বারুইপুরে এসআইআর বিতর্কে উত্তেজনা, পাঁচজনকে শোকজ

সোমা সেন।

দক্ষিণ ২৪ পরগনার বারুইপুর পূর্ব বিধানসভা এলাকায় ভোটার তালিকার স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশন বা এসআইআর প্রক্রিয়ায় অনিয়মের অভিযোগ ঘিরে শুরু হয়েছে ব্যাপক রাজনৈতিক বিতর্ক। অভিযোগ, নিয়ম না–মেনে তৃণমূল সমর্থিত পঞ্চায়েত সদস্যাকে প্রথমে বিএলও হিসেবে নিয়োগ করা হয়। পরে তাঁকে সরালেও আবার তাঁর জায়গায় আসা নতুন বিএলও-র বদলে তাঁরই ঘনিষ্ঠ আত্মীয়া মাঠে নেমে এসআইআর-এর কাজ সামলেছেন।

এই ঘটনার জেরে সংশ্লিষ্ট তিন বিএলও-সহ মোট পাঁচজনকে শোকজ করেছে নির্বাচন কমিশন। ইআরও এবং এইআরও–র কাছেও কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠানো হয়েছে। প্রশাসন সূত্রের খবর, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তাঁদের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

হাড়দহ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার ৯৪ নম্বর বুথে প্রথমে বিএলও-র দায়িত্ব দেওয়া হয় সোমা সেনকে। তিনি রামনগর-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্য, আবার হাড়দহের একটি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের কর্মী।


সোমা সেনের দাবি, তিনি দায়িত্ব না নেওয়ার আর্জি জানিয়েছিলেন। কারণ তিনি রামনগরের বাসিন্দা এবং রাজনৈতিক পরিচয় থাকায় আপত্তি তুলেছিলেন। তবু তাঁর কথায় কান দেয়নি বিডিও’র দপ্তর। তিনি বলেন, ‘আমি জানিয়েছিলাম আমার কাজ করতে অসুবিধা হবে। কিন্তু কেউ গুরুত্ব দেয়নি। তার পর ২৫ দিন নিরপেক্ষভাবে কাজ করেছি।’

৪ নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া এসআইআর-এর মধ্যে তাঁর রাজনৈতিক পরিচয় প্রকাশ্যে আসতেই অভিযোগ পৌঁছয় নির্বাচন কমিশনের কাছে। অভিযোগ খতিয়ে দেখে তাঁকে বিএলও পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় এবং শোকজ করা হয়।

সোমা সেনকে সরিয়ে দায়িত্ব দেওয়া হয় দেবী হালদারকে। কিন্তু তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ হওয়ায় তাঁর হয়ে কাজ করেন তাঁর জা রমা হালদার। রমা হালদার আবার নিজেই ওই গ্রাম পঞ্চায়েতের ৯৬ নম্বর বুথের বিএলও।

রমার দাবি, ‘দেবী হালদার অসুস্থ। ও কিছু বুঝতেন না। আমাকে আগেই বলা হয়েছিল কাজ করতে।’ অন্যদিকে দেবী হালদারও স্বীকার করেছেন, তিনি দায়িত্ব পেলেও কাজ করেননি।

এই অবস্থায় একই পরিবারের সদস্য ও রাজনৈতিক পরিচয়যুক্ত ব্যক্তিদের দিয়ে বিএলও–র কাজ করানো নিয়ে কমিশন প্রশ্ন তুলেছে। এই ঘটনার জেরে তিন পক্ষের রাজনৈতিক তরজা তুঙ্গে।

বিজেপির অভিযোগ, তৃণমূলের মদতেই এই অনিয়ম হয়েছে। বিজেপির যাদবপুর সাংগঠনিক জেলার সহ সভাপতি দিলীপ হালদারের প্রশ্ন, ‘৯৪ নম্বর বুথে তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্যকে দায়িত্ব দেওয়া হল কেন? বিজেপির বিএলএ–রা কাজ করতে পারেনি। তৃণমূল ক্যাডারদের দিয়ে কি জেনে শুনে এসআইআর প্রক্রিয়া ভন্ডুল করা হয়েছে?’

সিপিআইএম নেতা লাহেক আলির অভিযোগ, তৃণমূল-বিজেপি উভয়েই প্রকৃত ভোটার বাদ দিয়ে ভোটার তালিকা নিয়ে কারসাজি করতে চাইছে। তাঁর কথায়, ‘ভুয়ো ভোটাররা বাদ যাচ্ছে না। একজন বিএলও-কে সরিয়ে অসুস্থ ব্যক্তিকে বসানো হয়েছে। সব কিছুই দুর্নীতির চক্র।’

অন্যদিকে, তৃণমূল কংগ্রেস দায় চাপিয়েছে নির্বাচন কমিশনের উপর। বারুইপুর ব্লক তৃণমূল সভাপতি শ্যামসুন্দর চক্রবর্তী বলেন, ‘সোমা সেন প্রথম থেকেই বলেন, তিনি এখানে কাজ করতে পারবেন না। তবু তৎকালীন বিডিও তাঁকে কাজ করতে বাধ্য করেছেন। এসআইআর-এর উদ্দেশ্য প্রকৃত ভোটার বাদ দেওয়া, ভুয়ো নয়।’

যদিও বারুইপুরের বিডিও পন্না দে বলেন, ‘কমিশন যাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে, তাঁরা নিজেদের জবাব দেবেন। এ বিষয়ে আমি কোনও মন্তব্য করব না।’