‘পর্যটক ছাড়া আমরা অসম্পূর্ণ’, আক্ষেপ শাল বিক্রেতা সাজাদের

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

পহেলগাম কাণ্ডের জেরে হতাশ কাশ্মীরের উপত্যকাবাসী। কিছুটা কৃষিকাজ হলেও মূলত এখানকার পর্যটন শিল্পের ওপর নির্ভর করে তাঁদের রুটি-রুজি। কিন্তু মঙ্গলবার ভয়াবহ জঙ্গি হামলার জেরে কাশ্মীরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগের চেয়ে নিজেদের প্রাণ বাঁচানোই এখন প্রধান চিন্তা হয়ে দাঁড়িয়েছে পর্যটকদের কাছে। অনেকেই কাশ্মীর থেকে ফিরে আসছেন। অনেকেই যাঁরা আগামীতে যাবেন বলে বুকিং করেছিলেন বিভিন্ন ভ্রমণ সংস্থায়, তাঁরা বুকিং বাতিল করে দিয়েছেন। ফলে রোজগারের পথ বন্ধ হয়ে গিয়েছে উপত্যকার মানুষের।

কার্যত মঙ্গলবারের ঘটনার পর এদিন রাত থেকে পহেলগাঁওয়ের রাস্তায় প্রতিবাদে নেমেছেন বহু স্থানীয় মানুষ। মোমবাতি নিয়ে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে মিছিল করছেন তাঁরা। নিরীহদের হত্যার বিরুদ্ধে সেই মিছিল থেকে কাশ্মীরিরা স্লোগান তোলেন, ‘হিন্দুস্তান জিন্দাবাদ’, ‘আমরা ভারতীয়’। এদিকে পহেলগাঁওয়ের ঘটনার প্রতিবাদে স্বতঃস্ফূর্তভাবে কাশ্মীরের সাধারণ মানুষকে এগিয়ে আসার জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ। তিনিও দেশবাসীর উদ্দেশে অনুরোধ করেছেন, এই ঘটনার জেরে যেন সাধারণ কাশ্মীরিদের ‘শত্রু’ না-ভাবা হয়।

মঙ্গলবার জঙ্গিদের নির্বিচারে গুলির পরে আহতদের উদ্ধার করতে এগিয়ে এসেছিলেন স্থানীয় আরও অনেকে। তাঁদের মধ্যেই ছিলেন কাশ্মীরি শালবিক্রেতা সাজাদ আহমেদ ভাট। জঙ্গিদের হত্যালীলার পরে এক আহতকে কাঁধে করে হাসপাতালে নিয়ে যান তিনি। সেই ভিডিও ভাইরাল হয়েছে বিভিন্ন মাধ্যমে। উপত্যকার জীবন-জীবিকার জন্য পর্যটকরা কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা খুব ভালো করেই জানেন এই উপত্যকাবাসী। পহেলগাঁওয়ের বৈসরন উপত্যকায় গোলাগুলি থেমে যাওয়ার পরে সাজাদ এবং আরও অনেকে ঘটনাস্থলে পৌঁছে যান আহত পর্যটকদের উদ্ধার করতে। সাজাদের কথায়, ‘ওদের (পর্যটক) ছাড়া আমাদের জীবন অসম্পূর্ণ।’


একটি সংবাদ সংস্থাকে ওই শালবিক্রেতা জানিয়েছেন, ওই দিন তাঁরা যখন ঘটনাস্থলে পৌঁছন, তখন দুপুর প্রায় তিনটে বাজে। পর্যটকদের জন্য জলের ব্যবস্থা করেন তাঁরা। যাঁরা হাঁটার মতো অবস্থায় ছিলেন না, তাঁদের কাঁধে করে হাসপাতালে নিয়ে যান। তিনি আরও বলেন, ‘যখন আমি পর্যটকদের কাঁদতে দেখছিলাম, তখন আমার চোখেও জল চলে আসছিল। তাঁরা আসেন বলেই আমাদের ঘরে আলো জ্বলে— তাঁদের ছাড়া আমাদের জীবন অসম্পূর্ণ।’

প্রসঙ্গত মঙ্গলবার জঙ্গিদের হত্যালীলার বলি ২৬ জনের মধ্যে ২৫ জনই ছিলেন পর্যটক। শুধুমাত্র এক জন ছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা। নাম সইদ আদিল হুসেন শাহ। পহেলগাঁওয়ে আসা পর্যটকদের ঘোড়ার পিঠে চাপিয়ে ঘোরাতেন আদিল। পহেলগাঁওয়ের এই বাসিন্দা ঘটনার দিন জঙ্গিদের আগ্নেয়াস্ত্র কেড়ে নিতে গেলে নৃশংসভাবে হত্যা করে তাঁকে।