ধনখড়ের ইস্তফার কারণ নিয়ে চলছে জোর চর্চা

ফাইল চিত্র

উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড় শারীরিক অসুস্থতাকে কারণ হিসেবে দেখালেও আচমকা তাঁর ইস্তফা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে বাড়ছে নানান জল্পনা। তিনি সোমবার সন্ধ্যায় ইস্তফা দেওয়ার পূর্বে রাজ্যসভার অধিবেশন পরিচালনা করেছিলেন। এদিন বিকেলেও তাঁর মেজাজ ছিল যথেষ্ট ফুরফুরে। তাহলে সন্ধ্যায় হঠাৎ কী এমন হল, যার জন্য তিনি ইস্তফা দিলেন? রাজনৈতিক মহলে বিষয়টি নিয়ে যথেষ্ট চর্চা শুরু হয়েছে।

সূত্রের খবর, ধনখড় মঙ্গলবারের অধিবেশনের নিয়েও সোমবার অনেকের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। আর সন্ধ্যায় রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুকে চিঠি লিখেছেন। বিষয়টি নিয়ে যথেষ্ট রাজনৈতিক রহস্যের অবকাশ রয়েছে বলে অনেকেই মনে করছেন। তাঁর আচমকা ইস্তফা নিয়ে ইতিমধ্যেই বিরোধীরা প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন। অনেকে তাঁর এই আচমকা ইস্তফাকে পরোক্ষে ‘অপসারণ’ হিসেবেই দেখছেন। যদিও এ ব্যাপারে কেন্দ্র সরকার সম্পূর্ণ মৌনতা অবলম্বন করেছে।

প্রসঙ্গত সোমবার সন্ধ্যায় রাষ্ট্রপতির ইস্তফাপত্রটিড ফাঁস হয়ে যায়। আর সেটা সরকার পক্ষ থেকেই সম্ভব। এটা থেকে তাঁকে বিদায় জানানোর একটি ‘সঙ্কেত’ বলেই মনে করছে বিশেষজ্ঞ মহল। কারণ উপরাষ্ট্রপতির মতো একটি সাংবিধানিক পদে ইস্তফার বিষয়টি একবার সর্বসমক্ষে জানাজানি হয়ে গেলে আর ফেরার পথ থাকে না। ধনখড়ের ক্ষেত্রে সেটাই হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।


এদিকে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু ধনখড়ের ইস্তফাকে সাদরে গ্রহণ করার পরেই সামাজিক মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি ধনখড়ের সুস্বাস্থ্য কামনা করেছেন। তিনি আরও বলেছেন, ধনখড় অনেক সুযোগ পেয়েছেন। তাঁর এই মন্তব্য নিয়ে জলঘোলা শুরু হয়েছে। কারণ প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্যে স্পষ্ট ধনখড় পর্ব এখানেই সমাপ্ত। আবার রাষ্ট্রপতি কোনও আপত্তি না করেই তাঁর ইস্তফাপত্রটি সাদরে গ্রহণ করেছেন। সেটা থেকেও এই ইঙ্গিত স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে।

এমতাবস্থায় তাঁর ইস্তফা নিয়ে আলোচনা, চর্চা এবং জল্পনা কিছুতেই থামছে না। বরং উত্তরোত্তর বেড়েই চলেছে। কারণ, এমন ঘটনা দেশের রাজনীতিতে খুবই বিরল। প্রতিটি আলোচনার অভিমুখ এক। সবার বক্তব্য— ধনখড়ের আচমকা ইস্তফার কারণ কী? যদিও রাজধানীর অন্দরমহলে ধনখড়ের হঠাৎ-ইস্তফার নেপথ্যে তিনটি কারণ নিয়ে জোর চর্চা শুরু হয়েছে। বিজেপির ঘনিষ্ঠ সূত্রের খবর, ধনখড়ের বিচারব্যবস্থা-কেন্দ্রিক মন্তব্যের জন্য কেন্দ্র সরকারের সঙ্গে তাঁর মতানৈক্য শুরু হয়েছে। বিচারপতি যশবন্ত বর্মার অপসারণ-কাণ্ডে তাঁর ‘অতিসক্রিয়তা’র কারণে কেন্দ্রের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কে ছেদ পড়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।

সূত্রের খবর, গত মাসে এক কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর পারিবারিক অনুষ্ঠানে অন্য দুই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ধনখড়কে একান্ত আলোচনায় মুখোমুখি বসে বোঝানোর চেষ্টা করেছিলেন, তিনি যেন বিচারপতি বর্মার অপসারণ সংক্রান্ত বিষয়ে ‘আগ্রাসী’ ভূমিকা না-নেন। কিন্তু তার পরেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি। আবার কারও কারও বক্তব্য, বিচারপতি বর্মার বিষয়ে ধনখড়ের ‘অতিসক্রিয়তা’র নেপথ্যে ব্যক্তিগত সমীকরণও থাকতে পারে।

পাশাপাশি একটি সরকারি অনুষ্ঠানে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের মন্ত্রীর উদ্দেশে তাঁর ‘নির্দেশমূলক’ বক্তব্যও মনোমালিন্যের অন্যতম কারণ। জানা গিয়েছে, তামিলনাড়ু সরকারের পক্ষ থেকে সুপ্রিম কোর্টে করা একটি মামলা নিয়ে কেন্দ্রের সঙ্গে তাঁর মতানৈক্যের প্রথম সূত্রপাত ঘটে। রাজ্যের রাজ্যপালের ভূমিকা নিয়ে ওই মামলাটি করেছিল তামিলনাড়ু সরকার। সেই মামলার বিষয়বস্তু ছিল, বিধানসভায় পাশ হওয়া বিল আটকে রাখছেন রাজ্যপাল। বিষয়টি শীর্ষ আদালত বিবেচনা করুক। সেই মামলাতেই সুপ্রিম কোর্ট বলেছিল, রাজ্যপালের এক্তিয়ার নেই বিল আটকে রাখার। সেই সঙ্গে দেশের শীর্ষ আদালত রাজ্যপাল তো বটেই, স্বয়ং রাষ্ট্রপতিকেও বিলে সই করার সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিল। ধনখড় প্রকাশ্যে শীর্ষ আদালতের সেই নির্দেশের সমালোচনা করেছিলেন। রাজ্যসভার নতুন সাংসদদের একটি কর্মশালায় ধনখড় গত এপ্রিল মাসে এই সমালোচনা করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘সুপ্রিম কোর্ট নিজেকে সুপার পার্লামেন্ট মনে করছে। এটা অনভিপ্রেত।’

তাঁর এই মন্তব্যে কেন্দ্রের ভাবমূর্তিতে আঘাত লাগে। সূত্রের খবর, উপরাষ্ট্রপতির ওই প্রকাশ্য মন্তব্যের পরে কেন্দ্রের পক্ষ থেকে তাঁকে বলা হয়েছিল, তিনি যেন বিচারব্যবস্থা সম্পর্কে প্রকাশ্যে মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকেন। রাজধানীর রাজনৈতিক মহলে এমনও শোনা যাচ্ছে, ধনখড়কে বোঝানো হয়েছিল, তাঁর বক্তব্য আইনসভার সঙ্গে বিচারব্যবস্থার সংঘাতের সৃষ্টি করছে। কিন্তু তিনি কেন্দ্রের সেই সতর্কবার্তা মেনে চলেননি। বরং প্রাক্তন আইনজীবী ধনখড় কেন্দ্রকে পাল্টা বার্তা দিয়ে বলেছিলেন, আইনের বিষয়ে তাঁর সম্যক ধারণা রয়েছে।