‘দাগি’ মন্ত্রী বা মুখ্যমন্ত্রীদের গদি থেকে সরানোর প্রস্তাবিত বিল নিয়ে এখন দেশের রাজনৈতিক মহল সরগরম। কিন্তু আদৌ কি বিলটি আইনে পরিণত করতে পারবে কেন্দ্র? কারণ সংখ্যার হিসেব বলছে, মোদি সরকারের জন্য এই পথ একেবারেই সহজ নয়।
এদিকে লোকসভা ও রাজ্যসভায় বিলটি পেশ হলেও ভোটাভুটির দিকে এগোয়নি সরকার। আপাতত বিলটি পাঠানো হয়েছে যৌথ সংসদীয় কমিটিতে আলোচনার জন্য। কারণ, সাংবিধানিক সংশোধনী করতে হলে দুই কক্ষে দুই-তৃতীয়াংশ সাংসদের সমর্থন প্রয়োজন, যা এই মুহূর্তে এনডিএ-র নাগালের বাইরে।
লোকসভায় মোট ৫৪২টি আসনের মধ্যে এনডিএ জোটের হাতে রয়েছে প্রায় ২৯৩টি আসন। সংবিধান সংশোধনের জন্য প্রয়োজন অন্তত ৩৬১টি ভোট। এনডিএর বাইরে থাকা সব দল—যেমন বিজেডি, ওয়াইএসআর কংগ্রেস বা বিআরএস—সমর্থন করলেও এই সংখ্যা পূরণ করা সম্ভব নয়। একই ছবি রাজ্যসভাতেও, যেখানে মোট কার্যকর সদস্য সংখ্যা ২৩৯ হলেও সমর্থন প্রয়োজন ১৬০ জনের। এনডিএ’র হাতে বর্তমানে ১৩২ জন সদস্য থাকায় সেখানেও ঘাটতি স্পষ্ট। অর্থাৎ বিরোধী শিবিরে ব্যাপক ভাঙন না ঘটলে বা কোনও বড় দল এনডিএকে সমর্থন না দিলে বিলটি পাশ করানো কার্যত অসম্ভব।
সংবিধান সংশোধনের আরও একটি বাধা হল যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো। ধরা যাক, কোনওভাবে বিলটি লোকসভা ও রাজ্যসভা পেরিয়ে গেল। তবুও তা কার্যকর করতে দেশের অন্তত অর্ধেক রাজ্যের বিধানসভায় বিলটি অনুমোদন করাতে হবে। বিজেপি যেসব রাজ্যে ক্ষমতায় রয়েছে, সেসব রাজ্যে সমর্থন পাওয়া সহজ হলেও বিরোধী শাসিত রাজ্যগুলিতে তা নিয়ে তীব্র রাজনৈতিক সংঘাত তৈরি হতে পারে।
বিলটিতে বলা হয়েছে, কোনও প্রধানমন্ত্রী, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এবং মন্ত্রীপদে থাকা কেউ যদি গুরুতর অপরাধে অভিযুক্ত হয়ে ৩০ দিনের বেশি জেলে থাকেন, তাহলে তিনি স্বয়ংক্রিয়ভাবে পদচ্যুত হবেন। এই প্রস্তাবকে ঘিরে বিরোধীরা অভিযোগ করছে, কেন্দ্র এই আইনকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করবে। বিশেষ করে রাজ্যগুলির বিরোধী মুখ্যমন্ত্রী বা মন্ত্রীদের টার্গেট করতে তা কাজে লাগানো হবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বিলটি আপাতত সরকারের পক্ষে রাজনৈতিক বার্তা দেওয়ার হাতিয়ার হিসেবে কাজ করছে। দুর্নীতিবিরোধী লড়াইয়ের সুরকে সামনে রেখে বিজেপি আগামী নির্বাচনে প্রচারে এটিকে ইস্যু ব্যবহার করবে। তবে সংখ্যার অঙ্কের বাস্তবতা বলছে, বিলটি এখনই আইনে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ।
উল্লেখ্য, বুধবারই লোকসভায় তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিল পেশ করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল প্রশাসন সংশোধনী বিল ২০২৫, সংবিধানের ১৩০ তম সংশোধনী বিল ২০২৫ এবং জম্মু ও কাশ্মীর পুনর্বিন্যাস সংশোধনী বিল ২০২৫। ওই বিলগুলি মূলত সংবিধান সংশোধনের লক্ষ্যে আনা হয়েছে। ওই বিলে গুরুতর অপরাধের সঙ্গে জড়িত কোনও মন্ত্রী বা প্রধানমন্ত্রী বা মুখ্যমন্ত্রী নিজের পদের জন্য সাংবিধানিক রক্ষাকবচ না পান, সেটাই নিশ্চিত করা হবে। প্রস্তাবিত ওই বিলে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বা কোনও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এবং মন্ত্রীপদে আসীন অবস্থায় কেউ যদি গুরুতর অপরাধে ৩০ দিনের বেশি জেলে থাকেন, তাহলে তাঁকে পদ থেকে অপসারণ করা হবে।