শিশুমৃত্যুতে ঘুম ভাঙল যোগী সরকারের, জাল ওষুধ-কাণ্ডে গ্রেপ্তার ১০৩

প্রতীকী চিত্র

দেশে ফের মাথাচাড়া দিয়েছে নিম্নমানের ও জাল ওষুধের বিপজ্জনক কারবার। কেন্দ্র ও রাজ্যের ফুড সেফটি অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন থাকা সত্ত্বেও বিদেশে নিষিদ্ধ বহু ওষুধই রমরমিয়ে বিকোচ্ছে ভারতে। মধ্যপ্রদেশ ও রাজস্থানে কাশির সিরাপ খেয়ে শিশুমৃত্যুর ঘটনার পর এবার তৎপর হয়েছে উত্তরপ্রদেশ। রাজ্যে জাল ওষুধ চক্রের সঙ্গে যুক্ত ১০৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে নিম্নমানের ৮৫০টিরও বেশি ওষুধ।

সম্প্রতি সিরাপকাণ্ডে শিশুমৃত্যুর পর বুধবার সমস্ত রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিকে কড়া নির্দেশ দেয় কেন্দ্র। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য দপ্তরের অধীনস্থ সংস্থা ‘দ্য ডিরেক্টরেট জেনারেল অফ হেলথ সার্ভিস’ জানিয়েছে, রাজ্যগুলির ওষুধ নিয়ন্ত্রক দপ্তরগুলিকে নিশ্চিত করতে হবে যে, বাজারে বিক্রি হওয়া প্রতিটি ওষুধের গুণমান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। উত্তরপ্রদেশ এফএসডিএ সূত্রে জানা গিয়েছে, গত এক বছরে পরীক্ষিত ২০ হাজার ওষুধের মধ্যে ১৬ হাজার ২৮৯টি মান নিয়ন্ত্রণ পরীক্ষায় পাশ করলেও ৮৫৮টি ওষুধ ব্যর্থ হয়েছে। তার মধ্যে ৬৫২টি নিম্নমানের, ১১৫টি বিষাক্ত এবং ৯১টি ওষুধের কোনও প্রস্তুতকারক সংস্থার নামই ছিল না।

এফএসডিএ-র তথ্য বলছে, শুধু উত্তরপ্রদেশেই গত এক বছরে ৩০ কোটির বেশি টাকার জাল ওষুধ বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। গুরুতর অভিযোগের ভিত্তিতে এক হাজারেরও বেশি ডিলারের লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে। গ্রেপ্তার হয়েছেন ৬৮ জন। সবচেয়ে বেশি জাল ওষুধ উদ্ধার হয়েছে লখনউ, গাজিয়াবাদ ও আগ্রা থেকে।


এদিকে, মধ্যপ্রদেশের ছিন্দওয়ারা ও রাজস্থানের শিকার জেলায় কাশির সিরাপ ‘কোল্ডরিফ’ খাওয়ার পর একের পর এক শিশুমৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। সামান্য জ্বরের পরই কিডনি বিকল হয়ে মৃত্যু হচ্ছে শিশুদের। মধ্যপ্রদেশে মৃত শিশুর সংখ্যা ইতিমধ্যেই ১৪। রাজ্য সরকার ‘কোল্ডরিফ’ বিক্রি নিষিদ্ধ করেছে। গ্রেপ্তার করা হয়েছে এক চিকিৎসককেও। পরীক্ষায় ধরা পড়েছে, ওই সিরাপে রয়েছে ৪৮.৬ শতাংশ ডাইথিলিন গ্লাইকল নামক এক বিষাক্ত রাসায়নিক, যা শিশুদের কিডনি বিকল করে দিতে পারে।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ধরনের ঘটনা ইঙ্গিত দেয় যে, ওষুধ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার দুর্বলতা আজও দূর হয়নি। তাঁরা জানিয়েছেন, ‘যতক্ষণ পর্যন্ত কঠোর মান নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা গড়ে না তোলা যায় এবং নিয়মিত পরীক্ষার অভ্যাস তৈরি না হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত এই বিপদ থেকেই যাবে।’