উদ্দীপ্ত তৃণমূল কর্মীরা, আগরতলা অফিস স্বাভাবিক কার্যকর্ম শুরু

ত্রিপুরা থেকে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতিনিধি দল ফেরার পর রাজ্যের দলীয় কার্যক্রম স্বাভাবিক ছন্দে ফিরে এসেছে। আগরতলা শহরে তৃণমূল কংগ্রেস ভবন আবার আগের মতোই প্রাণ ফিরে পেয়েছে। দলের স্থানীয় নেতারা জানিয়েছেন, বাংলা থেকে আসা প্রতিনিধি দলের সমর্থন ও উপস্থিতি দলের কর্মীদের মনোবল বাড়িয়েছে।

ত্রিপুরার তৃণমূল যুব মোর্চার সভাপতি শান্তনু সাহা বলেন, ‘আমরা নিয়মিত অফিসে আসছি, দলের কার্যক্রম চালাচ্ছি এবং কর্মীদের সঙ্গে মিটিং করছি। এখন কোনও ধরনের বাধা বা সমস্যা হচ্ছে না।’ তিনি জানান, দলের কর্মীরা আগরতলা অফিসে সক্রিয়ভাবে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।

এ দিন কুণাল ঘোষের নিজের হাতে মেরামত করা তৃণমূল কংগ্রেসের জ্বলজ্বল করা সাইনবোর্ড সকলের নজর কেড়েছে। যদিও পুলিশ এখনও গত মঙ্গলবারের আগরতলার কার্যালয়ে হামলার ঘটনার কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। ওই ঘটনায় দুষ্কৃতীরা লাঠি নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস কার্যালয়ে ঢুকে ভাঙচুর চালায়। তৃণমূলের পতাকা ও ফ্লেক্স ছিঁড়ে ফেলে দেয়।


এই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় রাজ্যের শাসক দল একটি শীর্ষস্তরীয় প্রতিনিধি দলকে ত্রিপুরা পাঠায়। দু’দিন আগরতলায় অবস্থান করে তারা তৃণমূল কংগ্রেসের কার্যালয় পুনরায় স্বাভাবিক করে তোলেন, রাজ্য পুলিশের মহানির্দেশকের সঙ্গে আলোচনা করেন, রাজ্যপালের কাছে ডেপুটেশন দেন এবং বিমানবন্দরের সামনে ধরনা দেন।

ত্রিপুরায় দীর্ঘদিন পর এ ধরনের বড় কর্মসূচি আয়োজন তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মীদের মধ্যে উদ্দীপনা সৃষ্টি করেছে। শান্তনু সাহা বলেন, ‘প্রতিনিধি দলের আগমন আমাদের জন্য একটি শক্তির উৎস। কর্মীদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস অনেক বেড়েছে।’

দলীয় সূত্র জানাচ্ছে, প্রতিনিধি দল ফেরার পরও কুণাল ঘোষ রাজ্যের তৃণমূল কর্মীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ বজায় রেখেছেন, যাতে সংগঠন শক্তিশালী ও সক্রিয় থাকে।

এদিকে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতিনিধিদলের আগরতলা সফর নিয়ে উল্টো সুর শুনিয়েছেন ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহা। শুক্রবার তিনি বলেন, ‘তৃণমূলের দল রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করেনি। তবে সচিবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছে। তাঁরা আসতে চাইলে আসতেই পারেন, আমরা নিরাপত্তা দিয়েছি।’

অভিযোগ ওঠে, উত্তরবঙ্গ সফরে গিয়ে বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মু ও বিধায়ক শঙ্কর ঘোষের উপর হামলা চালিয়েছিল তৃণমূল। এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতেই ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘তাঁদের লোকজনই আমাদের সাংসদ ও বিধায়কের উপর আক্রমণ চালিয়েছিল। এখন তারা বলছে, ওরা নাকি তৃণমূলের কর্মী নয়। আমরা এই ঘটনার নিন্দা জানাই।’ মানিক সাহা আরও বলেন, ‘আমরা গোটা পরিস্থিতি খুব সুন্দরভাবে সামলেছি। প্রশাসন শান্তি বজায় রাখতে সমস্ত ব্যবস্থা নিয়েছে।’

ত্রিপুরায় তৃণমূলের সাম্প্রতিক সফর রাজনৈতিক মহলে নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়েছে। তৃণমূল নেতাদের দাবি, বিজেপি কর্মীরা তাঁদের দলের উপর হামলা চালিয়েছে। অন্যদিকে, ত্রিপুরার শাসকদল বলছে, তৃণমূল নিজেরাই পরিস্থিতি ঘোলাটে করার চেষ্টা করছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরা— এই দুই রাজ্যের রাজনৈতিক সম্পর্কের পারস্পরিক প্রভাব এখন ক্রমশ প্রকট হচ্ছে। আগরতলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে সেই সম্পর্ক আরও একবার উত্তপ্ত হয়ে উঠল।