দিল্লি বিস্ফোরণে আহতদের দেখতে হাসপাতালে গিয়ে কড়া বার্তা মোদীর

প্রধানমন্ত্রীর এক্স হ্যান্ডল থেকে প্রাপ্ত ছবি।

দুই দিনের সরকারি সফর শেষে বুধবার দুপুরে ভুটান থেকে দিল্লি ফিরে সরাসরি লোক নায়ক জয়প্রকাশ নারায়ণ (এলএনজেপি) হাসপাতালে গেলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সোমবার সন্ধ্যায় লালকেল্লা মেট্রো স্টেশনের কাছে ভয়াবহ বিস্ফোরণে নিহত ও আহতদের মধ্যে যাঁরা চিকিৎসাধীন, তাঁদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন তিনি। পাশাপাশি তিনি চিকিৎসকদের সঙ্গে বিস্ফোরণ–পরবর্তী চিকিৎসা ও সুরক্ষার বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন।

প্রধানমন্ত্রী আহতদের পাশে বসে তাঁদের সান্ত্বনা দেন এবং দ্রুত আরোগ্য কামনা করেন। বিস্ফোরণে গুরুতর জখম হয়ে ভর্তি থাকা কয়েকজনের সঙ্গেও সরাসরি কথা বলেন মোদী। চিকিৎসক ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তিনি আহতদের চিকিৎসার অগ্রগতি ও অবস্থা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। পরে এক্স হ্যান্ডলে দেওয়া এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘এই মর্মান্তিক ঘটনার সময়ে সমগ্র দেশ আক্রান্ত পরিবারগুলির পাশে রয়েছে। এই কঠিন সময়ে তাঁদের পাশে রয়েছে গোটা দেশ। যাঁরা এই ষড়যন্ত্রের পিছনে রয়েছেন, তাঁদের কেউই রেহাই পাবে না। দেশের নিরাপত্তা নিয়ে খেলা বরদাস্ত করা হবে না।’

প্রসঙ্গত, ভয়াবহ এই বিস্ফোরণটি ঘটে ঐতিহাসিক লালকেল্লার কাছে একটি ট্র্যাফিক সিগন্যালের পাশে পার্ক করে রাখা একটি আই-২০ গাড়িতে। ঘটনাস্থলেই ১৩ জনের মৃত্যু হয় এবং ২৪ জন গুরুতর জখম হন। এই ঘটনার তদন্তের দায়িত্ব নিয়েছে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা এনআইএ। ইতিমধ্যেই এই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে কয়েকজনকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে।


সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার ভুটানের থিম্পু শহরে এক সমাবেশে বক্তৃতা দেওয়ার সময় প্রধানমন্ত্রী মোদী এই বিস্ফোরণের তীব্র নিন্দা করে বলেন, ‘যারা এই নৃশংস কাজের সঙ্গে যুক্ত, তাদের কাউকেই রেহাই দেওয়া হবে না।’

এ দিন হাসপাতালে আহতদের দেখে প্রধানমন্ত্রী সরাসরি নিজের কার্যালয়ে ফিরে যান। সেখানে তিনি কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা কমিটির (ক্যাবিনেট কমিটি অন সিকিউরিটি) বৈঠক আহ্বান করেন, যাতে বিস্ফোরণের তদন্ত ও সামগ্রিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা যায়।

সরকারি সূত্র জানা যায়, রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকা ও ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলিতে নিরাপত্তা আরও জোরদার করা হয়েছে। একই সঙ্গে এনআইএ ও দিল্লি পুলিশ যৌথভাবে তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে, যাতে বিস্ফোরণের নেপথ্যে থাকা চক্রীদের দ্রুত শনাক্ত করা যায়।

ইতিমধ্যেই বিস্ফোরণ তদন্তের দায়িত্ব এনআইএ-র হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে এবং ফরেনসিক দলও ঘটনাস্থল থেকে সংগ্রহ করা নমুনা বিশ্লেষণ করছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ জানিয়েছেন, ‘ঘটনার মূল রহস্য উন্মোচন না হওয়া পর্যন্ত তদন্ত চলবে।’

তদন্তকারীরা বিস্ফোরণের উৎস, ব্যবহৃত উপাদান এবং সম্ভাব্য পরিকল্পনাকারীদের খোঁজে একাধিক রাজ্যে তল্লাশি চালাচ্ছেন। দিল্লি পুলিশ সূত্রের খবর, ঘটনাস্থল থেকে পাওয়া বিস্ফোরকের নমুনা ও ইলেকট্রনিক উপাদান বিশ্লেষণ চলছে ফরেনসিক দপ্তরে। প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে, এই হামলার জন্য পূর্ব পরিকল্পনা চলছিল এবং অভিযুক্তরা রাজধানীর মধ্যে থেকেই এর ছক কষেছিল।

তবে এদিন গাড়ি বিস্ফোরণের ঘটনায় প্রথমে আত্মঘাতী হামলার আশঙ্কা করা হলেও তদন্তের প্রাথমিক পর্যায়ে উঠে এসেছে সম্পূর্ণ ভিন্ন তথ্য। গোয়েন্দা সূত্রের দাবি, ঘটনাটি আত্মঘাতী হামলা নয়। বরং পুলিশের নজরদারি ও তল্লাশি বাড়ায় আতঙ্কে সন্দেহভাজন নিজেই বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ফেলে। বিস্ফোরণের কয়েক ঘণ্টা আগে দিল্লি–হরিয়ানা সীমানায় পুলিশের তল্লাশি কঠোর করা হয়। সন্দেহভাজন প্রশাসনের এই নজরদারি টের পেয়ে ভয় পেয়ে যায়। সেই অবস্থাতেই গাড়ির ভেতরে থাকা বিস্ফোরক সক্রিয় হয়ে যায়। তাঁরা বলেন, ‘ঘটনাটি পরিকল্পিত ছিল। কিন্তু হঠাৎ আতঙ্কে সন্দেহভাজন ব্যক্তি বিস্ফোরক সক্রিয় করে ফেলে।’