বিক্ষোভে উত্তাল উত্তরপ্রদেশ, মৃত ৬

বিক্ষোভে উত্তাল উত্তরপ্রদেশ, মৃত ৬। (Photo: Twitter/@snehanshus)

সংশােধিত নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে শুক্রবারও উত্তাল সারা দেশ। এর মধ্যে উত্তরপ্রদেশের বিক্ষোভের জেরে প্রাণ হারাল ছয় জন। এ নিয়ে বিক্ষোভে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল মােট সাত। সূত্রের খবর, বিজনৌরে দু’জন এবং সম্বল, ফিরােজাবাদ, মেরঠ ও কানপুরে একজন করে বিক্ষোভকারীর মৃত্যু হয়েছে। তবে এই সব জায়গায় গুলি চালানাের বিষয়টি সম্পূর্ণ অস্বীকার করে পুলিশের দাবি বিক্ষোভকারীদের মধ্যে থেকেই গুলি চলেছে।

সরকারি আজ্ঞা এদিন অগ্রাহ্য করে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে উত্তর প্রদেশের একাধিক জায়গা। সংশােধিত নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে এদিন সকালে বুলন্দশহর, গােরক্ষপুর সহ একাধিক জায়গায় পথে নামে বিক্ষোভকারীরা। পরিস্থিতি সামাল দিতে গেলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন বিক্ষোভকারীরা। সেই সঙ্গে চলে ব্যাপক ভাঙচুর, আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় একাধিক গাড়িতে। শুক্রবার রণক্ষেত্র হয়ে ওঠে দিল্লিও। দিল্লি গেটের কাছে ভীম আর্মির প্রতিবাদ মিছিল আটকালে পুলিশের সঙ্গে খন্ডযুদ্ধ বাঁধে।

জুম্মাবারের নামাজ শেষ হতেই নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠল দিল্লির জামা মসজিদ চত্বর। ভীম আর্মির তরফে জামা মসজিদ থেকে যন্তর মন্তর পর্যন্ত মিছিলের অনুমতি চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু তা না মেলায় মসজিদের সামনের রাস্তাতেই উত্তাল বিক্ষোভ শুরু হয়। উপস্থিত রয়েছেন ভীম আর্মির প্রধান চন্দ্রশেখর আজাদও। পরিস্থিতি সামাল দিতে দিল্লিার তিনটি মেট্রো স্টেশনে ঢোকা-বেরনাে বন্ধ করে দিয়েছে প্রশাসন। কার্যত স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে রাজধানীর মেট্রো পরিষেবা।


উত্তরপ্রদেশের নানা শহরে সকাল থেকেই চলছিল বিক্ষোভ। বুলন্দশহরের এমনই এক বিক্ষোভ জমায়েতের ওপর গুলি চালায় যােগী আদিত্যনাথের পুলিশ। এই ঘটনায় ৮ জন গুরুতর আহত হয়েছে। তাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে হাসপাতাল সূত্রে খবর।

নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে লাল কেল্লা চত্বরেও। সেখানে ছাত্র-যুবদের বড় জমায়েত হয়েছে বলে খবর। এদিন নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ আছড়ে পড়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের বাড়ির দোরগােড়ায়। কংগ্রেসের সেই বিক্ষোভ থেকে আটক করা হয় দিল্লি কংগ্রেসের অন্যতম মুখপাত্র তথা প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখােপাধ্যায়ের মেয়ে শর্মিষ্ঠা মুখােপাধ্যায়কে।

এদিন কংগ্রেসের উদ্যোগে এই বিক্ষোভ চলছিল। অমিত শাহের বাড়ির কাছে মিছিল পৌঁছতেই একাধিক কংগ্রেস কর্মীকে আটক করে পুলিশ। তাদের নিয়ে যাওয়া হয়েছে দিল্লির মন্দির মার্গ থানায়।

শর্মিষ্ঠা সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে জানিয়েছেন, ‘এই সরকার ফ্যাসিবাদী মনােভাব নিয়ে চলছে। একদিকে সংবিধানকে লঙঘন করছে। আর তার প্রতিবাদ করলেই পুলিশ দিয়ে গ্রেফতার করাচ্ছে। সেই সঙ্গে প্রণব-কন্যা আরও বলেন, ‘এই আন্দোলন এখানেই থামছে না। যে আন্দোলন তৈরি হয়েছে, আগামী দিনে তা আরও তীব্র হবে’।

গতকালও দিল্লি উত্তাল হয়েছিল বিক্ষোভে। একাধিক বাম নেতা-নেত্রীকে আটক করেছিল পুলিশ। ১৪৪ ধারা উড়িয়ে বিক্ষোভ হয়েছিল যন্তরমন্তরের সামনে। এদিনও ছবিটা বদলাল না।

সংশােধিত নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে বিক্ষোভের ঢেউ এবার আছড়ে পড়ল দিল্লির জামা মসজিদের কাছে। পুলিশের বাধাকে উপেক্ষা করেই ভীম সেনা প্রধান চন্দ্রশেখর আজাদ মসজিদ এলাকায় ওই বিক্ষোভের নেতৃত্ব দেন। বিক্ষোভ ঘিরে এলাকায় চরম উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। জামা মসজিদের মূল ফটকের কাছে সংবিধানের প্রতিলিপি হাতে বিক্ষোভে বিতর্কিত নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে শােনা যায় তাঁকে। পরিস্থিতি সামাল দিতে আটক করা হয় চন্দ্রশেখর আজাদকে। গোটা এলাকায় ড্রোন ক্যামেরা মারফত নজরদারি চালাচ্ছে দিল্লি পুলিশ।

