। রাত ১২টার পর পর্ণশ্রীর বাড়ি থেকে বার করা হয় বাবা এবং মেয়ের দেহ। দড়ি কেটে দেহগুলি নামিয়ে এনেছিল পুলিশ।


ব্যবসা ক্ষেত্রে বা নিজের বাড়ি, দুটি এলাকার বাসিন্দারাই জানিয়েছেন, স্বজনবাবু নির্বিবাদী মানুষ ছিলেন। তবে মেয়েকে নিয়ে চিন্তিত থাকতেন তিনি। কী কারণে দু’জনের মৃত্যু হল, সে বিষয়ে নিশ্চিত হতে ময়নাতদন্তের রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করছেন তদন্তকারীরা। মেয়ে ও স্বামীর মৃত্যুতে ভেঙে পড়েছেন স্বজনবাবুর স্ত্রী। তিনি বলেন, আমাকে বলেছিল মেয়েকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাচ্ছে। দুপুর পেরিয়ে সন্ধে নামলেও ওরা ফেরেনি। অনেক জায়গায় ফোন করি। খোঁজখবর করতে গিয়ে ওই দৃশ্য দেখতে পাই। কীভাবে কী হয়ে গেল, বুঝতে পারছি না।