কংগ্রেসের ভরসা সেই সোনিয়াই

সোনিয়া গান্ধি (File Photo: Twitter | @INCIndia)

কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটি সোমবার বৈঠকে বসেছিল সোনিয়া গান্ধির উত্তরসূরী খুঁজতে। এই বৈঠককে ঘিরে রসদের অভাব ছিল না। উত্তেজনা, শোরগোল, শেষ পর্যন্ত সন্ধিতেই অবসান হল এদিনের বৈঠক। এক অন্য ধরনের আবহ সৃষ্টি হল এদিনের বৈঠক ঘিরে।

নজিরবিহীন ভাবে এদিন ওয়ার্কিং কমিটির সদস্যদের একাংশ সরব হয়েছিলেন রাহুল গান্ধির বিরুদ্ধে। যদিও শেষ পর্যন্ত ওয়ার্কিং কমিটির আর্জি মেনেই অন্তবর্তী সভাপতি হিসাবে সোনিয়া গান্ধি কাজ চালাতে রাজি হয়েছেন। যতদিন না নতুন সভাপতি নির্বাচন হচ্ছে ততদিন পর্যন্ত সোনিয়া গান্ধি অন্তবর্তী সভাপতি হিসাবে কাজ চালাবে।

সেই সঙ্গে এদিন ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে নতুন সভাপতি নির্বাচনের জন্য প্রক্রিয়া শুরু করা হবে। এদিন বৈঠকের শুরুতেই সভানেত্রীর পদ থেকে সরে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন সোনিয়া। কিন্তু প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং জানিয়ে দেন, সোনিয়ার প্রতি দলের পূর্ণ আস্থা রয়েছে। মনমোহনকে সমর্থন করেন এ কে অ্যান্টনিও। তিনিও জানান, সোনিয়া গান্ধির নেতৃত্বের প্রতি দলের পূর্ণ আস্থা রয়েছে।


তবে এদিনের বৈঠক উত্তপ্ত হয়ে ওঠে রাহুল গান্ধির একটি চিঠিকে ঘিরে। যে সব নেতারা নেতৃত্ব পবির্তন চেয়ে সোনিয়া গান্ধিকে চিঠি লিখেছেন রাহুল তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিলেন এদের অনেকের সঙ্গে বিজেপির যোগসাজস রয়েছে। এদিন এই মন্তব্যের প্রতিবাদে কপিল সিব্ব, গুলাম নবী আজাদ সরব হন।

রীতিমতো চ্যালেঞ্জ করে রাহুলকে গুলাম আজাদ বলেন, বিজেপির সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ প্রমাণিত হলে তিনি রাজনীতি ছেড়ে দেবেন। এই একই রকম অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন কপিল সিব্বল। তিনি টুইটারে লিখেছেন রাহুল গান্ধি বলছেন, আমার সঙ্গে বিজেপি’র আঁতাত রয়েছে। রাজস্থান হাইকোর্টে কংগ্রেসকে রক্ষায় সাফল্য পেয়েছি।

মণিপুরেও বিজেপি সরকারে বিরুদ্ধে লড়াইয়ে দলের সঙ্গেই ছিলাম। তারপরেও বিজেপির সঙ্গে আমার আঁতাত! যদিও তিনি পরে টুইটটি তিনি তুলে নেন। যদিও সোনিয়া গান্ধি জানিয়েছিলেন তিনি দ্বিতীয়বার সভানেত্রীর পদে আগ্রহী ছিলেন না কংগ্রেস নেতাদের অনুরোধেই তিনি অন্তবর্তী সভানেত্রীর দায়িত্ব নিয়েছিলেন।

এদিকে যে ২৩ জন সাংসদের চিঠি নিয়ে এত তোলপাড় তাদের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে সোনিয়া ঘনিষ্ঠ মহলে এই মন্তব্য করেছেন বলে জানা গিয়েছে। এদিকে সোনিয়ার হয়ে আসরে নামেন মনমোহন সিং, অমরিন্দর সিং, অশোক গেহলেট, ভুপেশ বাঘেল, অধীর চৌধুরী, এম রামচন্দ্ৰন, সিদ্দরামাইয়া, ডি কে শিবকুমার।

কার্যত দু ভাগ হয়ে যান কংগ্রেসের শীর্ষ নেতারা। একপক্ষ সোনিয়া-রাহুলের প্রতি আস্থা রাখেন। অন্য পক্ষের দাবি যদি রাহুল পুনরায় সভাপতি হতে না চান তাহলে দ্রুত স্থায়ী সভাপতি খুঁজে নিক দল। অনেকটা সিঁদুরে মেঘ দেখতে থাকে সোনিয়া-রাহুল পক্ষ।

এদিকে ওয়ার্কিং কমিটির এই বৈঠক ডাকার সিদ্ধান্ত নিয়েও কংগ্রেসের মধ্যে মতপার্থক্য তৈরি হয়েছে। কংগ্রেস নেতাদের একাংশ বলছে, দলের গঠনতন্ত্রের পরিপন্থী এই বৈঠক। দলীয় সংবিধানকে সামনে রেখে তারা বলার চেষ্টা করছেন অন্তবর্তী সভাপতির মেয়াদ হতে পারে সর্বাধিক এক বছর পর্যন্ত। সে ক্ষেত্রে সোনিয়ার মেয়াদ পেরিয়ে গিয়েছে।

যদি সভাপতির মৃত্যু হয় কিংবা তিনি ইস্তফা দেন তাহলে নিয়ম অনুযায়ী এআইসিসির সবচেয়ে যিনি সাধারণ পদে রয়েছেন এবং সবচেয়ে প্রবীন সদস্যকে অস্থায়ী ভাবে দায়িত্ব দিয়ে সভাপতি নির্বাচনে যেতে হবে। যদিও এদিন এআইসিসির সাধারণ সম্পাদক কে সি বেনুগোপাল জানান, সোনিয়া গান্ধির নেতৃত্বেই শুরু হবে নতুন সভাপতি নির্বাচনের কাজ। যত দূর জানা যাচ্ছে আগামী ছয় মাসের জন্য অন্তবর্তীকালীন সভাপতির দায়িত্ব পালন করবেন সোনিয়া গান্ধি।

এদিকে কংগ্রেসের এই গৃহযুদ্ধ তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করছে বিজেপি। বিজেপি নেত্রী উমা ভারতীর দাবি, কংগ্রেসের রাজনীতিতে এবার গান্ধি পরিবারে আধিপত্যে সংকট তৈরি হল। আগামী দিনে অস্তিত্বের সংকটে পড়বে গান্ধি পরিবার। শেষের শুরু হল কংগ্রেসের।