কিটের অভাব চাপা দিতেই পরীক্ষা না করেই রােগীদের ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ কেন্দ্রের

পিপিই কিট (Photo: AFP)

করােনা পরীক্ষা নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের সর্বশেষ নির্দেশিকা নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। কারণ সারা দেশে করােনা সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা ক্রমবর্ধমান। এ হেন সময়ে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক জানিয়েছে, জ্বর, সর্দি কাশির মতাে মৃদু উপসর্গ নিয়ে ভর্তি হওয়া কোনও রােগী হাসপাতালে দশ দিন কাটানাের পর তাকে ছেড়ে দেওয়া হবে। তখন তার রিভার্স ট্রন্সক্রিপশন পিসিআর টেস্ট করানাের দরকার নেই। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির শরীরে কোভিড ১৯ বাসা বেঁধেছে কিনা তা পরীক্ষা না করার ফলে সংক্রমণের আশঙ্কা আরও বেড়ে যেতে পারে বলে চিকিৎসক মহল উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

শনিবার কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের নতুন নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, খুব মৃদু এবং কোনও উপসর্গ মেলেনি এমন রােগীর ক্ষেত্রে টানা তিন দিন জ্বর না এলে এবং তাদের অক্সিজেন দেওয়ার প্রয়ােজন না হলে হাসপাতালে দশ দিন কাটানাের পর ছেড়ে দেওয়া হবে। আর ছেড়ে দেওয়ার সময়ে কোনও রক্ত পরীক্ষা, আরটি পিসিআর টেস্ট করানাের প্রয়ােজন নেই। তবে বাড়িতে ফিরে গিয়ে তাদের এক সপ্তাহ আইসােলেশনে থাকতে হবে।

মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অরিন্দম বিশ্বাস জানিয়েছেন, দশ দিন বা চৌদ্দ দিন পর যে কোভিড ১৯’এর সংক্রমণ হবে না সে বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারেননি চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা। গবেষণা চলছে। এখনও শেষ হয়নি। কিন্তু এরই মধ্যে দশ দিন হাসপাতালে কাটানাের পর তাকে ছেড়ে দিলে তিনি যে করােনা সংক্রমিত নন, তা পরীক্ষা না করেই ছেড়ে দিলে আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। বিদেশে দশ বা চৌদ্দ দিন পরও করােনা সংক্রমণ ধরা পড়েছে। ফলে বাড়ি ফিরে যাওয়ার ফলে পরিবারের অন্য সদস্যদের সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকছে।


ভারতে করােনা সংক্রমণের সংখ্যা প্রায় ষাট হাজার। মৃত দুই হাজার। এ অবস্থায় এমন বিভ্রান্তিমূলক নির্দেশিকা জারি নিয়ে প্রশ্ন ওঠায়, স্বাস্থ্যমন্ত্রক সুত্রে জানানাে হয়েছে, রােগটি সম্পর্কে যেমন যেমন তথ্য পাওয়া যাচ্ছে সেই অনুযায়ী নির্দেশিকা জারি করা হচ্ছে। তবে অবস্থা যেমন পরিবর্তন হবে তেমনই নির্দেশিকাও পরিবর্তন করা হবে বলে জানানাে হয়েছে। মার্কিন

রােগ নিয়ন্ত্রণ এবং প্রতিরােধ সংস্থার গবেষণার সর্বশেষ ফলাফলের ওপরও নজর রাখা হচ্ছে। করােনা সংক্রমণে ভর্তি রােগীদের নিয়ে দেশের হাসপাতালগুলি যাতে অচলাবস্থার সৃষ্টি না হয় সে দিকে নজর রেখেই এমন নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে বলে মন্ত্রক সূত্রে জানানাে হয়েছে।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা এমন নির্দেশ জারিতে ক্ষোভ প্রকাশ করে জানিয়েছেন, পর্যাপ্ত সংখ্যায় কিট দিতে না পেরে কেন্দ্রীয় সরকার প্রকারান্তরে হাসপাতালের ওপর চাপ কমানাের অজুহাত সৃষ্টি করছে। ভারতে সঠিক মানের কিটের অভাবের কথা জানানাে সত্ত্বেও সরকারের পক্ষে এব্যাপারে কোনও উদ্যোগ নেওয়া হয় না বলে অরিন্দম অভিযােগ করেছেন। কিটের অভাবে বিষয়টি চাপা দিতেই ভর্তি হওয়া রােগীদের দশ দিন পর পরীক্ষা না করেই ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ জারি করা হয়েছে।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে এই সিদ্ধান্ত অত্যন্ত বিপজ্জনক পরিস্থিতি সৃষ্টি করবে। এর ফলে সংক্রমিত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসা সহকর্মী, পরিবারের সদস্য ও প্রতিবেশীরাও সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা। অবস্থা আয়ত্তের বাইরে চলে যেতে পারে।