জাতীয় নির্বাচন কমিশন আচমকা দু’দিনের জন্য দেশের সব রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকদের (সিইও) বৈঠকে ডেকেছে। মঙ্গলবার কমিশনের পাঠানো চিঠিতে জানানো হয়েছে, এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে আজ বুধবার এবং আগামীকাল বৃহস্পতিবার। বৈঠকে রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকদের সঙ্গে থাকবেন তাঁদের দপ্তরের অন্যান্য শীর্ষ আধিকারিকরাও। কিন্তু হঠাৎ কমিশন কেন এই বৈঠক ডেকেছেন, কী কী বিষয়ে আলোচনা হতে পারে, তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে যথেষ্ট চর্চা শুরু হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে উত্তেজনা বেড়েছে রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যেও। সূত্রের খবর, এই বৈঠকে বিভিন্ন বিষয়ের মধ্যে মূলত দুটি বিষয় আলোচনায় প্রাধান্য পেতে চলেছে। এক, এসআইআর-এর প্রস্তুতি এবং দুই, ভোটার তালিকায় স্বচ্ছতা আনতে ই-সাইনিং ব্যবস্থা। এছাড়া ২০২৬-এর বিধানসভা নির্বাচনের আগাম প্রস্তুতি হিসেবে এই দুটি বিষয় কীভাবে দ্রুত ও নির্ভুলভাবে বাস্তবায়িত করা হবে, সে বিষয়েও বিস্তারিত আলোচনা করা হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারনা।
সম্প্রতি বিহারে বিশেষ নিবিড় সমীক্ষা (এসআইআর) শেষ হতেই ভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষণা করা হয়েছে। এবার সেই সূত্র ধরে রাজনৈতিক মহলে জল্পনা, বাংলায়ও সমীক্ষা শেষ হলেই ঘোষণা করা হবে বিধানসভা ভোট। বৈঠকে দেশজুড়ে সমীক্ষার সময়সূচি, অগ্রাধিকার এবং রাজ্যগুলির পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমার সরাসরি সকল মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন।
প্রসঙ্গত, বিহারে সমীক্ষাকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি হয়েছিল। বিরোধীরা অভিযোগ তুলেছিল, কমিশন পক্ষপাত করছে। কমিশন বলেছিল, ভোটার তালিকার স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে এই সমীক্ষার প্রয়োজন। এদিকে বাংলায় প্রায় সাত মাস পরে বিধানসভা নির্বাচনের সম্ভাবনা। এরইমধ্যে এসআইআর নিয়ে বিভিন্ন মহলে বেড়েছে গুঞ্জন। ফলে রাজ্যে রাজনৈতিক উত্তাপ ক্রমশ তীব্র হচ্ছে। বিজেপি আশাবাদী, এসআইআর শেষ হলেই বাংলায় ভোট। একই সুর কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের কণ্ঠে। তিনি স্পষ্ট বলেছেন, ‘বাংলাতেও এসআইআর হবে।’ সেই প্রেক্ষিতে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূলের পাল্টা অভিযোগ, এই পদক্ষেপ সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
তবে যে যাই বলুক, নির্বাচন কমিশনের সাম্প্রতিক পদক্ষেপেই বিষয়টি স্পষ্ট। তারা বাংলায় এসআইআর নিয়ে যথেষ্ট তৎপর। এজন্য ইতিমধ্যেই তার প্রাথমিক উদ্যোগ শুরু হয়েছে। গত সপ্তাহেই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, জেলাগুলিকে দ্রুত ‘ম্যাপিং অ্যান্ড ম্যাচিং’ প্রক্রিয়া শেষ করার। এই প্রক্রিয়ায় ২০০২ সালের ভোটার তালিকা ও ২০২৫ সালের তালিকার মধ্যে তুলনা করে দেখা হবে, কোথায় কত পরিবর্তন হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি এসআইআর প্রক্রিয়াকে আরও নির্ভুল করতে সাহায্য করবে।
একই সঙ্গে ভোটার তালিকার স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে কমিশন চালু করেছে নতুন ‘ই-সাইন’ প্রযুক্তি। এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে অনলাইনে নাম নিবন্ধন, নাম বাদ দেওয়া বা সংশোধনের সময় আবেদনের প্রক্রিয়া আরও নির্ভুল এবং নিরাপদ করা হবে। এবার থেকে আবেদনকারীর আধার-সংযুক্ত মোবাইল নম্বর ছাড়া কোনও পরিবর্তন গ্রহণযোগ্য হবে না।
কমিশনের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ‘আগে যাচাই করা ছাড়া কেউ আবেদন জমা দিতে পারতেন। এখন থেকে স্বচ্ছতা বাড়বে এবং জালিয়াতির সুযোগ কমবে।’ নতুন এই ব্যবস্থা ভোটার তালিকাকে আরও নির্ভুল, স্বচ্ছ এবং নিরাপদ করার লক্ষ্য নিয়েছে কমিশন। কিন্তু এই বৈঠকে দেশের সব রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকদের কেন ডাকা হল? তাহলে কি বাংলা সহ একযোগে গোটা দেশজুড়ে এসআইআর শুরু হতে চলেছে? নাকি ই-সাইনিং ব্যবস্থার প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা সারতেই এই জাতীয় বৈঠক, তা নিয়ে এখনই নিশ্চিত করে কিছু বলা সম্ভব হচ্ছে না।
রাজনৈতিক মহল এখন এই দুই দিনের বৈঠকের ফলাফলের দিকে তাকিয়ে। বৈঠক শেষে বাংলায় সমীক্ষা শুরুর ঘোষণা হবে কি না, সেটাই এখন মূল প্রশ্ন। পাশাপাশি ই-সাইন প্রযুক্তির বাস্তবায়ন ভোটার তালিকার স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে।