বাবরি মামলা নিষ্পত্তিতে আরও ছয় মাসের সময় চেয়েছেন বিশেষ বিচারক

বাবরি মসজিদ (File Photo: IANS)

বাবরি মসজিদ ধ্বংস মামলার শুনানি শেষ করতে আরও ছয় মাস অতিরিক্ত চেয়েছেন বিশেষ আদালতের বিচারক। বিশেষ বিচারক এক চিঠিতে সুপ্রিম কোর্টের কাছে জানিয়েছে, ৩০ সেপ্টেম্বর তাঁর অবসরের তারিখ। তাই আরও ছয় মাস সময় দেওয়া হােক যাতে মামলার প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করা যায়।

এর আগে সুপ্রিম কোর্ট সিবিআইকে ভর্তসনা করেছে পঁচিশ বছর ধরে মামলাটি চালানাের জন্য। উল্লেখ্য বাবরি মসজিদ ধ্বংস মামলায় বিজেপির বরিষ্ঠ নেতা লালাকৃষ্ণ আদবানি, মুরলি মনােহর যােশী এবং অন্যান্যরা যুক্ত। সােমবার এই মামলার শুনানি হয় বিচারপতি আর এফ নরিম্যানের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চের সামনে।

বিচারপতি নরিম্যান উত্তর প্রদেশ সরকারকে বিশেষ বিচারকের কার্যকালের মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন, যতদিন না এই গুরুত্বপূর্ণ মামলার রায়দান সম্পূর্ণ করতে পারেন এবং সে বিষয়ে সরকার কি ব্যবস্থা গ্রহণ করল তা ১৯ জুলাই সুপ্রিম কোর্টে জানানাের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।


এর আগের ১৯ এপ্রিল ২০১৭ তারিখে এক নির্দেশে সুপ্রিম কোর্ট ১৯৯২ বাবরি মসজিদ ধ্বংস মামলাটি দুই বছরের মধ্যে নিষ্পত্তি করার জন্য প্রতিদিন শুনানি গ্রহণের আদেশ জারি করেছিল।

ঐতিহাসিক সৌধ ধ্বংসকে এক ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে গণ্য করে মামলাটির সঙ্গে যুক্ত একটি দলের বরিষ্ঠ নেতাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি ষড়যন্ত্রের অভিযােগে মামলাটি পুনরায় চালু করার সিবিআইয়ের আবেদন মঞ্জুর করে সুপ্রিম কোর্ট। তবে তৎকালীন সময়ে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী কল্যাণ সিং বর্তমানে রাজস্থানের রাজ্যপালের পদে থাকায় সাংবিধানিক সুবিধা পাবেন। তাঁর বিরুদ্ধে আপাতত কোনও ব্যবস্থা গ্রহণের কোনও সুপারিশ আদালতে করা যাবে না বলে সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দেয়। কল্যাণ সিংয়ের মুখ্যমন্ত্রীত্বকালেই বাবরি মসজিদ ধ্বংসের কাজটি সংঘটিত হয়।

সুপ্রিম কোর্ট মামলাটি দীর্ঘ পচিশ বছর ধরে চালানাের প্রধান জন্য সিবিআইকে তীব্র ভৎসনা করে। কারণ ধ্বংসের সঙ্গে জড়িতরা একটি দলের প্রথমসারির নেতা নেত্রী হওয়ায় সিবিআই তাদের বিরুদ্ধে চার্জ সিট গঠনে অযথা বিলম্ব ঘটাচ্ছে বলে সুপ্রিম কোর্টের পক্ষে মন্তব্য করা হয়েছে । এই রােগ সহজেই নিরাময় করা যেত কিন্তু রাজ্যসরকার এই রােগ নিরাময়ে কোনও উদ্যোগ নিচ্ছে না বলে সর্বোচ্চ আদালত চরম অসন্তোষ প্রকাশ করেছে।

সুপ্রিম মামলাটির দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য লালকৃষ্ণ আদবানি ও অন্যান্য পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলাটির শুনানির জন্য রায়বেরিলির স্পেশাল জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালত থেকে লখনউয়ের অ্যাডিশনাল সেশন জজের আদালতে (অযােধ্যা সম্পর্কিত) স্থানান্তর করার নির্দেশ দেয় । তিন নেতা ছাড়াও আর যাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযােগ আনা হয়েছে, তারা হলেন বিনয় কাটিয়ার , স্বাধ্বী রীতম্বরা , বিষ্ণুহরি ডালমিয়া। এদের বিরুদ্ধে রায়বেরিলিতে শুনানি হয়েছে।

এছাড়া সিবিআইয়ের দাখিল কার যুগ্ম চার্জসিটে চম্পতরাই বনসাল, সতীশ প্রধান, ধরম দাস, মহান্ত নৃত্যগােপাল দাস, মহামদলেশ্বর জগদীশ মুনি, রামবিলাস বাদান্তি, বৈকুণ্ঠ লাল শর্মা এবং সতীশ নন্দ্র নাগরের বিরুদ্ধে ১২০বি (ষড়যন্ত্র) অধীনে অতিরিক্ত অভিযােগ দায়ের করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সেশন কোর্টকে।

কোনও কারণে শুনানি স্থগিত হলে পরের দিন বা অব্যবহিতভাবে পরবর্তী সময়ে শুনানি শুরু করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং শুনানির ক্ষেত্রে কেন বিলম্ব হল তার কারণ লিখে রাখতে হবে। সেকারণে সিবিআইকে প্রত্যেক দিন সাক্ষীদের হাজির রাখতে হবে, কারণ সাক্ষী না থাকার কারণে যাতে আদালতের শুনানি স্থগিত না হয়ে যায় সেটা নিশ্চিত করতে হবে। অ্যাপেক্স কোর্ট ১২ ফেব্রুয়ারি ২০০১ তারিখে এলাহাবাদ হাইকোর্টের লালকৃষ্ণ আদবানি ও অন্যান্যদের বিরুদ্ধে যড়যন্ত্রের মামলা খারিজ করার নির্দেশের বিষয়টিকে ত্রুটিপূর্ণ বলে অভিহিত করেছে। এমন আটজন প্রধানসারির নেতৃত্বের মধ্যে গিরিরাজ কিশাের এবং বিশ্ব হিন্দু পরিষদের প্রধান অশােক সিংঘল মামলা চলাকালীন সময়ে প্রয়াত হয়েছেন।