মধ্যপ্রদেশ ও রাজস্থানে কফ সিরাপে শিশুমৃত্যুর ঘটনায় আশঙ্কার মেঘ আরও ঘনিয়ে উঠছে। শনিবার কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, তামিলনাড়ুর কাঞ্চিপুরমে মেসার্স শ্রীসান ফার্মার তৈরি কোল্ডরিফ কাশির সিরাপে অনুমোদিত সীমার বাইরে ডাইথিলিন গ্লাইকল পাওয়া গিয়েছে। স্বাস্থ্যকর্তারা জানিয়েছেন, ডাইথিলিন গ্লাইকল বা ইথিলিন গ্লাইকল কিডনির গুরুতর ক্ষতির কারণ হতে পারে। এদিকে গুণগত মানে উত্তীর্ণ হতে না পারায় ‘কোল্ডরিফ’ কাশির সিরাপ বিক্রির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে মধ্যপ্রদেশ সরকার। এই সিরাপ ওষুধের যে ব্যাচের বোতলগুলি থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল সেই একই ব্যাচের ওষুধ খেয়ে ওই রাজ্যের ছিন্দওয়াড়া জেলায় ৯ জনের মৃত্যু হয়েছিল।
বিষয়টির গুরুত্ব বিবেচনা করে কেন্দ্র সরকার তদন্তের পরিধি আরও বাড়িয়েছে। ৬টি রাজ্যের ১৯টি ওষুধ উতপাদন ইউনিটে পর্যবেক্ষণ শুরু হয়েছে। এই পরিদর্শনে ওষুধের মান সংক্রান্ত সমস্যার কারণগুলি নির্ধারণ করা হবে এবং ভবিষ্যতে যাতে এই ধরণের ঘটনা প্রতিরোধ করতে কী পদক্ষেপ করা হবে তা নির্ধারণ করবে।রাজস্থান এবং মধ্যপ্রদেশে কিডনি বিকল হয়ে শিশুদের মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত করছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের অধীন জাতীয় রোগ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র ন্যাশনাল সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল বা এনসিডিসি।
তামিলনাড়ুতে তৈরি এই কফ সিরাপ মধ্যপ্রদেশে সরবরাহ করা হয়েছিল। ৩ অক্টোবর প্রকাশিত নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট ফের উদ্বেগ বাড়িয়ে তুলেছে। কেরলের স্বাস্থ্যমন্ত্রী বীণা জর্জ শনিবার জানিয়েছেন যে, রাজ্যের ওষুধ নিয়ন্ত্রণ বিভাগ রাজ্যজুড়ে কোল্ডরিফ কাশির সিরাপ বিক্রি ও বন্টন স্থগিত রেখেছে। প্রসঙ্গত, তামিলনাড়ু সরকারও গত ১ অক্টোবর থেকে সে রাজ্যে ‘কোল্ডরিফ’ সিরাপের বিক্রি নিষিদ্ধ করেছে। চেন্নাইয়ের একটি সংস্থা ওই সিরাপ তৈরি করে থাকে। মধ্যপ্রদেশ ও রাজস্থানে ১১ শিশুর মৃত্যুর সঙ্গে এই সিরাপের যোগসূত্র রয়েছে বলে, তার পরিপ্রেক্ষিতে এই পদক্ষেপ করা হয়েছে।
অন্য দিকে, কেসন ফার্মা নামের ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থার সরবরাহ করা কাশির সিরাপ-সহ ১৯টি ওষুধ বিক্রি আপাতত স্থগিত রেখেছে রাজস্থান সরকার। রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রীর বিনামূল্যের ওষুধ প্রকল্পে নিম্নমানের কাশির সিরাপ খেয়ে ২ শিশুর মৃত্যু হয়। অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ে। এই বিষয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী ভজনলাল শর্মা। ইতিমধ্যেই ওষুধের মান পরীক্ষক এবং নিয়ন্ত্রক রাজারাম শর্মাকে সাসপেন্ড করেছে রাজস্থান সরকার। কী ভাবে ওই ওষুধগুলি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হল, তা খতিয়ে দেখতে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে কমিটি গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক সমস্ত রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছে। শিশুদের কফ সিরাপ দেওয়ার আগে ভাল করে যাচাই করার কথা বলা হয়েছে। স্পষ্ট করে জানানো হয়েছে, ২ বছরের কম বয়সের শিশুদের কাশির সিরাপ দেওয়া উচিত নয়। বিশেষ করে ৫ বছরের কম বয়সের শিশুদের জন্যও কফ সিরাপ সুপারিশ করা হয় না। পর্যাপ্ত পরিমাণ জল, বিশ্রাম, এবং দূষণ আটকাতে মাস্ক ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিতসকেরা।
তবে শিশুদের মৃত্যুর জন্য রাসায়নিক কারণ দায়ী নাকি, অন্যান্য কোনও সংক্রমণ বা পরিবেশগত কারণে হয়েছে তা খতিয়ে দেখতে একাধিক বিশেষজ্ঞ দল নমুনা পরীক্ষা করে অনুসন্ধান চালাচ্ছেন।