সংসদে বিরোধী দলনেতা সোনিয়া | বিজেপির বিরুদ্ধে রণনীতি রাহুলের

সোনিয়া গান্ধি (Photo: IANS)

সােনিয়া গান্ধিকেই সংসদীয় দলনেতার দায়িত্ব দিল কংগ্রেস। শনিবার সেন্ট্রাল হলে সংসদীয় বৈঠকে সােনিয়া গান্ধির নাম চূড়ান্ত করা হল সর্বসম্মতিতে। আরও একবার সােনিয়ার ওপর আস্থা রাখল দল। রাহুল গান্ধি কংগ্রেস সভাপতি পদ থেকে ইস্তফা দিতে চাইলে মনে করা হয়েছিল সংসদীয় দলনেতা হতে পারেন রাহুল। কিন্তু তিনি এখনও দলের সভাপতি পদেই রয়েছেন।

দলের সংসদীয় বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন রাহুল গান্ধি। দলের সাংসদদের সামনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে রাহুল গান্ধি বলেন, ‘প্রত্যেক দিন বিজেপির সঙ্গে লড়াই করতে হবে। আক্রমণাত্মক হতে হবে। দেশের প্রত্যেক নাগরিকদের জন্য কাজ করতে হবে সাংসদদের। ঘৃণা, ভয় ও ক্রোধের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যেতে হবে আমাদের।’ বিজেপিকে কোনওভাবেই রেহাত করা হবে না বলে কড়া নির্দেশ দিলেন কংগ্রেস সভাপতি।

কংগ্রেসের দলীয় সূত্রে খবর, নতুন মুখের সন্ধান মিললেই ওই পদ ছেড়ে দেবেন রাহুল। এবার বিরােধী দলনেতা হওয়ার মতাে নির্দিষ্ট সংখ্যক আসন পায়নি কোনও রাজনৈতিক দল। বিরােধী দলের মর্যাদা পেতে হলে লােকসভা আসনের দশ শতাংশ অর্থাৎ কমপক্ষে ৫৫ টি আসন পেতে হবে বিরােধী দলকে। কিন্তু কংগ্রেস পেয়েছে ৫২ টি আসন। এর আগের লােকসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের দখলে ছিল ৪৪টি আসন। সংসদে বিরােধী দলনেতা ছিলেন কংগ্রেসের মল্লিকার্জন খাড়গে। এবার নির্বাচনে খাড়গে কর্ণাটকের গুলবার্গ কেন্দ্র থেকে পরাজিত হয়েছেন। তাই বিরােধী দলনেতা হিসাবে দায়িত্ব সামলাবেন সােনিয়া গান্ধি। তিনি উত্তরপ্রদেশে কংগ্রেসের গড় রায়বেরিলি থেকে জিতে এসেছেন।


দলকে চাঙ্গা করতে দলীয় বৈঠকে ৫২ জন সাংসদকে লড়াই চালিয়ে যেতে বললেন রাহুল গান্ধি। অর্থাৎ লড়াইটা হবে ৩০৩ এর সঙ্গে ৫২ সংখ্যার মধ্যে। গেরুয়া ঝড়ে মােকাবিলায় কংগ্রেসকে যে ঘুরে দাঁড়াতে হবে তা স্পষ্টই বুঝতে পেরেছেন রাহুল। এদিন দলীয় সদস্যদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন ৫২ জন সাংসদকে নিয়েই প্রতিদিন লড়াই করতে হবে বিজেপির বিরুদ্ধে। কংগ্রেসের এই কজন সাংসদ যথেষ্ট বিজেপির মােকাবিলায়। বিজেপির বিরুদ্ধে প্রতি ইঞ্চিতে লড়াই করবে কংগ্রেসের ৫২ জন সাংসদ। বিজেপিকে প্রতিদিন লাফাতে দৌড় করতে এরাই যথেষ্ট বলে তিনি মনে করেন।

দিল্লিতে কংগ্রেসের সংসদীয় বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন লােকসভায় সদ্য নির্বাচিত ৫২ জন সাংসদ এবং রাজ্যসভার দলের সাংসদরা। এই বৈঠক থেকে কংগ্রেসকে ঘুরে দাঁড়াবার বার্তা দেন কংগ্রেস সভাপতি। কংগ্রেসকে পুনরুজ্জীবিত হতে হবে। কংগ্রেস সাংসদরা তা করে দেখাতে পারবেন বলে বিশ্বাস করেন রাহুল। তাঁর নির্দেশ, ‘প্রত্যেক কংগ্রেস সদস্যদের মনে রাখতে হবে আপনার সংবিধানের মান বাঁচিয়ে রাখার জন্য লড়াই করছেন। ভারতের প্রতিটি মানুষের বিশ্বাস বা গায়ের রঙ যাই হােক না কেন তাঁদের প্রত্যেকের হয়ে লড়াই করতে হবে আপনাদের।’

সপ্তদশ লােকসভা নির্বাচনে বিপুল ভােটে জয়ী হয়েছেন বিজেপি। দ্বিতীয়বারের জন্য প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন নরেন্দ্র মােদি। লােকসভার ৫৪৩ আসনের মধ্যে বিজেপি একাই পেয়েছে ৩০৩ টি আসন। সেখানে কংগ্রেস পেয়েছে মাত্র ৫২টি। নির্বাচনে ভরাডুবির পর দলের সভাপতির পদ থেকে ইস্তফা দিতে চেয়েছিলেন রাহুল। পদ না ছাড়ার জন্য তাঁকে অনুরােধ করেন দলের সব সদস্যরা। সেই পরিস্থিতির মধ্যে কংগ্রেস সভাপতির দলকে চাঙ্গা করার দাওয়াই বেশ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।

লােকসভা নির্বাচনে দলের শােচনীয় হারের পর বিজেপির মােকাবিলায় কড়া নির্দেশের কারণ লােকসভা নির্বাচনে সাংসদদের সংখ্যার বিচারে কংগ্রেস পিছিয়ে থাকলেও বিজেপিকে আক্রমণ করার সময় কংগ্রেস সাংসদদের মানসিকতা যাতে দুর্বল না হয়ে পড়ে তার নির্দেশ দিলেন রাহুল গান্ধি। আরও আক্রমণাত্মক হয়ে কংগ্রেস সাংসদদের বিজেপিকে আক্রমণ করার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি জানিয়েছে, ‘ওরা ঘৃণা এবং দ্বেষ নিয়ে অন্যদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। আমাদের আক্রমণাত্মক হতে হবে। নিজেদের বিচার করে দেখার সময় এসেছে।’

দলের সংসদীয় দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে রাহুল বলেন, ‘যদি পুরনাে মুখেরা এখানে থাকেন তাহলে আমি খুশি হব। আদর্শগতভাবে তাঁরা আমাদের সঙ্গে রয়েছেন।’ গেরুয়া শিবিরের বিশাল সংখ্যক যােদ্ধাদের সঙ্গে মুষ্টিমেয় সাংসদদের নিয়েই আগামী দিনে যুদ্ধে নামতে চলেছেন বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন।