অসমের জনপ্রিয় সঙ্গীত শিল্পী জুবিন গর্গের রহস্যজনক মৃত্যুর তদন্তে বড় সাফল্যের দাবি করল বিশেষ তদন্তকারী দল বা এসআইটি (সিট)। দীর্ঘ দুই মাসের অনুসন্ধানের পর শুক্রবার গুয়াহাটির চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে প্রায় ৩৫০০ পাতার বিশালাকার চার্জশিট পেশ করেছে। এই চার্জশিট পেশের সঙ্গে-সঙ্গেই বহু প্রতীক্ষিত মামলাটি বিচারপর্বে প্রবেশের দিকে আরও এক ধাপ অগ্রসর হল।
এফআইআর নম্বর ১৮/২০২৫-এর আওতায় দাখিল হওয়া এই চার্জশিট আদালতে জমা দেন সিট-এর সদস্য রোজি কলিতা। সেই সময় উপস্থিত ছিলেন তদন্তকারী দলের ঊর্ধ্বতন আধিকারিকরাও। প্রসঙ্গত, এসআইটি-র নেতৃত্বে ছিলেন এসডিজিপি মুন্না প্রসাদ গুপ্তা। তাঁর সঙ্গে তদন্তে যুক্ত ছিলেন মোরোমী মেধি ও ন্যাব ডেকাই। তদন্তকারী দলের সদস্যদের দাবি, এই বিশাল নথিতে গত কয়েক মাসে সংগ্রহ করা ফরেনসিক তথ্য, সাক্ষ্য, ডিজিটাল প্রমাণ, ঘটনাক্রম পুনর্গঠনের বিশদ বিবরণসহ অসংখ্য প্রমাণ যুক্ত করা হয়েছে।
এই চার্জশিট দাখিলের খবর ছড়িয়ে পড়তেই আদালত চত্বরে জড়ো হন শতাধিক অনুরাগী। অনেকেই হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে দাঁড়ান। ‘জাস্টিস ফর জুবিন’ স্লোগানে সোচ্চার সমর্থকদের আবেগঘন অবস্থান এদিন স্পষ্টভাবে চোখে পড়ে। অনলাইনে একই শিরোনামে চলা আন্দোলনও সাম্প্রতিক সময়ে আরও জোরদার করা হয়েছে।
এসআইটি সূত্রে জানা গিয়েছে, তদন্তপর্বে ৩০০-রও বেশি মানুষকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে, যার মধ্যে ছিলেন অনুষ্ঠানের আয়োজক, সহকর্মী, সহযোগী, সংশ্লিষ্ট কর্মী এবং প্রত্যক্ষদর্শীরা। তাঁদের বয়ানের ভিত্তিতেই ঘটনাক্রম পুনঃনির্মাণের চেষ্টা করেছে তদন্তকারী দল।
এই মামলায় এখনও পর্যন্ত মোট সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁরা হলেন অনুষ্ঠান আয়োজক শ্যামকানু মহন্ত, ম্যানেজার সিদ্ধার্থ শর্মা, সঙ্গীতশিল্পী অমৃতপ্রভা মহন্ত, বাদ্যযন্ত্রী শেখর জ্যোতি গোস্বামী, জুবিন গর্গের আত্মীয় এবং ডিএসপি সন্দীপন গর্গ, নিরাপত্তারক্ষী পরেশ বৈশ্য এবং নন্দেশ্বর বোরা। বর্তমানে সাতজন বিচারক হেফাজতে রয়েছেন।
এসআইটি প্রধান মুন্না প্রসাদ গুপ্তা বলেন, চার্জশিট দাখিলের মধ্য দিয়ে তদন্তের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ সম্পন্ন করা হয়েছে। এখন মামলাটির বিচারপর্ব শুরু হবে এবং আদালতই পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে। তাঁর কথায়, ফরেনসিক রিপোর্ট, সাক্ষ্য, ডিজিটাল নথি এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ উপাদান এই চার্জশিটে সংযুক্ত করা হয়েছে, যা মামলার বিচার প্রক্রিয়ায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে।
উল্লেখ্য, জনপ্রিয়তার দিক থেকে অসমের সাংস্কৃতিক জগতে অদ্বিতীয় জুবিন গর্গের মৃত্যু ঘিরে রাজ্য তথা দেশজুড়ে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। হঠাৎ মৃত্যুর ঘটনায় তাঁর অনুরাগীরা যে আঘাত পেয়েছিলেন, সেখান থেকে এখনও বেরিয়ে আসতে পারেননি। চার্জশিট দাখিলের পর মামলার আইনি পথ কিছুটা স্পষ্ট হলেও জুবিন-ভক্তরা চান, পুরো ঘটনায় ‘সত্য’ সামনে উঠে আসুক এবং নিরপেক্ষভাবে যেন মামলার বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়।