মণিপুরে জাতিগত হিংসা শুরু হওয়ার প্রায় দু’বছর পর রবিবার রাতে বীরেন সিং তাঁর মন্ত্রী পরিষদ-সহ মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। রাজ্যপাল অজয় কুমার ভাল্লা তাঁর পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছেন, কিন্তু বিকল্প ব্যবস্থা না হওয়া পর্যন্ত তাঁকে পদে বহাল থাকার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন। এদিকে বীরেন সিংয়ের পদত্যাগের পর এ বার তাঁর বিকল্পের খোঁজ করাই এখন সব থকে বড় টাস্ক বিজেপির কাছে। মণিপুরে কোনও দলের হাতেই সংখ্যাগরিষ্ঠ বিধায়ক না থাকায় মুখ্যমন্ত্রী পদে বসার উপযুক্ত নেতৃত্ব পাওয়া যাচ্ছে না। সে ক্ষেত্রে এই রাজ্যে জারি হতে পারে রাষ্ট্রপতি শাসন। তবে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য শীর্ষ নেতৃত্ব অপেক্ষা করবেন বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহলের একাংশ।
এদিকে মণিপুরের ঘটনার দায়ভার কাঁধে নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের পদত্যাগ করা উচিত বলে দাবি করেছেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এবং রাজ্যসভায় কংগ্রেসের সাংসদ জয়রাম রমেশ। তাঁর আরও দাবি, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মণিপুরে যাওয়া উচিত।
২০২৩ সালের মে মাস থেকে কুকি এবং মেইতেইদের মধ্যে জাতিগত হিংসার কারণে ২৫০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত এবং হাজার হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। বিরোধীদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল পদত্যাগ করুন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু তা সত্ত্বেও নিজের পদে বহাল ছিলেন বীরেন সিং। তবে রবিবার পদত্যাগের পর যতক্ষণ না পর্যন্ত বিকল্প কোনও ব্যবস্থা হচ্ছে, ততক্ষণ বীরেন সিংয়ের কাঁধেই থাকবে মণিপুরের প্রশাসনিক ভার। ইম্ফল রাজভবনের পক্ষ থেকে একটি বিবৃতি দিয়ে মণিপুরের রাজ্যপাল অজয় কুমার ভাল্লা বীরেন সিংকে কেয়ারটেকার মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে কাজ চালানোর নির্দেশ দিয়েছেন। সূত্রের খবর, রবিবার রাতেই দিল্লিতে মণিপুরের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠক করে কেন্দ্রীয় সরকার। কিছু প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্তও জানানো হয়েছে রাজ্যপালকে। তবে যেহেতু এখনও পর্যন্ত এমন কোনও নেতা নেই যিনি দলের সংখ্যাগরিষ্ঠ বিধায়কদের সমর্থন পাবেন, তাই কেন্দ্রীয় সরকারকে মণিপুরে রাষ্ট্রপতির শাসন জারি করতে হতে পারে। জানা গিয়েছে, রাজ্যপাল অজয় কুমার ভাল্লা কয়েক দিনের মধ্যেই কেন্দ্রকে মণিপুরের পরিস্থিতি নিয়ে একটি বিস্তারিত রিপোর্ট জমা দেবেন। তার উপর ভিত্তি করেই রাষ্ট্রপতি শাসনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
জানা গিয়েছে, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে দেখা করে দিল্লি থেকে ফিরে আসার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন বীরেন সিং। শীর্ষ নেতৃত্বের আশা, বীরেন সিংয়ের পদত্যাগ সম্প্রদায়গুলির মধ্যে বিভেদ দূর করার প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করবে। একই সঙ্গে এই দীর্ঘমেয়াদী সংঘাতের স্থায়ী সমাধানের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের সদিচ্ছাও প্রকাশ পাবে।
এদিকে এই সপ্তাহের শুরুতে সুপ্রিম কোর্ট সেন্ট্রাল ফরেনসিক সায়েন্স ল্যাবরেটরি থেকে জাতিগত হিংসায় বীরেন সিংয়ের মদত দেওয়ার অভিযোগে ফাঁস হওয়া অডিও ক্লিপগুলির সত্যতা সত্যতা সম্পর্কে জানতে চেয়ে প্রমাণ চেয়েছে। আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণের প্রতিনিধিত্বকারী কুকি অর্গানাইজেশন ফর হিউম্যান রাইটস ট্রাস্ট এই বিষয়ে আদালতের তত্ত্বাবধানে সিট তদন্তের দাবি জানায়। অডিও ফাঁসের কথা উল্লেখ করে ভূষণ বলেন যে, ক্লিপগুলিতে বীরেন সিং বলেছেন যে, মেইতেই গোষ্ঠীগুলিকে রাজ্য সরকারের অস্ত্র ও গোলাবারুদ লোপাট করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
বীরেন সিংয়ের পদত্যাগের পর সকলের নজর এখন মণিপুরের পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী কে হবে তা নিয়ে। মুখ্যমন্ত্রী পদের জন্য এগিয়ে থাকার দৌড়ে রয়েছেন মণিপুরের স্পিকার থোকচোম সত্যব্রত সিং এবং গ্রামীণ উন্নয়ন ও পঞ্চায়েতি রাজ মন্ত্রী ইউমনাম খেমচাঁদ। সিংয়ের পদত্যাগের আগে দুই জনকেই দিল্লিতে ডাকা হয়েছিল। অন্য একজন শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী হলেন টি বিশ্বজিত সিং, তিনি একজন ক্যাবিনেট মন্ত্রী।
সংবিধানের ৩৫৬ ধারা অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতি শাসনের ঘোষণা করার জন্য সংসদের দুই কক্ষেই প্রস্তাব রাখতে হবে। দু’মাসের মধ্যে তা না করা হলে রাষ্ট্রপতি শাসনের মেয়াদ ফুরিয়ে যাবে। সূত্রের খবর, কেন্দ্র এখন কিছুটা সময় চাইছে। তবে যতক্ষণ না পর্যন্ত যোগ্য মুখ্যমন্ত্রী মুখ পাওয়া যাচ্ছে, চার থেকে পাঁচ মাস জারি থাকতে পারে রাষ্ট্রপতি শাসন।