সরকারকে চাপে রাখার বিরোধী বৈঠকে গরহাজির ছ’টি দল

বিরােধী জোটের বৈঠকে রাহুল গান্ধি, মনমােহন সিং, সােনিয়া গান্ধি ও শরদ পাওয়ার। (Photo: IANS)

নয়া নাগকিত্ব আইন থেকে এনআরসি, এনপিআর নিয়ে সরব হয়েও যেখানে পিছিয়ে পড়লেন বিরােধী জোটের বড় বড় নেতৃত্ব, সেখানে কেন্দ্রীয় সরকারকে চাপে রাখতে কার্যত সফল দেশের বিভিন্ন প্রান্তের কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, আইআইটি’র পড়ুয়ারা। তরুণ প্রজন্মের কাছে পিছু হটতে বাধ্য হয়েছে কেন্দ্রের শাসক গােষ্ঠি। আর তা দেখেই দুদে রাজনীতিকরা তাঁদের আগামী পদক্ষেপ জরিপ করা শুরু করেন।

ছাত্রছত্রীদের ওপর ওঠা শাসকের অন্যায় অবিচারকে হাতিয়ার করেই এবার পালে হাওয়া টানতে তৈরি হয় বিজেপি বিরােধী দলগুলি। দিল্লিতে একগুচ্ছ এজেন্ডা নিয়ে কংগ্রেসের নেতৃত্বে সােমবার বিরােধী শিবিরের বিশেষ বৈঠক আয়ােজিত হল। কিন্তু সেখানেও বিরােধী ঐক্যে ভাটার টান। দেখা মিলল না মােদি বিরােধী পরিচিত মুখগুলােই।

কথা মতাে গরহাজির ছিলেন বর্তমানে বিজেপিকে কোণঠাসা করায় অগ্রগামী বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। লােকসভা নির্বাচন থেকে শুরু করে নয়া নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে অন্যতম প্রতিবাদি মুখ হয়ে উঠেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু বিরােধী দলগুলির সমন্বয় বৈঠকে তাঁকেই হারালেন কংগ্রেস নেতৃত্ব। এঘড়া ছিলেন না বহুজন সমাজবাদি পার্টি, সমাজবাদি পার্টি, আম আদমি পার্টির কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিরা। তাঁদের ছড়াই শেষ পর্যন্ত দেশের অন্যান্য ২০ টি বিরােধী দলকে সঙ্গে নিয়ে বৈঠকে মিলিত হন কংগ্রেসের সর্বভারতীয় নেতৃত্ব সােনিয়া গান্ধি ও রাহুল গান্ধি ।


গােটা দেশ জুড়েই বিভেদের রাজনীতি করে রাজনৈতিক ফায়দা তােলার চেষ্টা করছেন প্রধানমন্ত্রী বলে সবর কংগ্রেসের সভাপতি রাহুল গান্ধি । বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের মুখােমুখি হয়ে তিনি আরও বলেন, এনআরসি, সিএএ’র মতাে কিছু বিষয়গুলিকে সামনে নিয়ে এসে মূল ইস্যুগুলি থেকে দেশবাসীর মনযােগ বিচ্যুত করার চেষ্টা করছেন মােদি-শাহ। দেশে যখন অর্থনৈতিক অচলাবস্থার পারদ শীর্ষে ছুঁয়েছে। দেশ জুড়ে চুড়ান্ত অরাজকতা। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে ঢুকে ছাত্র-ছাত্রীদের নিগৃহ করছে শাসক গােষ্ঠির দলদাস পুলিশ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের সঙ্গে যখন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বরা সহমর্মিতা জানাচ্ছে। সেই সময় দেশের প্রধানমন্ত্রী কার্যত নিষ্ক্রিয় ভূমিকা দেখে কটাক্ষ করেন রাহুল গান্ধি। দেশের অর্থনীতিতে বিপর্যয়’র কারণ সুস্পষ্ট ভাবে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের জানানাের মতাে যথেষ্ট সাহসের অভাব বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদির বলে মন্তব্য করেন তিনি।

গত ৫০ বছরের মধ্যে বর্তমানে বেকারত্ব সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। যার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তরুণ প্রজন্ম। সেই পড়ুয়াদের কাছেই দেশের মূল সমস্যাগুলি নিয়ে জবাবদিহি করার মতাে যথেষ্ট সাহস নেই প্রধানমন্ত্রীর। আর তাই পড়ুয়াদের ওপরই ক্ষমতার অপপ্রয়ােগ করছেন নরেন্দ্র মােদি। পুলিশ দিয়ে হেনস্থা করা হচ্ছে বিভিন্ন কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের বলে দাবি করেন কংগ্রেসের সর্বভারতীয় নেতৃত্ব রহুল গান্ধি ।

সাংবাদিকদের মাধ্যমেই মােদিকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে রাহুল বলেন, পুলিশ ছাড়া মােদি কোনও একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে পড়ুয়াদের কাছে দেশের বর্তমান অবস্থা বুঝিয়ে বলুন। ছাত্রছাত্রীদের সামনে দাঁড়িয়ে দেশ নিয়ে তাঁর প্রকৃত ভাবনা পরবর্তি প্রজন্মের সামনে জানান। কিন্তু তাঁর সেই সাহস হবে না বলেও কটাক্ষ করেন রাহুল গান্ধি । লুকোচুরির দিন শেষ এবার সামনে আসুন বলে মােদিকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভাপতি রাহুল গান্ধি ।

অন্যদিকে দেশ জুড়ে যে পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে তা আগে কখনও ঘটেনি বলে সাংবাদিকদের মুখােমুখি হয়ে মন্তব্য করেন সােনিয়া। মােদি-শাহের বিরুদ্ধে সােচ্চার হয়ে তিনি আরও বলেন, মানুষকে ভুল বােঝাচ্ছে বর্তমান শাসক দল। গােটা দেশ জুড়ে যে হিংসার বাতাবরণ সৃষ্টি হয়েছে সেই সময় পরিস্থিতি মােকাবিলা না করে উষ্কানিমূলক মন্তব্য করছেন দেশের নীতি নির্ধারকরাই। অমানবিক আচরণ করছেন বিশ্ব্যিালয়ের পড়ুয়াদের ওপর। কেউ বিরােধিতা করলেই তার কণ্ঠরােধ করার চেষ্টা করছেন শাসক দল বিজেপি সরকার।পরস্পরবিরােধী মন্তব্য করছেন মােদি-শাহ। যার ফলে সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত হচ্ছেন বলে সাংবাদিকদের মুখােমুখি হয়ে জানান সােনিয়া গান্ধি।

অসমে এনআরসি’র বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখেছে গােটা দেশ। মােদি-শাহের জমানায় দেশের শাসন ব্যবস্থা থেকে অর্থনৈতিক অবস্থা অস্তাচলে। সাধারণ মানুষের সুরক্ষা সুনিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার বলে ক্ষোভ উগরে দেন বিরােধী দলনেত্রী সােনিয়া গান্ধি। সাম্প্রদায়িক বিভেদ সৃষ্টি করে দেশবাসীর উপর আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করছে সরকার।

বিশ্ববিদ্যালয়ে হিংসার ঘটনা উল্লেখ করে সােনিয়া গান্ধি বলেন, দেশের প্রায় সর্বত্রই ছাত্রছাত্রী ও তরুণ প্রজন্মকে ‘টার্গেট’ করা হচ্ছে। বিশেষত উত্তরপ্রদেশে সাধারণ মানুষ সব থেকে বেশি নিগৃহিত ও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বিজেপি’র ছত্রছায়ায় প্রথমে জামিয়া মিলিয়া এবং তার ঠিক পরেই বিএইচইউ, এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শরু করে এএমইউ এবং সর্বশেষ জেএনইউ’র ছাত্রছাত্রীদের চরম স্নেস্থা দেখে গােটা দেশের মানুষ আশঙ্কিত বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

এনআরসি এবং নয়া নাগরিকত্ব আইন নিয়ে উত্তরপ্রদেশ এবং দিল্লিতে পুলিশ যেভাবে আন্দোলনকারীদের ওপর আঘাত হেনেছে তা স্বৈরতন্ত্রের নামান্তর। দেশের যে মূল ইস্যুগুলি রয়েছে সেগুলি থেকে নজর ঘুরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন মােদি-শাহ জুটি। দেশের অর্থনৈতিক অচলাবস্থায় মানুষের মধ্যে বিভেদের রাজনীতি করে ফায়দা তােলার চেষ্টায় বিজেপি সরকার বলে কটাক্ষ করেন তিনি।

সংশােধিত নাগরিকত্ব আইন ও এনআরসি নিয়ে এই বিশেষ বৈঠকের ডাক দিয়েছিলেন কংগ্রেস নেত্রী সােনিয়া গান্ধি। এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন কংগ্রেসের অন্যতম নেতা তথা প্রক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমােহন সিং। এছাড়া বিরােধী দলগুলির মধ্যে এনসিপি সুপ্রিমমা শরদ পাওয়ার, এলজেডি চিফ শারদ যাদব, বাম সংগঠনের তরফ থেকে হাজির ছিলেন সীতারাম ইয়েচুরি, ডি রাজা ছাড়াও কংগ্রেসের গুলাম নবি আজাদ, আহমেদ প্যাটেল সহ অন্যান্যরা।