আগ্রার হোটেল থেকে গ্রেপ্তার যৌন হেনস্থায় অভিযুক্ত চৈতন্যানন্দ সরস্বতী

উত্তরপ্রদেশের আগ্রার একটি হোটেল থেকে গ্রেপ্তার যৌন হেনস্থায় অভিযুক্ত স্বামী চৈতন্যানন্দ সরস্বতী ওরফে পার্থসারথী। বেশ কিছুদিন গা ঢাকার পর রবিবার মধ্যরাতে আগ্রার একটি হোটেল থেকে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার চৈতন্যানন্দ। দিল্লির বসন্ত কুঞ্জের শ্রী সারদা ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়ান ম্যানেজমেন্টের ডিরেক্টর ছিলেন এই স্বঘোষিত ‘বাবা’।

ইনস্টিটিউটের ১৭ জন ছাত্রী চৈতন্যানন্দের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থা ও অশ্লীল ভাষার প্রয়োগের অভিযোগ এনেছিল। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়েরের পর থেকে  পালিয়ে ছিলেন তিনি। ৬২ বছর বয়সি চৈতন্যানন্দের বিরুদ্ধে ‘লুক আউট’ নোটিসও জারি করে পুলিশ। অবশেষে রবিবার রাত সাড়ে ৩টে নাগাদ পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয় স্বামী চৈতন্যানন্দ।

এফআইআর-এ উল্লেখ, তাঁর নির্দেশে ছাত্রীদের হস্টেলে স্নানঘরের সামনে ক্যামেরা বসানো হয়। নিরাপত্তার স্বার্থে এই ক্যামেরা বসানো হয়েছে বলে দাবি করা হত। ক্যামেরার মাধ্যমে ছাত্রীদের স্নানের দৃশ্য দেখতেন বলে অভিযোগ পড়ুয়াদের। এ ছাড়াও হস্টেলের ঘরে ছাত্রীরা কী কী করছেন, সব কিছুর উপর নজরদারি চালাতেন এই স্বঘোষিত ‘বাবা’।


হোয়াট্‌সঅ্যাপে রাতে মেসেজ পাঠাতেন বলেও অভিযোগ জানিয়েছেন ছাত্রীরা।  প্রেমিকের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে কখনও লিপ্ত হয়েছেন কি না জানতে চাওয়া হয় বলে দাবি এক ছাত্রীর। যদি শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হন, তা হলে গর্ভনিরোধক ব্যবহার করেছিলেন কি না তাও জানতে চান এই ‘বাবা’।গভীর রাতে ছাত্রীদের মেসেজ পাঠিয়ে কুপ্রস্তাব দিতেন বলে জানিয়েছেন ছাত্রীরা।

‘বেবি, আই লভ ইউ’ ‘আই অ্যাডোর ইউ’ ‘সুইটি আই লাইক ইউ’ এই ধরনের মেসেজ পাঠানো হত বলে দাবি ছাত্রীদের। এ ছাড়াও তাঁর নিজের ঘরে ডেকে পাঠিয়ে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হওয়ার জন্য জোরজবরদস্তি করা হত বলে অভিযোগ। ছাত্রীদের অভিযোগ, একটু বেশি রাত হলেই তাঁর ঘরে ডাক পড়ত। শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হত। বিদেশ এবং দেশের বিভিন্ন জায়গায় ভ্রমণের টোপ দেওয়া হত। কেউ রাজি না হলে তাঁকে জোর করে নিয়ে যাওয়া হত। এমনকী প্রস্তাব না-মানলে ফেল করিয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হত বলেও অভিযোগ ছাত্রীদের।

তদন্তে নেমে চৈতন্যানন্দের বেশ কয়েকটি ভুয়ো ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের হদিস পেয়েছে দিল্লি পুলিশ। শুধু তাই নয়, তাঁর বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের হওয়ার পরেও ওই অ্যাকাউন্ট থেকে  ৫৫ লক্ষ টাকা তুলেছেন বলে জানতে পেরেছেন তদন্তকারীরা। চৈতন্যানন্দের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হলে ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচালক সংস্থা শ্রী শ্রীনগেরি মঠ তাঁকে ডিরেক্টরের পদ থেকে সরিয়ে দেয়।

আর্থিক অনিয়মের অভিযোগে স্বামীজির বিরুদ্ধে দিল্লির একটি আদালতে মামলাও করেন মঠ কর্তৃপক্ষ। শুক্রবার এই মামলায় চৈতন্যানন্দের আগাম জামিনের আর্জি খারিজ করে দেয় আদালত। স্বামী চৈতন্যানন্দ ওরফে পার্থসারথী ওড়িশার বাসিন্দা। গত ১৬ বছর ধরে একের পর এক মহিলার শ্লীলতাহানি করার অভিযোগ তাঁর বিরুদ্ধে। এক অভিযোগকারিণীর দাবি, অতীতে কেউ কেউ চৈতন্যানন্দের বিরুদ্ধে আশ্রম তথা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অভিযোগ জানিয়েছিলেন। পুলিশেরও দ্বারস্থও হয়েছিলেন। কিন্তু তাতে কোনও লাভ হয়নি।