পরিবারের পাঁচ সদস্যকে বিষ খাইয়ে হত্যার অভিযোগ ওই পরিবারেরই দুই মহিলার বিরুদ্ধে, গ্রেফতার 

 গাড়ছিরোলি, ১৯ অক্টোবর – একই পরিবারের পাঁচ জন সদস্যকে খুনের অভিযোগ উঠল সেই পরিবারেরই দুই মহিলার বিরুদ্ধে। ঘটনাটি ঘটেছে মহারাষ্ট্রের গাড়ছিরোলিতে। ওই দুই মহিলাকে খাবারে বিষ মিশিয়ে পরিবারের সদস্যদের খুনের অভিযোগে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।  মাত্র কুড়ি দিনের মধ্যে একই পরিবারের ৫ জন সদস্য খুন হয় । তারা পরিকল্পনামাফিক পর পর খুন করে গেছে।  এরকম ঠান্ডা মাথায় পর পর নিজের পরিবারের সদস্যদেরই খুন করার নজির খুবই কম। এই দুই অভিযুক্তের নাম সঙ্ঘমিত্রা কুম্ভারে এবং রোজা রামটেক। 

গাড়ছিরোলির  পুলিশ সুপার এস পি নীলোৎপল জানিয়েছেন, এই দুই মহিলা পরিবারের পাঁচ সদস্যকে খুন করেছে।  পৈতৃক সম্পত্তি পেতেই এই খুন বলে প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে।  তবে এর হত্যার পিছনে পনি কারণও থাকতে পারে।  বলে অনুমান তদন্তকারীদের।  

সঙ্ঘমিত্রা তাঁর স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনকে নিয়ে হতাশ ছিল। অন্য জনের নাম রোজা। তাঁর অসন্তোষ ছিল সম্পত্তির ভাগাভাগি নিয়ে। পরিবারের সদস্যদের খুন করার জন্য তাঁরা ব্যবহার করেছিল  আর্সেনিকের মতো বিষাক্ত কোন জিনিস।  


 গত ২০ সেপ্টেম্বর শঙ্কর কুম্ভারে ও তাঁর স্ত্রী বিজয়া হঠাৎই অসুস্থ হয়ে পড়েন। মনে করা হয়, খাদ্যে বিষক্রিয়া থেকে তাঁর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। দ্রুত তাঁদের শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। বুকে ব্যথা  শুরু হয়। তাঁদের প্রথমে স্থানীয় আহেরি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে নাগপুরের একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ৬ দিনের মাথায় মারা যান শঙ্কর। পরদিন বিজয়ার মৃত্যু হয়। 

পরিবারের শোকের আবহের মধ্যেই তাঁদের ছেলেমেয়ে কোমল দাহাগাওকর, আনন্দ ও রোশন কুম্ভারে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁদেরও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। প্রতিদিন একটু একটু করে তাঁদের শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে।  ৮ অক্টোবর মারা যান কোমল। আনন্দ মারা যান ১৫ তারিখ। পরদিন মৃত্যু হয় রোশনের। 

পরিবারে পর পর এহেন মৃত্যুর খবর পেয়ে শঙ্করের দাদা সাগর কুম্ভারে  দিল্লি থেকে চন্দ্রপুর পৌঁছন। তারপর তিনিও অসুস্থ বোধ করেন। এমনকী তাদের যে গাড়ির চালক শঙ্কর ও বিজয়াকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলেন তাঁর শরীরও খারাপ হয় । চালকের নাম রাকেশ মাডাভি। খোঁজ নিতে এসে এক আত্মীয়ও অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁদের শরীরের অবস্থা এখন অবশ্য কিছুটা স্থিতিশীল।

মৃত পাঁচ জন ও অসুস্থ তিন জনের শরীরে একই রকমের উপসর্গ দেখা যাচ্ছিল। শরীর অবশ হয়ে যাওয়া, কোমরে ব্যথা, মাথা যন্ত্রণা, জিভ ভারী হয়ে আসা ইত্যাদি। এ সব দেখে ডাক্তারদেরই সন্দেহ হয় যে তাঁদের বিষ দেওয়া হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, শঙ্করের পুত্রবধূ তথা রোশনের স্ত্রীর উপরে নজর রাখা হয়েছিল। তাঁর ইচ্ছার বিরুদ্ধে রোশনের সঙ্গে তাঁর বিয়ে দেয় পরিবার। তাছাড়া কিছুদিন আগে সঙ্ঘমিত্রার বাবা আত্মহত্যা করেন। 

রোজা রামটেক ছিলেন বিজয়ার জা। তিনি কাছেই একটি বাড়িতে থাকতেন। বিজয়াদের সঙ্গে সম্পত্তির ভাগাভাগি নিয়ে তাঁর ঝগড়া ছিল। সঙ্ঘমিত্রা ও রোজা পরস্পরের সঙ্গে হাত মেলায়। তার পর একের পর এক পরিবারের সদস্যদের বিষ খাইয়ে হত্যা করে। দুই গৃহবধূ এতটা গভীর ষড়যন্ত্র করে খুন করতে পারে জেনে পুলিশই হতভম্ব। 

পুলিশ জানিয়েছে, সঙ্ঘমিত্রা প্রথমে বিষ নিয়ে অনলাইনে সার্চ করেছিল। তার পর তেলেঙ্গানা থেকে আর্সেনিক কিনে আনে, যাতে ধরা না পড়ে। জল ও খাবারের সঙ্গে সে একে একে শ্বশুর, শাশুরি ও স্বামীকে বিষ খাইয়ে দেয়। অসুস্থ হয়ে পড়ার পর জল খাওয়ানোর নামে ফের বিষ খাওয়ানো হয়। এমনকী হাসপাতালে শঙ্কর ও বিজয়াকে নিয়ে যাওয়ার সময়ে বোতলের জলে আর্সেনিক মিশিয়ে দেওয়া হয়েছিল। গাড়ির চালক সেই জল খেয়েই অসুস্থ হয়ে পড়েন।

পুলিশ তদন্তে নেমে জরুরি ভিত্তিতে চারটি তদন্তকারী দল গঠন করে।  তারা মহারাষ্ট্র ও তেলেঙ্গানার বিভিন্ন জেলায় গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে।  পুলিশ দুই মহিলার গতিবিধির ওপরও নজরদারি চালায়।  ১৮ অক্টোবর তাদের গ্রেফতার করা হয়।  তদন্তে উঠে আসে এই দুই মহিলাই বিষ খাইয়ে পরিবারের সদস্যদের হত্যা করে।  দুই মহিলার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।