প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য রাজ্য সরকারের ঘোষিত পাঁচ লক্ষ টাকার ক্ষতিপূরণ এখনও অধরা। তার বদলে হাতে এসেছে মাত্র ৫ হাজার টাকার চেক। স্বাভাবিকভাবেই, এই সামান্য অর্থে তীব্র অসন্তোষ ছড়িয়েছে উত্তরাখণ্ডের উত্তরকাশীর হর্ষিল ও ধরালী গ্রামের বাসিন্দাদের মধ্যে। সরকারের প্রতিশ্রুতি ও বাস্তব পরিস্থিতির এই ব্যবধান নিয়ে প্রশাসনের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফুঁসছেন গ্রামের বাসিন্দারা।
গত ৫ আগস্ট রাতে হর্ষিল উপত্যকার ধরালী ও হর্ষিল গ্রামে নামে ভয়াবহ হড়পা বান। মুহূর্তের মধ্যে ঘরবাড়ি ভেসে যায়, বহু পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়েন। সরকারি হিসেব অনুযায়ী, শনিবার পর্যন্ত বিপর্যস্ত অঞ্চলগুলি থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ৮২৫ জনকে। ধরালীর অন্তত ৩৫টি পরিবার তাদের সব কিছু হারিয়েছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে রাজ্য সরকারের তরফে ক্ষতিপূরণের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। জানানো হয়, গৃহহীনদের প্রত্যেককে দেওয়া হবে পাঁচ লক্ষ টাকা করে। মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামী নিজেই এই ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু বাস্তবে যখন গ্রামবাসীদের হাতে মাত্র ৫ হাজার টাকার চেক তুলে দেওয়া হয়, তখন থেকেই শুরু হয় অসন্তোষ।
গ্রামবাসীদের বক্তব্য, ‘এই সামান্য টাকায় কীভাবে নতুন করে জীবন শুরু করব? ঘর নেই, খাবার নেই, পরনের কাপড় পর্যন্ত হারিয়েছি। সরকার আমাদের কষ্টকে ছোট করে দেখাচ্ছে।’ উত্তরকাশীর জেলাশাসক প্রশান্ত আর্য অবশ্য দাবি করেছেন, আপাতত এটি একটি ‘তাৎক্ষণিক ক্ষতিপূরণ’। তিনি বলেন, ‘সম্পূর্ণ ক্ষয়ক্ষতির মূল্যায়ন করে যথোপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। আপাতত প্রয়োজনীয় সাময়িক সহায়তা হিসাবে এই অর্থ দেওয়া হয়েছে।’
প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে, যারা এক সপ্তাহের মধ্যে রিপোর্ট জমা দেবে। তবে গ্রামবাসীরা এই ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট নন। তাঁদের অভিযোগ, প্রশাসন ঘটনাটিকে হালকা করে দেখছে এবং প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ লঘু করে তুলে ধরার চেষ্টা করছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যদের একটাই প্রশ্ন, ‘পাঁচ হাজার টাকায় কী হয়?’
উত্তরকাশীর পরিস্থিতি এখনও স্বাভাবিক হয়নি। ভেঙে পড়া রাস্তা, ক্ষতিগ্রস্ত পরিকাঠামো ও জলসংকট মিলিয়ে প্রতিদিন নতুন করে বাঁচার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন গ্রামবাসীরা। এই অবস্থায় সরকারি প্রতিশ্রুতি বাস্তবে পরিণত হবে কি না, সেই দিকেই এখন নজর সব মহলের।