হাসিনা পরবর্তী আমলে দিল্লি-ঢাকা সম্পর্কে বদল এসেছে, মানলেন বিদেশ উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন
SNS
ঢাকা-দিল্লির সম্পর্ককে অনেক সময়ই ‘সোনালী অধ্যায়’ বলে উল্লেখ করে থাকতেন নরেন্দ্র মোদী এবং শেখ হাসিনা। সেই ‘সোনালী অধ্যায়’ এখনও কি দুই দেশের মধ্যে রয়েছে ? নয়া বাংলাদেশ সরকারের বিদেশমন্ত্রকের উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন মনে করেন, হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক বদলে গিয়েছে। শনিবার ঢাকার নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সেমিনারে বক্তব্য রাখার সময় ভারত-বাংলাদেশ কূটনৈতিক সম্পর্কের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘৫ আগস্ট পর্যন্ত ভারতের সঙ্গে এক রকম সম্পর্ক ছিল। ৫ আগস্টের পরে সেই সম্পর্কে বদল এসেছে। এটাই বাস্তব।’ তাঁর মতে, এই বাস্তবতাকে ভিত্তি করেই এই দুই দেশের সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাওয়া প্রয়োজন। ভারতও এই পরিবর্তনকে আত্মস্থ করে সেই মতো বাংলাদেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তুলবে বলে আশাপ্রকাশ করেছেন তৌহিদ হোসেন। তাঁর মতে, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশ সুসম্পর্ক স্থাপনে আগ্রহী। এক সংবাদ সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, তৌহিদ বলেছেন, ‘বাংলাদেশ কারও ক্ষতি করবে না। কারও জন্য নিজেদের ক্ষতি হোক, তাও চায় না বাংলাদেশ।’
বাংলাদেশে ক্ষমতাচ্যুত হয়েছেন শেখ হাসিনা। কোটা সংস্কার আন্দোলন এবং বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেরে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। গত ৫ আগস্ট বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে ভারতে চলে আসেন শেখ হাসিনা। বাংলাদেশে গঠিত হয় অন্তর্বর্তী সরকার। সেই সরকারের প্রধান মুহাম্মদ ইউনূস একাধিকবার সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার বিষয়ে আশ্বাস দিয়ে এলেও অত্যাচারের অভিযোগ অব্যাহত রয়েছে বাংলাদেশে। ভারতও একাধিক বার সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আর্জি জানিয়েছে। গত কয়েক মাসে যেভাবে সংখ্যালঘুদের উপর আক্রমণের খবর প্রকাশ্যে এসেছে তাতে দুই দেশের নাগরিকদের একটি বড় অংশের মধ্যেও পারস্পরিক অসন্তোষ ও তিক্ততা সৃষ্টি হয়েছে।
সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কে টানাপোড়েন চললেও কূটনৈতিক স্তরে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের অবনতি এখনও পর্যন্ত হয়নি। হাসিনা সরকারের জমানায় পুজোর মরসুমে এপার বাংলায় ইলিশ পাঠাত বাংলাদেশ। ইউনূস সরকারের আমলেও সেই ধারা বজায় রাখা হয়েছে। এবারও ভারতে ইলিশ পাঠিয়েছে বাংলাদেশ।
তবে সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে ভারত-বাংলাদেশ বাণিজ্য সম্পর্কে প্রভাব পড়বে না বলে জানিয়েছে ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রক। সে দেশের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের প্রেস সচিব শফিকুল ইসলাম এক সাক্ষাৎকারে জানান, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুরা নিরাপদে আছেন। বাংলাদেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে বিভ্রান্তিমূলক প্রচার চলছে বলেও দাবি করেছেন তিনি।
সেপ্টেম্বর মাসে এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রকের উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেছিলেন, ‘ দুই সরকারের মধ্যে সুসম্পর্ক থাকুক আমরা সেটাই চাই। মানুষও তাতে যুক্ত হোক। সম্পর্ক মানুষকেন্দ্রিক হতে হবে । তিনি আরও বলেছিলেন, ‘ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ থাকলেও তা প্রশমন করা সম্ভব।’
তবে সম্প্রতি বাংলাদেশের বিভিন্ন ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুই প্রতিবেশী দেশের বিবৃতি, পাল্টা বিবৃতির প্রকাশ্যে এসেছে। এর প্রভাব দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের উপর পড়তে পারে বলে মনে করছে বিশেষজ্ঞ মহল। বাংলাদেশ পুলিশ চট্টগ্রামের সংখ্যালঘু সন্ন্যাসী চিন্ময়কৃষ্ণ দাসকে গ্রেফতার করার পর সে দেশের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে দিল্লি।