রাষ্ট্রপতিকে চিঠির পর এবার সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ সোনমের স্ত্রী, সন্ত্রাস দমন আইনে গ্রেপ্তার কেন প্রশ্ন

এক সপ্তাহ ধরে জেলবন্দি সোনম ওয়াংচুক। এবার তাঁর জামিনের আর্জি জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হলেন স্ত্রী গীতাঞ্জলি আংমো। সোনম গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকেই স্বামীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না। এমনকী গ্রেপ্তারির নির্দেশের কোনও কপিও দেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন সোনম পত্নী গীতাঞ্জলি।

এই বিষয়গুলি সুপ্রিম কোর্টে দৃষ্টি আকর্ষণ করে আবেদন জানিয়েছেন তিনি। অবিলম্বে সোনমকে জেল থেকে মুক্তি দেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে। স্বামীর মুক্তির দাবি তুলে তাঁর প্রশ্ন, কেন সোনমকে জাতীয় নিরাপত্তা আইন এবং সন্ত্রাস দমন আইনে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

২০১৯ সালে জম্মু-কাশ্মীরে পুনর্বিন্যাস আইন পাশ হয়। এর পর থেকেই লাদাখকে পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদা এবং ষষ্ঠ তফসিলের দাবিতে আন্দোলন শুরু হয় লাদাখে। এই আন্দোলনের অন্যতম প্রধান মুখ হয়ে ওঠেন গবেষক তথা পরিবেশবিদ সোনম ওয়াংচুক।


শান্তিপূর্ণ ভাবে তাঁরা আন্দোলন চালিয়ে যান। গত ২৩ সেপ্টেম্বর হঠাৎ করেই এই আন্দোলন হিংসাত্মক আকার নেয়। জেন জির নেতৃত্বে অশান্ত হয়ে ওঠে লে-লাদাখ। প্রাণ যায় কমপক্ষে চারজনের। আহতের সংখ্যা আশি ছাড়িয়ে যায়। এরপরই জাতীয় সুরক্ষা আইনে ২৬ সেপ্টেম্বর সোনমকে গ্রেপ্তার করে যোধপুরের জেলে নিয়ে যাওয়া হয়। তাঁর মুক্তির দাবিতে দেশব্যাপী মানবাধিকার সংগঠন এবং রাজনৈতিক দলগুলি সরব হয়ে ওঠে।

জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা এনএসএ এবং লাদাখ পুলিশ সোনমের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক রাখার অভিযোগ আনে। এই মর্মে তাঁর বিরুদ্ধে এফআইআরও দায়ের করা হয়। বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনুসের সঙ্গেও সোনমের একটি ছবি সমাজ মাধ্যমে ভাইরাল করা হয়। ইউনুসের সঙ্গেও সোনমের যোগাযোগ ছিল বলে সামাজিক মাধ্যমে প্রচার করা হয়।

সম্প্রতি একজন পাকিস্তানি গুপ্তচরকে গ্রেপ্তার করার কথা জানিয়েছেন লাদাখ পুলিশের প্রধান এসডি সিং।  ওই পাকিস্তানি গুপ্তচর সীমান্তে সোনমের আন্দোলনের ভিডিও প্রচার করে জনমত তৈরি করছিল বলে অভিযোগ আনা হয়। পাকিস্তানের গুপ্তচর লাদাখে গ্রেপ্তার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন গীতাঞ্জলি। একজন বিদেশি কী ভাবে ভারতে প্রবেশ করে এই ধরনের কাজ চালাচ্ছে, তা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে দাখিল হওয়া মামলায় প্রশ্ন তুলেছেন সোনম-পত্নী।

তিনি মামলায় বলেছেন তার স্বামী স্থানীয় মানুষের দাবিতে আন্দোলন করছিলেন। এর সঙ্গে পাকিস্তানের কোনও সম্পর্ক নেই।‌ সুপ্রিম কোর্টে সোনম পত্নী অভিযোগ করেছেন, তাঁর স্বামীকে পরিকল্পনা করে দেশবিরোধী তকমা দেওয়া হচ্ছে। তিনি গোপনে পাকিস্তান যাননি। ভারত সরকারের অনুমতি নিয়ে পরিবেশ সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক আলোচনায় অংশ নিতে গিয়েছিলেন। ‌

এর আগে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী অর্জুন রাম মেঘওয়াল এবং লাদাখের লেফটেন্যান্ট গভর্নর কবীন্দ্র গুপ্তকে চিঠি লিখে তাঁর স্বামীর অবিলম্বে মুক্তির চেয়েছেন গীতাঞ্জলি। চিঠিতে তিনি প্রশ্ন তুলেছিলেন, ‘জনগণের স্বার্থকে সমর্থন করা কি পাপ?’

তবে তাতেও কোনও লাভ হয়নি। যোধপুর জেলে সোনম কেমন রয়েছেন, কিছুই জানা যায়নি। তাই এবার স্বামীর দ্রুত জামিন চেয়ে শীর্ষ আদালতে আবেদন করেছেন গীতাঞ্জলি। কেন ন্যাশনাল সিকিওরিটি অ্যাক্টের আওতায় একজন পরিবেশকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হল,  প্রশ্ন তুলেছেন সোনমপত্নী। সমাজমাধ্যমে তিনি লিখেছেন, ‘সোনম ওয়াংচুকের মুক্তি চেয়ে আমি সুপ্রিম কোর্টে হেবিয়াস কর্পাস আবেদন করেছি। আজ এক সপ্তাহ হয়ে গিয়েছে। তবুও আমার কাছে ওয়াংচুকের স্বাস্থ্য, তাঁর অবস্থা বা আটকের কারণ সম্পর্কে কোনও তথ্য নেই।’ তবে সুপ্রিম কোর্ট কবে এই মামলা উঠবে, তা এখনও জানা যায়নি।

এক্স হ্যান্ডেলে গীতাঞ্জলির পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র। তিনি সমাজ মাধ্যমে লিখেছেন, ‘গীতাঞ্জলি, আমরা সবাই আপনার সঙ্গে আছি।’ সুপ্রিম কোর্টে দ্রুতই সুরাহা মিলবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন তিনি।