শহর ও আশপাশে ফ্ল্যাট কিংবা জমি কেনার পরিকল্পনা থাকলে এবার ক্রেতাদের ট্যাঁক থেকে বাড়তি টাকা গুনতে হবে। টানা সাত বছরের বিরতির পর রাজ্য সরকার ফের বাড়িয়ে দিল সম্পত্তির সার্কেল রেট। ফলে ক্রেতাদের পাশাপাশি বিক্রেতাদের উপরেও আর্থিক চাপ বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
সরকারি বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, এলাকা ভেদে সার্কেল রেট এক লাফে ১৫ শতাংশ থেকে ৯০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। বুধবার থেকে কার্যকর হওয়া এই সিদ্ধান্তে স্ট্যাম্প ডিউটি ও রেজিস্ট্রেশন ফি বাবদ সরকারের রাজস্ব আয় বাড়বে। কিন্তু বাজারে লেনদেনের গতি কিছুটা শ্লথ হতে পারে বলেই রিয়েল এস্টেট মহলের আশঙ্কা।
জানা গিয়েছে, সল্ট লেক সংলগ্ন মাহিষবথানে প্রতি বর্গফুটে মূল্য এক ধাক্কায় প্রায় ৮৭% বেড়ে হয়েছে ১২,০৬৫ টাকা। বরানগরে বি.টি. রোডের সার্কেল রেট দ্বিগুণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ৮,৮৫০ টাকা। টলিগঞ্জে বেড়ে হয়েছে ১০,২১২ টাকা, বেহালার বড়িশায় ৭,০৯৫ টাকা, সোনারপুরে ৬,২৩৭ টাকা, নিউটাউনে ৬,২০৯ টাকা আর তপসিয়ায় প্রায় ১০ হাজার টাকার কাছাকাছি। এভাবে একাধিক জায়গায় সরকারি সার্কেল রেট বাজারদরের সমান কিংবা তার থেকেও ওপরে পৌঁছে গিয়েছে।
রিয়েল এস্টেট বিশেষজ্ঞদের মতে, এখন প্রচুর সংখ্যায় তিন বেডরুম ফ্ল্যাট ও কিছু দুই বেডরুম ফ্ল্যাটের মূল্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে ১ কোটির গণ্ডি পেরিয়ে যাবে। এর ফলে ক্রেতাদের স্ট্যাম্প ডিউটি ৬% থেকে বেড়ে ৭% হবে। অন্যদিকে, বিক্রেতাদের সমস্যা আরও জটিল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ বাজারদর যদি সার্কেল রেটের নিচে থাকে, আয়কর দপ্তর সেটিকে কালো টাকা হিসেবে ধরে নিয়ে কর দাবি করতে পারে।
নবান্নের ব্যাখ্যা, বাজারমূল্য ও সরকারি নির্ধারিত মূল্যের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে যে বিশাল ফারাক তৈরি হয়েছিল, সেটি ঘোচাতেই এই পদক্ষেপ। সরকারের দাবি, এতে রাজস্ব বৃদ্ধি এবং সম্পত্তি কেনাবেচায় স্বচ্ছতা আসবে। শহর পরিকল্পনা, পরিকাঠামো উন্নয়ন ও জনস্বার্থমূলক প্রকল্পের কাজে অতিরিক্ত রাজস্ব খরচ হবে।
ডেভেলপাররা আশঙ্কা করছেন, স্বল্পমেয়াদে ফ্ল্যাট কেনার প্রবণতা ক্রমশ কমে যাবে। তবে অর্থনীতিবিদদের মতে, দীর্ঘমেয়াদে এতে বাজারে জবাবদিহি বাড়বে এবং রিয়েল এস্টেট ব্যবসা আরও নিয়মতান্ত্রিক পথে এগোবে।
সাত বছর পরের এই সার্কেল রেট বৃদ্ধি তাই একদিকে যেমন সরকারের পক্ষে রাজস্ব বৃদ্ধির হাতিয়ার, তেমনি সাধারণ ক্রেতা-বিক্রেতার জন্য নতুন দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।