সোমবার, ১০ নভেম্বর। দিল্লির লালকেল্লার সামনে বিস্ফোরণ। একের পর এক উঠে আসে চিকিৎসকের নাম। নিহত হন বিস্ফোরণে মূল মাথা চিকিৎসক উমর উন নবি। পাকিস্তানের জঙ্গি সংগঠন জইশ-ই-মহম্মদের স্লিপার সেল তৈরির দায়িত্বে ছিলেন উমরই। উমরের ফোন ঘেঁটে এমনই তথ্য মিলেছে বলে তদন্তকারী সূত্রে খবর। উচ্চশিক্ষিত এবং অপরাধের কোনও রেকর্ড নেই, মূলত তাঁদেরকেই টার্গেট করা হত বলে সূত্রের দাবি।
সন্দেহ করা হবে না এমন তরুণ-তরুণীদের খোঁজ চালিয়ে তাঁদের সম্পর্কে তথ্য জোগাড় করতেন উমর। তার পর সেই তরুণ-তরুণীর সঙ্গে সমাজমাধ্যমে বন্ধুত্ব পাতাতেন তিনি। তরুণ-তরুণীদের কথার জালে ফাঁসিয়ে তাঁদের মগজধোলাইও চালানো হত বলে খবর। আর সে কাজ করতেন উমর নিজেই। ওই তরুণ-তরুণীদের মধ্যে সন্ত্রাসবাদ এবং কট্টরপন্থার বীজ বপনের কাজ চলত সুনিপুণ ভাবে। উমরের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল এমন বেশ কিছু সন্দেহভাজনের হদিশ মিলেছে বলে সূত্রের দাবি।
স্লিপার সেলে নিয়োগের জন্য মূলত জম্মু-কাশ্মীরের তরুণ-তরুণীদের বাছা হত। তবে সেই নিয়োগের কাজ শুধু জম্মু-কাশ্মীরের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না। সেই জাল ছড়িয়েছে দেশের অন্য প্রান্তেও। হরিয়ানায় ‘ডক্টর টেরর মডিউল’-এর একের পর এক সদস্য গ্রেপ্তার হওয়ার পর সেই সন্দেহ আরও দানা বেঁধেছে। জঙ্গিদলে নিয়োগের ধরন এবং কাদের নেওয়া হবে, সেই কৌশলের আমূল পরিবর্তন ঘটেছে বলে মনে করছে তদন্তকারীদের একটি সূত্র। জঙ্গি সংগঠনের হ্যান্ডলারদের এখন নিশানা উচ্চশিক্ষিতেরা।
উমর দিল্লির বিস্ফোরণে ‘জুতা বোমা’র কৌশল ব্যবহার করেছিলেন বলেও মনে করছে তদন্তকারীরা। বিস্ফোরণে ব্যবহৃত আই২০ গাড়িটির চালকের আসনের নীচ থেকে একটি কালো রঙের স্পোর্টস শু পেয়েছেন তদন্তকারীরা। ওই জুতো উমরের বলে দাবি তদন্তকারীদের। জুতোটির ভিতরে একটি ধাতব পদার্থ পাওয়া গিয়েছে। তদন্তকারীদের সন্দেহ, ওই ধাতব বস্তুটিই ছিল বিস্ফোরণের ট্রিগার। সেটির মাধ্যমেই বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছিল।
ফরেনসিক পরীক্ষায় ওই জুতোয় এবং গাড়িটির টায়ারে উচ্চ মানের বিস্ফোরক, টিএটিপি-র নমুনা পাওয়া গিয়েছে। যা ‘শয়তানের মা’ নামে বেশি পরিচিত। গাড়ির পিছনের সিটের নীচ থেকেও বিস্ফোরকের নমুনা মিলেছে তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, জৈশ-ই-মহম্মদের সঙ্গে যুক্ত এই হোয়াইট কলার মডিউলের সদস্যরা একটি বড় মাপের হামলার জন্য প্রচুর পরিমাণে টিএটিপি মজুত করেছিল।
লালকেল্লার বিস্ফোরণে টিএটিপি এবং অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট, দুই ধরনের বিস্ফোরকই ছিল। জুতোয় বিস্ফোরক রেখে বিস্ফোরণ ঘটানোর এই পদ্ধতি তদন্তকারীদের ২০০১ সালে আমেরিকান এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটে হামলার ব্যর্থ চেষ্টার ঘটনা মনে করিয়ে দিয়েছে। রিচার্ড রিড নামে এক ব্রিটিশ সন্ত্রাসবাদী ২০০১ সালে প্যারিস থেকে আমেরিকার মায়ামি যাওয়ার উড়ানে জুতোয় বিস্ফোরক নিয়ে উঠেছিলেন। তবে তিনি মাঝ আকাশে বিস্ফোরণ ঘটাতে পারেননি। সহযাত্রীরা তাকে ধরে ফেলেছিল।