সংসদে পাস হওয়ার পর রাষ্ট্রপতির অনুমােদন প্রাপ্ত সংশােধিত নাগরিকত্ব আইনে বলা হয়েছে, পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে যে সব অমুসলিম মানুষরা ধর্মীয় নিপীড়নের শিকার হয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন, তারা এবার ভারতীয় নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করাতে পারবেন। এই আইনের প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার উত্তাল হয়ে ওঠে দিল্লি। সেই রেশ ধরেই শুক্রবারও রাজধানীতে চলছে প্রতিবাদ আন্দোলন। এবার মধ্য দিল্লির জামা মসজিদের বাইরে পুলিশি নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করেই অসংখ্য মানুষ এর প্রতিবাদে জমায়েত করেছে।

দিল্লি পুলিশ জানিয়েছে যে তাঁরা জামা মসজিদের বাইরে কোনও প্রতিবাদ-বিক্ষোভ করার অনুমতি দেয়নি। কিন্তু তা সত্ত্বেও ওই অঞ্চলে জমায়েত হলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। দিল্লি মেট্রো রেল কর্পোরেশন (ডিএমআরসি) জানিয়েছে, জামা মসজিদ, চাওরি বাজার এবং লাল কেল্লা মেট্রো সেটশনগুলিতে ঢােকা ও বেরােনাের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এবং ড্রেনগুলি সেখানে থামবে না, জানিয়েছে দিল্লি মেট্রো রেল কর্পোরেশন (ডিএমআরসি)।

ভীম সেনার সমর্থনকারীরা শুক্রবার জামা মসজিদ থেকে যন্তর মন্তর নাগরিকত্ব আইনের বিরােধিতায় বিক্ষোভ মিছিল করার পরিকল্পনা করে। ভীম সেনা প্রধান চন্দ্রশেখর আজাদ বলেন, ১৪৪ ধারা উপেক্ষা করেই ওই অঞ্চল থেকে বিক্ষোভ মিছিলে নেতৃত্ব দেবেন তিনি। সেই মতাে দুপুর ১টা নাগাদ জামা মসজিদ চত্বরে ভিড় জমাতে থাকেন প্রতিবাদীরা। অবস্থা বেগতিক দেখে চন্দ্রশেখর আজাদকে আটক করে পুলিশ।

অমিত শাহের বাড়ির সামনে আছড়ে পড়ল বিক্ষোভ, আটক করা হল প্রণব-কন্যা শর্মিষ্ঠাকে। শুক্রবারও বিক্ষোভে উত্তাল রাজধানী। নয়া নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ আছড়ে পড়ল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের বাড়ির দোরগােড়ায়। কংগ্রেসের সেই বিক্ষোভ থেকে আটক করা হল দিল্লি কংগ্রেসের অন্যতম মুখপাত্র তথা প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখােপাধ্যায়ের কন্যা শর্মিষ্ঠা মুখােপাধ্যায়কে।

কয়েকদিন আগেই প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি বলেছিলেন, ‘নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে কেউ স্থায়ী সরকার গড়তে পারে ঠিকই। কিন্তু তার মানেই সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মতাে তার পক্ষে রয়েছে এমন নয়, তাই তা সংখ্যাগরিষ্ঠের সরকার নয়। এটাই আমাদের সংসদীয় গণতন্ত্রের সার কথা’।

নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করা সরকার কেন সংখ্যাগরিষ্ঠের সরকার নয়, তা বিশদে ব্যাখ্যাও করেন প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি। তিনি বলেন, আমাদের দেশে কখনওই কোনও দল বা ব্যক্তি ৫১ শতাংশ ভােটারের জনাদেশ নিয়ে ক্ষমতায় আসেনি। ১৯৫২ সাল থেকে ২০১৯ পর্যন্ত কখনওই তা হয়নি। ১৯৫৭ সালে পণ্ডিত জওহরলাল নেহরু ৪৮০টি আসনের মধ্যে ৩৭১টি আসনে জিতে সরকার গড়েছিলেন। কিন্তু তখনও ৪৭.৭৮ শতাংশ ভােট পেয়েছিলেন তিনি। ৮৪ সালের ভােটে রাজীব গান্ধি ৫১৪টি আসনের মধ্যে ৪০৪টিতে জিতলেও তিনিও ৫১ শতাংশ ভােট পাননি।

প্রণববাবু অবশ্য উনিশের লােকসভা ভােটের প্রসঙ্গ তােলেননি। কিন্তু উল্লেখযােগ্য হল, এবার লােকসভা ভােটে নরেন্দ্র মােদি ও তাঁর দল বিজেপি একাই তিনশাের বেশি আসনে জিতলেও মাত্র ৩৮ শতাংশ ভােট পেয়েছেন। অর্থাৎ এই সরকারকেও সংখ্যাগরিষ্ঠের সরকার বলা যায় না।