আরাবল্লীর ৯০% সুরক্ষিত থাকবে, বিতর্কের মুখে দাবি সরকারের

কেন্দ্রীয় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী ভূপেন্দ্র যাদব আরাবল্লী পর্বতশ্রেণির সুরক্ষা ব্যবস্থা দুর্বল করার দাবি খারিজ করে দিয়েছেন। তাঁর দাবি, আরাবল্লী পর্বতশ্রেণি নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য ও আতঙ্ক ছড়ানো হচ্ছে। পরিবেশ মন্ত্রকের তরফে বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানানো হয়েছে, অরণ্যের বিস্তৃতি, সংবেদনশীল অঞ্চল, ও খননের উপর কড়া নজরদারিতে আরাবল্লী পর্বতশ্রেণির ল্যান্ডস্কেপ ৯০ শতাংশ সুরক্ষিত থাকবে।

সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নের জবাবে পরিবেশমন্ত্রী আরও জোর দিয়ে বলেন যে, আরাবল্লী অঞ্চলের সুরক্ষার বিষয়ে কোনও ছাড় দেওয়া হয়নি। একই সঙ্গে দাবি করা হয়েছে, এই বিষয়ে ‘মিথ্যা’ প্রচার করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘ভুল তথ্য ছড়ানো বন্ধ করুন।’

মোদী সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, বন্ধুস্থানীয় শিল্পপতিদের স্বার্থে উত্তর ও পশ্চিম ভারতের ফুসফুস আরাবল্লী পর্বতশ্রেণি ধ্বংসের ব্লুপ্রিন্ট তৈরি করেছে এই সরকার। কয়লা ও নির্মাণ শিল্পে ব্যবহৃত পাথরের ভাণ্ডার আরাবল্লী। সেখানে খননকার্য চালানোর আইনি পথও খোলা রাখা হয়েছে। এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ হরিয়ানা, রাজস্থান, গুজরাতের পরিবেশপ্রেমী নাগরিকরা। এই নিয়ে বিতর্ক চরমে উঠতেই তার প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে মোদী সরকার।


সম্প্রতি এই বিষয়ে এক রায়ে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, আরাবল্লী পর্বতশ্রেণির ১০০ মিটার বা তার বেশি উচ্চতার ভূমি ও আশেপাশের ঢাল সম্পূর্ণ সুরক্ষিত রাখতে হবে। অর্থাৎ ১০০ মিটারের কম পর্বতমালা সংরক্ষণের আওতায় থাকবে না। এদিকে দাবি করা হয়েছে, আরাবল্লীর ৯০ শতাংশ পর্বতমালার উচ্চতা ১০০ মিটারের নিচে।

কেন্দ্রীয় পরিবেশমন্ত্রী ভূপেন্দ্র যাদব সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের ১০০ মিটার সংক্রান্ত নির্দেশের ভুল ব্যাখ্যা করা হচ্ছে। ফলে এই নিয়ে ভ্রান্তি না ছড়ানোই কাম্য। আরাবল্লীর মোট এলাকা ১ লক্ষ ৪৭ হাজার বর্গ কিলোমিটার। এর মধ্যে মাত্র ০.১৯ শতাংশ এলাকায় খননের অনুমতি দেওয়া হবে। ফলে আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী আরাবল্লীর ৯০ শতাংশ এলাকা সংরক্ষিত অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত এবং সেই নিয়ম কখনোই শিথিল করা হবে না।’

ভূ-প্রাকৃতিক দিক থেকে আরাবল্লীর গুরুত্ব অপরিসীম। এই পর্বতশ্রেণি হরিয়ানা, রাজস্থান, গুজরাত ও দিল্লি পর্যন্ত বিস্তৃত। এই অঞ্চলের জলের প্রধান উৎস ও জীববৈচিত্র্যও এই পর্বতমালার উপর নির্ভরশীল। এখান থেকেই উৎপত্তি হয়েছে চম্বল, সবরমতী, লুনি নদীর। থর মরুভূমি থেকে উড়ে আসা বালি রুখে দেয় এই আরাবল্লী। গত ২০০ কোটি বছর ধরে উত্তর ভারতের অন্যতম ঢাল হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে আরাবল্লী। এই পর্বতমালা না থাকলে দিল্লিও মরুভূমির কবলে চলে যেত। দিল্লির বায়ুদূষণ কমাতেও সাহায্য করে। এগুলি কোনওভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলে ওই এলাকার বাস্তুতন্ত্রের উপর গভীর প্রভাব পড়তে পারে।