জল্পনার অবসান। দিল্লি বিস্ফোরণে ঘাতক গাড়ির চালক আসনে কে ছিল, তা নিয়ে জোর কদমে চলছিল জল্পনা। অবশেষে জানা গেল, বিস্ফোরণে ব্যবহৃত হুন্ডাই আই ২০ গাড়ির চালকের আসনে ছিল উমর উন নবিই। ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার দেহাংশের সঙ্গে উমরের মা এবং ভাইয়ের ডিএনএ পরীক্ষা করে দেখা হয়। ডিএনএ পরীক্ষায় একশো শতাংশ মিলে গিয়েছে বলে জানিয়েছেন তদন্তকারীদের একটি সূত্র। ডিএনএ পরীক্ষার আগেই জম্মু ও কাশ্মীরে পুলওয়ামা থেকে আটক করা হয়েছিল হামলাকারী উমরের মাকে। বিস্ফোরণের রাতেই উমরের মা এবং দুই ভাইকে আটক করা হয়েছিল বলে জানিয়েছিলেন দিল্লি পুলিশের এক কর্তা।
ঘাতক গাড়িটির নম্বর এইচআর২৬ সিই৭৬৭৪। ২০১৪ সালের ১৮ মার্চ মাসে গাড়িটি প্রথমবার বিক্রি হয়। গাড়িটি কেনেন মহম্মদ সলমন নামে এক ব্যক্তি। বিস্ফোরণে উড়ে যাওয়া গাড়িটির রেজিস্ট্রেশন তাঁর নামেই ছিল। পরে তিনি গাড়িটি দিয়ে দেন দেবেন্দ্র নামে অপর এক ব্যক্তিকে। তবে কোনও আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া ছাড়াই গাড়িটি দিয়ে দেন। এরপর মালিকানা বদল হয়। গাড়িটি যায় সোনু নামে একজনের হাতে। এরপর গাড়িটি যায় তারিকের কাছে। তবে গাড়ির রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেটে কোনও বদল করা হয়নি। এরপর গাড়ির মালিক হয় উমর উন নবি।
বিস্ফোরণের আগে সিসিটিভি ফুটেজে উমরের ছবিই আগেই দেখা গিয়েছিল। সূত্রের খবর, সুনহেরি মসজিদ থেকে লাল কেল্লা মেট্রো স্টেশন পর্যন্ত গাড়িটি চালিয়ে এনে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। তদন্তকারীরা প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছেন, দুই সঙ্গীকে নিয়ে আত্মঘাতী হামলার ছক করেছিল উমর। তদন্তকারীরা মনে করছেন, সোমবার রাজধানীর একাধিক এলাকায় বিপুল পরিমাণে আরডিএক্স উদ্ধার হয়। সন্দেহভাজনদের ধরপাকড়ের জেরে ভয় পেয়ে গিয়ে তড়িঘড়ি বিস্ফোরণ ঘটায় উমর।
বিস্ফোরণের আগে সিসিটিভির ফুটেজে গাড়ির চালকের আসনে উমরকে বসে থাকতে দেখা গিয়েছিল। যদিও পুলিশ এই বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ভাবে তখন কিছু জানায়নি। এ বার ডিএনএ পরীক্ষাতে উঠে এল গাড়িটি চালাচ্ছিল উমর। সোমবার সকালে ফরিদাবাদেও তল্লাশি চালিয়ে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক পদার্থ উদ্ধার করেছিল জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশ এবং হরিয়ানা পুলিশের যৌথ দল। গ্রেপ্তার করা হয়েছিল মুজাম্মিল আহমেদ-সহ একাধিক ব্যক্তিকে।
বুধবার উমরের আরও একটি গাড়ির হদিশ পেয়েছেন তদন্তকারী কর্তারা। এটি লাল রঙের একটি ফোর্ড ইকোস্পোর্ট গাড়ি। গাড়িটির খোঁজে বুধবার সকাল থেকেই দিকে দিকে অভিযান চালিয়েছিল পুলিশ। হরিয়ানার একটি বাড়ির সামনে থেকে গাড়িটিকে পাওয়া যায়। গাড়িটির গতিবিধি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ২০১৭ সালে উমরের নামে দিল্লির রাজোরি গার্ডেনে গাড়িটি রেজিস্টার করা হয়েছিল বলে খবর।
এই গাড়ির দ্বিতীয় মালিক উমর। ভুয়ো ঠিকানা ব্যবহার করে গাড়িটি কিনেছিল সে। তদন্তকারীরা মনে করছেন, হামলার দ্বিতীয় গাড়ি হিসেবে এই ফোর্ডটি ব্যবহারের পরিকল্পনা ছিল উমর উন নবির। সোমবার বিস্ফোরণের পর থেকেই এই লাল গাড়ি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না।
এবার আরও একটি গাড়ি নিয়ে সন্দেহ দানা বাঁধছে। বিস্ফোরণে তিনটি গাড়ি জড়িত ছিল বলে জানতে পেরেছেন তদন্তকারীরা। সূত্রের খবর, তৃতীয় গাড়িটি মারুতি ব্রেজা বলে মনে করা হচ্ছে। তবে এখনও পর্যন্ত ওই গাড়িটির খোঁজ পাওয়া যায়নি। সন্দেহভাজনরা পালানোর জন্য ওই গাড়িটি ব্যবহার করেছিল বলে মনে করা হচ্ছে। দিল্লি-এনসিআর ও আশপাশের বিভিন্ন জায়গাতে তৃতীয় গাড়ির তল্লাশি চালাচ্ছেন তদন্তকারীরা।