দূষণে দমবন্ধ রাজধানীর, ‘দু’ দিন থাকলেই সংক্রমণ’ নিজের সরকারের দিকেই আঙুল তুললেন গড়করি

দিল্লির ভয়াবহ বায়ুদূষণ নিয়ে এবার কার্যত নিজের সরকারের ব্যর্থতাই প্রকাশ্যে স্বীকার করলেন কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক মন্ত্রী নীতিন গড়করি। বুধবার একটি অনুষ্ঠানে তিনি বলেন,‘আমি মাত্র দুদিন দিল্লিতে থাকি, আর তাতেই সংক্রমণ হয়ে যায়।‘  রাজধানীতে বিজেপি ক্ষমতায় থাকা সত্ত্বেও গড়করির এই মন্তব্য রাজনৈতিক মহলে যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। একই দিনে দিল্লির দূষণ পরিস্থিতি নিয়ে কেন্দ্রের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলল দিল্লি হাই কোর্ট।

বর্ষীয়ান সাংবাদিক উদয় মাহুরকরের একটি বইয়ের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে গড়করি বলেন, বর্তমান সময়ে দেশের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব হল রপ্তানি বৃদ্ধি এবং আমদানি কমানো। সেই প্রসঙ্গ টেনে তিনি প্রশ্ন তোলেন, কেন দিল্লি আজ এইরকম  ভয়াবহ দূষণের কবলে। নিজের মন্ত্রকের দায়ও এড়াননি তিনি।গড়করি স্বীকার করেন, দেশের মোট দূষণের প্রায় ৪০ শতাংশের জন্য পরিবহণ ব্যবস্থাই দায়ী। জীবাশ্ম জ্বালানির উপর নির্ভরতার কারণেই পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠছে বলে তাঁর মত।

কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বলেছেন, আমরা বছরে প্রায় ২২ লক্ষ কোটি টাকা ব্যয় করে জীবাশ্ম জ্বালানি আমদানি করছি যা দূষণ বাড়াচ্ছে।তাঁর প্রশ্ন, এই ধরনের অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত ক্ষতি আদৌ জাতীয়তাবাদী চিন্তার সঙ্গে মানানসই কি না। একই সঙ্গে তিনি আক্ষেপ করেন, মানুষ এখনও পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি এবং বিকল্প জ্বালানি ব্যবহারে আগ্রহী নন। জৈব জ্বালানি ও বিকল্প শক্তির মাধ্যমে আত্মনির্ভর ভারত গড়ে তোলার  আহ্বানও জানান তিনি।


এদিকে রাজধানীর বায়ুদূষণ নিয়ে সরব হয়েছে দিল্লি হাই কোর্ট। সোমবার দূষণ সংক্রান্ত একটি জনস্বার্থ মামলার শুনানি হয় প্রধান বিচারপতি দেবেন্দ্র কুমার উপাধ্যায় ও বিচারপতি তুষার রাও গেদেলার বেঞ্চে। মামলাকারীদের দাবি, বর্তমান ভয়াবহ পরিস্থিতিতে বায়ু শোধনকারী যন্ত্র বা এয়ার পিউরিফায়ারকে ‘মেডিক্যাল ডিভাইস হিসেবে বিবেচনা করে সেগুলির উপর জিএসটি কমানো হোক।

বর্তমানে এয়ার পিউরিফায়ারের উপর ১৮ শতাংশ জিএসটি বসানো হয়। আদালতের পর্যবেক্ষণ, প্রত্যেকে দিনে গড়ে প্রায় ২১ হাজার বার শ্বাস নেন। এই পরিস্থিতিতে দূষিত বাতাসে শ্বাসপ্রশ্বাস নেওয়া যে কতটা মারাত্মক, তা সহজেই অনুমান করা যায়।আদালত মন্তব্য করেছে, প্রত্যেক নাগরিকের বিশুদ্ধ বাতাস পাওয়ার অধিকার  রয়েছে। যদি কেন্দ্র সেই অধিকার নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়, তবে অন্তত সাময়িকভাবে বায়ু শোধনকারী যন্ত্রের উপর জিএসটি কমিয়ে সাধারণ মানুষকে স্বস্তি দেওয়া যেতে পারে।

হাই কোর্ট কেন্দ্রকে প্রস্তাব দেয়, জরুরি পরিস্থিতি বিবেচনা করে অন্তত ১৫ দিনের জন্য জিএসটিতে ছাড় দেওয়া হোক। এই বিষয়ে কেন্দ্রের মতামত জানাতে বলা হয়েছে। গড়করির বক্তব্য এবং আদালতের কড়া মন্তব্য মিলিয়ে একথা স্পষ্ট যে দিল্লির বায়ুদূষণ আর শুধু পরিবেশগত সমস্যা নয়, তা এখন জনস্বাস্থ্য ও  নীতিগত সঙ্কটে পরিণত হয়েছে।