ছত্তিশগড়ে দু’দিনের সফরে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, মাওবাদী খতমের কাজ সরেজমিনে দেখতে শাহ

দেশ থেকে মাওবাদীদের নির্মূল করার টার্গেট বেঁধে দিয়েছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। আগামী বছরের ৩১ মার্চ মাওবাদী নিকেশ করার সময়সীমা। সেই কাজ কত দূর এগিয়েছে তা সরেজমিনে দেখতে মাওবাদীদের শক্ত ঘাঁটি বস্তারে গেলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। দু’দিনের সফরে শুক্রবার সন্ধ্যায় সে রাজ্যে পৌঁছেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। রাত আটটা নাগাদ রায়পুরে পৌঁছান তিনি।

দু’দিনের এই সফরে কেন্দ্রীয় বাহিনী ও পুলিশ আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠকের পাশাপাশি দশেরার ‘মুরিয়া দরদারে’ যোগদান-সহ অন্য কয়েকটি প্রশাসনিক কর্মসূচি রয়েছে শাহের।শুক্রবার রাতে শাহের বিমান ছত্তিশগড়ের রাজধানী রায়পুরের স্বামী বিবেকানন্দ বিমানবন্দরে অবতরণ করে। তাঁকে স্বাগত জানাতে হাজির ছিলেন সে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বিষ্ণুদেও সাই-সহ প্রশাসনিক আধিকারিকেরা। শনিবার সকালে বস্তার ডিভিশনের সদর জগদলপুরে গিয়ে মা দান্তেশ্বরী মন্দিরে প্রার্থনায় অংশ নেন।

মন্দির থেকে বেরিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি মা দান্তেশ্বরীর কাছে প্রার্থনা জানালাম যাতে বস্তারকে নকশালপন্থা থেকে মুক্তি দিতে নিরাপত্তাবাহিনীকে শক্তি জোগান।’ এর পর প্রশাসনিক আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন এবং তারপর যান দশেরার মুরিয়া দরবারে। বিকেলে জগদলপুরের সভায় মাওবাদীদের পাঠানো আলোচনার প্রস্তাব খারিজ করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘ওদের সামনে আত্মসমর্পণই একমাত্র পথ।’


গত এক বছরে সাধারণ মাও সদস্যের পাশাপাশি বহু মাও নেতাকে খতম করেছে রাজ্য ও কেন্দ্রের যৌথবাহিনী। এছাড়াও আত্মসমর্পণ করেছেন বহু নেতা-কর্মী। বর্তমাণ ছত্তিশগড়ের জঙ্গল-পাহাড়ে কার্যত কোণঠাসা নকশালপন্থীরা। এই অবস্থায় অমিত শাহর সফর তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।  উল্লেখ্য, ছত্তিশগড়ে বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর মাওবিরোধী অভিযান আরও গতি পেয়েছে।

২০২৪ সালে বস্তার অঞ্চলে নিরাপত্তাবাহিনীর অভিযানে মৃত্যু হয়েছে ২৮৭ জন মাওবাদীর। গ্রেপ্তার হয়েছে হাজারেরও বেশি, পাশাপাশি আত্মসমর্পণ করেন ৮৩৭ জন। রিপোর্ট বলছে, গত ৯ মাসে এনকাউন্টারে মৃত্যু হয়েছে ২১০ জন মাওবাদীর। এদের মধ্যে শুধুমাত্র ছত্তিশগড়ে ১৩ জন শীর্ষ মাওবাদী নেতার মৃত্যু হয়েছে। যাদের মাথার দাম ন্যূনতম ২০ লক্ষ থেকে এক কোটি টাকা পর্যন্ত।

চলতি বছরে বস্তারে সিপিআই (মাওবাদী)-র সাধারণ সম্পাদক নাম্বালা কেশব রাও ওরফে বাসবরাজ ওরফে গগন্না, পলিটব্যুরোর সদস্য রামচন্দ্র রেড্ডি ওরফে চলপতি এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নরসিংহচলম ওরফে সুধাকর, রবি ভেঙ্কাটা লক্ষ্মী চৈতন্য ওরফে অরুণা, সশস্ত্র শাখা পিএলজিএ-র মাসার মতো শীর্ষস্থানীয় মাওবাদী নেতা-নেত্রীরা যৌথবাহিনীর অভিযানে নিহত হয়েছেন।

এর পাশাপাশি রাজ্য সরকার এবং পুলিশের ‘নিয়া নার নিয়া পুলিশ’ (আমাদের গ্রাম, আমাদের পুলিশ), ‘লোন ভারাতু’ (গোন্ড ভাষায় যার অর্থ ‘তোমার বাড়ি ফিরে যাও’), ‘নিয়াদ নেল্লানার’ (তোমার ভালো গ্রাম), ‘পুনা মারগেম’-এর মতো পুনর্বাসন কর্মসূচিতে সাড়া দিয়ে মাওবাদীদের আত্মসমর্পণের প্রবণতাও বেড়েছে বলে খবর।