লাদাখ বাঁচাতে চলছে অনশন-আন্দোলন, প্রতিশ্রুতি রাখেনি মোদি সরকার

নিজস্ব প্রতিনিধি— লাদাখের প্রকৃতিকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করার দাবিতে গত ১৫ দিন দরে আমরণ অনশন করছেন লাদাখের ম্যাগসাইসাই পুরস্কারপ্রাপ্ত পরিবেশকর্মী ও শিক্ষা সংস্কারক সোনম ওয়াংচুক৷ খোলা আকাশের নীচে মাইনাস ১২ থেকে ১৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের শীতের মধ্যে তাঁর সঙ্গে রাত জাগছেন আরও কয়েকশো স্থানীয় মানুষ৷ সোনম জানিয়েছেন, তিনি ২১ দিন এই অনশন চালিয়ে যাবেন৷ মহাত্মা গান্ধি ১৯৪৩ সালে ‘ভারত ছাড়ো’ আন্দালনের সময় ২১ দিন অনশন করেছিলেন৷ সেখান থেকে প্রেরণা পেয়েছেন তিনি৷

সোনম এদিন জানিয়েছেন, তাঁর ২১ দিনের অনশনের পর তিনি ১০ হাজার স্থানীয় মানুষকে সঙ্গে নিয়ে সীমান্ত পর্যন্ত হাঁটবেন৷ এর মাধ্যমে তিনি যে সত্য তুলে ধরতে চান, তা হলো— একদিকে কর্পোরেট সংস্থাগুলির অধিকারে চলে যাচ্ছে লাদাখের ভূমি এবং অন্যদিকে লাদাখের মাটিতে চিনা সৈন্যদের অনুপ্রবেশ রোখা৷ এই দুই বিষয়েই যথাযথ সুরক্ষা চান তাঁরা৷ লাদাখের ভূমি, পরিবেশ এবং স্থানীয় সংস্কৃতিকে বাঁচাতে তাঁরা বদ্ধপরিকর৷ তাঁদের সবচেয়ে বড় অভিযোগ, তাঁদের বিশ্বাস ভঙ্গ করেছে কেন্দ্রের মোদি সরকার৷

২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনে মোদি সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল লাদাখকে সংবিধানের ষষ্ঠ তফসিলের রক্ষাকবচ দেওয়া হবে৷ বিজেপির নির্বাচনী ইস্তাহারেও সে কথা উল্লেখ করা হয়েছিল৷ কিন্ত্ত সরকার সে প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেনি৷ ৩৭০ ধারা বাতিল করে জম্মু ও কাশ্মীর এবং লাদাখকে দু’টি কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলে ভাগ করে দেওয়া হয়েছে৷ জম্মু ও কাশ্মীরকে রাজ্যের মর্যাদা ফিরিয়ে দেওয়ার সুপ্রিম কোর্টের আদেশের পর লাদাখবাসীরাও লাদাখের পূর্ণ রাজ্য হিসেবে মর্যাদা দাবি করছেন৷ ষষ্ঠ তফসিলের আওতায় এলে লাদাখ রাজনৈতিক স্বায়ত্তশাসন ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা লাভ করবে৷ সেই সঙ্গে জনজাতির স্বার্থ ও সংস্কৃতি রক্ষা এবং জমি সংক্রান্ত আইন তৈরি করতে পারবে৷ কিন্ত্ত গত ৪ মার্চ মোদি সরকার স্পষ্টই জানিয়ে দিয়েছে, লাদাখকে ষষ্ঠ তফসিলের আওতায় আনা হবে না৷


লাদাখের মানুষ বিজেপিকে বিপুল ভোটে জয়ী করেছিল গত নির্বাচনে৷ ফলে তাঁদের প্রবলভাবে আশা ভঙ্গ হয়েছে৷ এমনকি এর ফলে লাদাখি সেনাদেরও মনোবল ভেঙে গিয়েছে বলে দাবি করেন সোনম ওয়াংচুক৷ সোনমের এই আন্দোলনের সমর্থনে কার্গিল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স (কেডিএ) বুধবার অর্ধদিবস সাধারণ ধর্মঘট পালন করেছে৷

সোনম সহ আন্দোলনকারীদের আরও দাবি, লেহ এবং কার্গিলের জন্য দু’টি লোকসভা আসন (এখন আছে একটি মাত্র লোকসভা আসন) এবং একটি আলাদা পাবলিক সার্ভিস কমিশন৷ সোনম বলেছেন, উন্নয়নের নামে প্রকৃতিকে নির্বিচারে ধ্বংস করার ফলে উত্তরাখণ্ড এবং হিমালয় অঞ্চলে যে ভয়ংকর প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ঘটনা ঘটেছে, লাদাখেও তার পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে কর্পোরেট সংস্থাকে পাহাড় এবং জমি বিক্রি করে দিলে৷ লাদাখ কেন্দ্রীয় শাসিত অঞ্চল থাকলে লাদাখবাসীদের এ বিষয়ে কোনও মতামত থাকবে না৷ সেখানে খনি খননের কাজও শুরু হয়ে যাবে৷ সব দিক থেকে বিপন্ন হতে চলেছে লাদাখের পরিবেশ, সংস্কৃতি ও মানুষের জীবন৷ আর এসবের বিরুদ্ধেই তাঁদের আন্দোলন৷