খসড়া ও চূড়ান্ত ভোটার তালিকার পার্থক্য নিয়ে প্রশ্ন সুপ্রিম কোর্টের

প্রতীকী চিত্র

খসড়া ও চূড়ান্ত ভোটার তালিকার মধ্যে পার্থক্য নিয়ে মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশনকে কড়া প্রশ্নের মুখে দাঁড় করাল সুপ্রিম কোর্ট। বিশেষ করে বিহারে ভোটার তালিকার ‘স্পেশাল ইন্টেন্সিভ রিভিশন’ বা নিবিড় ভোটার সমীক্ষার প্রক্রিয়ায় বহু ভোটারের নাম বাদ বা নতুনভাবে অন্তর্ভুক্ত হওয়া নিয়ে তথ্য চেয়েছে শীর্ষ আদালত।

এদিন শুনানির সময় বিচারপতি বাগচী বলেন, ‘গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় এ ধরনের বিভ্রান্তি ঠিক নয়। খসড়া ও চূড়ান্ত তালিকার মধ্যে স্পষ্ট পার্থক্য থাকতে হবে। যদি কারো নাম না-জানিয়ে বাদ দেওয়া হয়, তার তথ্য আদালতে আনতে হবে। সেইমতো কমিশনকে নির্দেশ দেওয়া হবে।’ মামলাকারীর আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ আদালতে জানান, ‘৬৫ লক্ষের বেশি ভোটারের নাম তালিকা থেকে বাদ গিয়েছে। নতুন নাম অন্তর্ভুক্তির বিষয়েও স্বচ্ছতা থাকা দরকার।’

বিচারপতি সূর্য কান্ত বলেন, ‘তালিকায় ৩.৬৬ লক্ষ নাম প্রকাশ করা হয়নি, এর কারণও জানাতে হবে। ভোটার তালিকা প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে।’ তিনি অভিযোগপত্র দাখিলের জন্য আবেদনকারীর আইনজীবীদের নির্দেশ দেন, যাতে তারা বিস্তারিত তালিকা ও তথ্য আদালতে জমা দেন। এই মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে আগামী ১৪ অক্টোবর।


প্রসঙ্গত, গত শুনানিতে সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল, এ মামলার রায় শুধু বিহারের জন্য নয়, দেশের সমস্ত জায়গায় এসআইআর প্রক্রিয়ায় প্রযোজ্য হবে। আদালত জানিয়েছে, আধার কার্ডকে ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্তির জন্য ব্যবহার করা যাবে। কিন্তু নাগরিকত্বের প্রমাণ হিসাবে গ্রহণযোগ্য নয়।

এদিকে নির্বাচন কমিশন বিহারে ভোট প্রক্রিয়ায় নতুন নিয়ম চালু করেছে। প্রতিটি কেন্দ্রে ১২০০ জন ভোটারের সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। তাঁদের সঙ্গে মোবাইল ফোন নেওয়ার সুযোগ থাকবে। বুথে ওয়েবকাস্টিং ব্যবস্থা চালু হবে। পরিচয়পত্র প্রক্রিয়া আরও সহজ হবে। সব মিলিয়ে নির্বাচন প্রক্রিয়া আরও স্বচ্ছ ও আধুনিক হবে বলে আশা প্রকাশ করেছে কমিশন।

এদিন সুপ্রিম কোর্টে চলা শুনানিতে মামলাকারীর আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ আদালতে জানান, স্পেশাল ইন্টেন্সিভ রিভিশন (এসআইআর) প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মুসলিম ও নারীদের ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার একটি কৌশল নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘এই প্রক্রিয়া একটি গভীর সমস্যা সৃষ্টি করেছে। আদালতের নির্দেশ মেনে ৬৫ লক্ষ ভোটারের নাম পুনরায় প্রকাশ করা হয়েছে। কিন্তু এর বাইরে আরও অনেক ভোটারের নাম তালিকা থেকে বাদ রয়েছে।’

ভূষণ আরও জানান, ‘অভিযোগের ভিত্তিতে বাতিল হওয়া ৩.৬৬ লক্ষ ভোটারের নাম এখনও প্রকাশ করা হয়নি।’ এই দাবিতে সুপ্রিম কোর্ট নির্বাচন কমিশনের কাছে স্পষ্ট ব্যাখ্যা চেয়েছে এবং বিষয়টি যাচাইয়ের নির্দেশ দিয়েছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই অভিযোগ শুধু বিহারের ভোট প্রক্রিয়াকেই নয়, সমগ্র দেশের ভোটার তালিকা ব্যবস্থাকে প্রভাবিত করার মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু তৈরি করেছে।