নির্ভুল এনআরসি তালিকা তৈরির নির্দেশ সুপ্রিম কোর্টের

এনআরসি শুনানি কেন্দ্রের বাইরের চিত্র (Photo: IANS)

ত্রিশ বছর ধরে ভারতীয় সেনা বাহিনীতে থাকার পর সীমান্ত পুলিশের সাব ইনস্পেক্টর অসমের বাসিন্দা মহম্মদ সনাউল্লাহর নাম নেই এনআরসি তালিকায়।

কার্গিল যুদ্ধে দেশের হয়ে লড়াইয়ের পর এনআরসিতে নাম না থাকায় তাঁকে পাঠান হয়েছে ডিটেনশন ক্যাম্পে। এদিন এনআরসি মামলার শুনানিতে শুক্রবার সুপ্রিম কোর্ট অসমের এনআরসি দফতরকে ধীরে চলার নির্দেশ দিল।

সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ এবং বিচারপতি অনিরুদ্ধ বোসের অবসরকালীন বেঞ্চ জানিয়েছেন, এনআরসি চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করার জন্য তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে যাতে কোনও ভুল না হয়। তারজন্য অসমের এনআরসি দফতরকে সতর্ক করলো সুপ্রিম কোর্ট।


আদালত এনআরসি’র চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের সময় আরও এক সপ্তাহ পিছিয়ে দিল। ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে জাতীয় নাগরিকপঞ্জীর চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করার নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। সেই সঙ্গে যে আড়াই লক্ষ দাবি জমা পড়েছে তার নিষ্পত্তিও করতে হবে এনআরসি দফতরকে।

প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ আজ অসমের এনআরসি দফতরের কোঅর্ডিনেটর প্রতীক হাজেলাকে নির্দেশ দেয় দ্রুত এনআরসি প্রকাশের অজুহাতে কোনও গাফিলতি করা যাবে না। যাদের নাগরিকত্ব নিয়ে আপত্তি এসেছে তাদের নাগরিকত্ব প্রমাণের সুযােগ দিতে হবে। এনআরসি তে যাতে নাম তােলা যায় সে সুযােগ দিতে হবে।

প্রধান বিচারপতির মতে সংবাদে যা বেরচ্ছে সবই মিথ্যা বা অতিরঞ্জিত হতে পারে না। গােটা প্রক্রিয়াতে স্বচ্ছতা রাখতে হবে। এনআরসি কোঅর্ডিনেটর প্রকাশ হাজেলা অতিরিক্ত খসড়া প্রকাশ করতে আরও ৭ দিন সময় চেয়েছিলেন। প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ তা মেনে নিয়েছেন। ফলে খসড়া প্রকাশিত হবে ২২ জুন।

কার্গিল যুদ্ধে দেশের হয়ে লড়াই করেছিলেন তিনি। অথচ বিজেপি-শাসিত অসমে সেই প্রাক্তন লেফটেন্যান্ট মহম্মদ সানাউল্লাহকে চিহ্নিত করা হল। তাঁকে গােয়ালপাড়া ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠানাে হয়েছে। এই রায়ের বিরুদ্ধেই হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন তাঁর পরিজনেরা।

১৯৬৭ সালে মহম্মদ সানাউল্লাহর জন্ম। তিনি সেনাবাহিনীতে যােগ দেন ১৯৮৭ সালে। রাষ্ট্রপতি পুরস্কারও পেয়েছিলেন তিনি। ৩০ বছর সেনাবাহিনীতে থাকার পর ২০১৭ সালে অবসর নেন। এরপর তিনি এএসআই হিসেবে সীমান্ত শাখায় যােগ দেন।

তাঁর সব তথ্যপ্রমাণই জমা দেওয়া হয়েছিল। সেনাবাহিনী ও পুলিশে যােগ দেওয়ার সময় তাঁর নাগরিক যাচাই করা হয়। তবে বিচারক জানান, সানাউল্লাহ ১৯৭৮ সালে যােগদানের কথা বলেছিলেন। তাই ভুল তথ্য দেওয়ার অপরাধেই তাঁকে বিদেশি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

অন্যমনস্কতায় সানাউল্লাহ ভুল তথ্য দিয়ে ফেলেছেন বলেই দাবি অবসরপ্রাপ্ত সুবেদার আজমল হকের। তাঁর অভিযােগ, আদালত জোর করে দেশের জন্য কাজ করা এক প্রাক্তন সেনাকর্মী ও রাজ্য পুলিশের এএসআই’কে বিদেশি বলে চিহ্নিত করেছে। নির্ভুল আপাতত তাঁকে গােয়ালপাড়া ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠানাে হয়েছে।

এই রায়ের বিরুদ্ধে গৌহাটি হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন সানাউল্লাহর পরিজনরা। ভারতীয় প্রমাণ হওয়ার পরেও বহু মানুষের নামের আগে জুড়েছে ‘ডি’ ভােটারের তকমা। বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রধানমন্ত্রী এবং রাষ্ট্রপতির কাছেও স্মারকলিপি পাঠিয়েছেন অপমানিত সেনাকর্মীরা। তারই মাঝে ৫২ বছর বয়সী সানাউল্লাহ ‘বিদেশি’ ঘােষিত হওয়ায় অসন্তোষের আগুনে যেন ঘি পড়েছে।

এই ঘটনার পর সানাউল্লার স্ত্রী, দুই মেয়ে ও এক ছেলের নামও এনআরসি থেকে বাদ পড়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। লােকসভা নির্বাচনের আবহে সেনাদের ভূমিকাকে হাতিয়ার করে বারবার প্রচার করতে দেখা গিয়েছে নরেন্দ্র মােদিকে। অথচ বিজেপি শাসিত অসমেই কার্গিল যুদ্ধের সেনাকে বিদেশি বলে চিহ্নিতকরণ মােটেও ভালাে চোখে দেখছে না রাজনীতিকদের একাংশ।