সুপ্রিম কোর্ট আরজি কর কাণ্ড নিয়ে স্বতঃপ্রণোদিত মামলা দায়ের করেছিল। এবার কর্মক্ষেত্রে চিকিৎসক–ছাত্রীর ধর্ষণ এবং খুন সংক্রান্ত মামলা কলকাতা হাইকোর্টে পাঠিয়ে দেওয়া হল শীর্ষ আদালত থেকে। বুধবার সুপ্রিম কোর্টের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, এবার থেকে আরজি কর মামলার শুনানি হবে কলকাতা হাই কোর্টে।
বুধবার সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি এমএম সুন্দরেশ এবং বিচারপতি সতীশচন্দ্র শর্মার ডিভিশন বেঞ্চ আরজি কর কাণ্ড সংক্রান্ত মামলার সমস্ত নথিপত্র হাই কোর্টে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে পাশাপাশি, সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে নির্যাতিতার বাবা-মাকে এই মামলার স্টেটাস রিপোর্টের একটি প্রতিলিপি দিতে হবে।
২০২৪ সালের ৯ আগস্ট আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে এক চিকিৎসক ছাত্রীকে ধর্ষণ এবং হত্যা করা হয়। সেই ঘটনার জেরে পরের দিন গ্রেপ্তার হন সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়। এই ঘটনার মূল অভিযুক্তকে প্রাথমিক পর্যায়ে দোষী সাব্যস্ত করার পাশাপাশি সুপ্রিম কোর্ট আরও অনেকগুলি বিষয় নিয়ে একাধিক নির্দেশ দেয়। আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের হাসপাতালে না থাকার মতন ঘটনাও তাদের পর্যবেক্ষণের অন্তর্গত ছিল।
স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে এই মামলা দায়ের করার পর গত বছরের ২০ আগস্ট জাতীয় টাস্ক ফোর্স (এনটিএফ) গঠন করার নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট। এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে কর্মক্ষেত্রে চিকিৎসকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য।চলতি বছরের ১৮ জানুয়ারি আরজি কর কাণ্ড সংক্রান্ত মামলার রায় ঘোষণা করেছিল শিয়ালদহ আদালত। সেই রায়ে দোষী সাব্যস্ত করা হয় সঞ্জয়কে। বিচারক অনির্বাণ দাস ২০ জানুয়ারি সঞ্জয়ের যাবজ্জীবন কারাবাসের নির্দেশ দেন। কিন্তু শিয়ালদহ আদালতের পক্ষ থেকে রায় দেওয়ার আগে হাই কোর্টে নির্যাতিতার মা-বাবা একটি আবেদন করেছিলেন। সিবিআই তদন্ত সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রশ্ন তুলে হাইকোর্টের বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষের বেঞ্চে আবেদন করেন নির্যাতিতার মা-বাবা।
যেহেতু সুপ্রিম কোর্টেও সেই সময় আরজি কর মামলার শুনানি চলছিল তাই বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ সেই সময় নির্যাতিতার পরিবারের ওই আবেদন শুনতে চাননি। এর পরে নির্যাতিতার মা-বাবা সুপ্রিম কোর্টেও একই আবেদন করেন । সেই আবেদনের ভিত্তিতেও শুনানি হয়। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খন্না তখন প্রশ্ন তোলেন যে, একই আবেদন নিয়ে কেন সুপ্রিম কোর্টেও শুনানি হবে। তাঁর বক্তব্য ছিল, একই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে দু’টি আদালতে একসঙ্গে শুনানি চলতে পারে না। হয় হাইকোর্টে শুনানি হবে আর নয়তো শুনানি হবে সুপ্রিম কোর্টে।
নির্যাতিতার বাবা-মা মাত্র দুদিন আগে তাঁদের মেয়ের ধর্ষণ ও খুনের তদন্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। তাঁরা দাবি করেছেন তাঁদের সন্তানের মৃত্যুর সঙ্গে একাধিক অপরাধী জড়িত। গত সোমবার নির্যাতিতার মা জানিয়েছেন যে তাঁদের আর কিছু চাওয়ার বা পাওয়ার নেই। তাঁরা মেয়ের মৃত্যুর বিচার ছিনিয়ে নেবেন। প্রয়োজনে আইন নিজের হাতে তুলে নিতেও পিছপা হবেন না। নির্যাতিতার মায়ের কথায় তাঁর বাবাও সায় দেন।