২০০৬ সালের মুম্বই লোকাল ট্রেন বিস্ফোরণ মামলায় বম্বে হাইকোর্ট ১২ জন দোষীর বেকসুর খালাসের নির্দেশ দিয়েছিল। সেই রায়ে আপাতত স্থগিতাদেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট। বৃহস্পতিবার বিচারপতি এমএম সুন্দরেশ ও এন কোটিশ্বর সিংহের বেঞ্চ জানায়, হাইকোর্টের রায়কে দৃষ্টান্ত হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না। পাশাপাশি, অভিযুক্ত ১২ জনকে নোটিশ পাঠানোর নির্দেশও দিয়েছে শীর্ষ আদালত। অবশ্য হাইকোর্টের রায় অনুযায়ী যে ১২ জন ইতিমধ্যেই জেলমুক্ত হয়েছেন, তাঁদের আবার কারাগারে ফেরানোর বিষয়ে কোনও নির্দেশ দেয়নি শীর্ষ আদালত। ফলে তাঁরা আপাতত মুক্ত অবস্থাতেই থাকবেন।
মহারাষ্ট্র সরকার হাইকোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানায়। কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা এই মামলায় হস্তক্ষেপ করেন। তিনি রায়ের ওপর স্থগিতাদেশ চাইলেও, জেলমুক্ত অভিযুক্তদের ফের গ্রেপ্তারের বিষয়টি তোলেননি। বৃহস্পতিবার বিচারপতি এমএম সুন্দরেশ এবং বিচারপতি এন কোটিশ্বর সিং-এর বেঞ্চ জানিয়েছে, হাইকোর্টের এই রায়কে নজির হিসেবে গণ্য করা হবে না এবং মামলার সমস্ত অভিযুক্তকে নতুন করে নোটিশ জারি হবে।
জেনারেল তুষার মেহতা বলেন, ‘আমি ১২ জনকে ফের গ্রেপ্তার করার কোনও নির্দেশ চাইছি না। বরং এই রায়ে স্থগিতাদেশ চাইছি। কারণ, এই রায়ে হাইকোর্টের কিছু পর্যবেক্ষণ ‘মহারাষ্ট্র কন্ট্রোল অফ অর্গানাইজড ক্রাইম অ্যাক্ট’-এর অধীনে থাকা অন্য মামলার বিচারে প্রভাব ফেলতে পারে।’ এরপর বিচারপতি এমএম সুন্দরেশ এবং বিচারপতি এন কোটিশ্বর সিং-এর বেঞ্চ জানায়, ‘আইনের প্রশ্নে সলিসিটর জেনারেলের বক্তব্যের প্রতি লক্ষ্য রেখে, আমরা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছতে চাইছি, বিতর্কিত রায়কে নজির হিসেবে বিবেচনা করা হবে না। তাই, বিতর্কিত রায়ের একাংশের উপর স্থগিতাদেশ।’
প্রসঙ্গত, ২০০৬ সালের ১১ জুলাই সন্ধ্যায় মুম্বইয়ের লোকাল ট্রেনগুলিতে পর পর ছয়টি বিস্ফোরণ হয়। ১১ মিনিটের মধ্যে ঘটে ওই হামলা। মৃত্যু হয় ১৮৯ জন যাত্রীর, আহত হন ৮০০-রও বেশি। বিস্ফোরণগুলি ঘটেছিল ভিড়ে ঠাসা অফিসফেরত ট্রেনের কামরাগুলিতে। ঘটনার তদন্তে নেমে মুম্বই পুলিশ বেশ কয়েক জনকে গ্রেফতার করে।
২০১৫ সালে এক বিশেষ আদালত এই মামলায় ১২ জনকে দোষী সাব্যস্ত করে। এর মধ্যে ফয়জল শেখ, আসিফ খান, কমল আনসারি, ইথশাম সিদ্দিকি ও নভেদ খানকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। বাকি সাত জনকে আজীবন কারাদণ্ডের সাজা শোনানো হয়।
সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে অভিযুক্তরা বম্বে হাইকোর্টে আবেদন জানান। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে পর্যাপ্ত তথ্যপ্রমাণ নেই উল্লেখ করে তাঁদের বেকসুর খালাসের নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। সেই রায়ের একাংশের উপর এবার স্থগিতাদেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট। মামলার পরবর্তী শুনানি কবে হবে, তা এখনও নির্ধারিত হয়নি।